Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
দেড় কোটির ক্ষতি পাট-সব্জিতে

ঝড়ের তাণ্ডব ময়নাগুড়িতে

বজ্র বিদ্যুৎ সহ প্রবল ঝড় ও শিলাবৃষ্টির তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হল ময়নাগুড়ির ৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা। রবিবার মাঝ রাতের ঘটনার প্রাথমিক হিসেবে শুধুমাত্র পাট ও সবজির ক্ষতির পরিমাণ দেড় কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। অন্তত দেড় হাজার টিনের ঘর মাটিতে মিশেছে। আরও অন্তত এক হাজার বাড়ির চাল উড়েছে। ঝড়ের গতি এতট ছিল যে দোতলা ঘরের চাল উড়িয়ে ফেলেছে।

মাটিতে মিশেছে পাটে খেত। সোমবার ময়নাগুড়িতে তোলা নিজস্ব চিত্র।

মাটিতে মিশেছে পাটে খেত। সোমবার ময়নাগুড়িতে তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ময়নাগুড়ি শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৪ ০১:৪৩
Share: Save:

বজ্র বিদ্যুৎ সহ প্রবল ঝড় ও শিলাবৃষ্টির তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হল ময়নাগুড়ির ৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা। রবিবার মাঝ রাতের ঘটনার প্রাথমিক হিসেবে শুধুমাত্র পাট ও সবজির ক্ষতির পরিমাণ দেড় কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। অন্তত দেড় হাজার টিনের ঘর মাটিতে মিশেছে। আরও অন্তত এক হাজার বাড়ির চাল উড়েছে। ঝড়ের গতি এতট ছিল যে দোতলা ঘরের চাল উড়িয়ে ফেলেছে। বিঘার পর বিঘা সুপারি ও বাঁশ বাগান বট-অশ্বত্থ সহ পুরনো প্রকাণ্ড গাছ উপড়ে পড়েছে কংক্রিটের খুঁটি উপড়ে বিপর্যস্ত হয়েছে বিদ্যুৎ পরিষেবা। অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক। বাসিন্দারা গাছ কেটে সড়ক ফাঁকা করার পরে সোমবার বেলা ১২টা নাগাদ যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। ময়নাগুড়ির বিডিও সংহিতা তলাপাত্র বলেন, “পরিস্থিতি দেখে মনে হয়েছে রবিবার রাতের ঝড় অনেকটা টর্নেডোর মতো বিধ্বংসী ছিল। যেখান দিয়ে গিয়েছে অস্তিত্ব কিছু রাখেনি। প্রচুর ঘরবাড়ি ও ফসল নষ্ট হয়েছে। এলাকায় ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে।”

কৃষি দফতর কর্তারা এ দিন দুপুর থেকে বিধ্বস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন। ময়নাগুড়ি ব্লক কৃষি আধিকারিক সঞ্জীব দাস বলেন, “বিঘার পর বিঘা জমিতে পাট নেই। পটল, ঝিঙ্গে, শসা, কুমড়ো, উচ্ছের মতো মাচার সমস্ত সবজি নষ্ট হয়েছে। প্রাথমিক ক্ষতির পরিমাণ দেড় কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। আরও খবর আসছে। জানি না শেষ পর্যন্ত হিসেব কোথায় দাঁড়াবে!” খবর পেয়ে সকালে এলাকায় যান স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুভাষ বসু, তৃণমূল নেতা অনন্তদেব অধিকারী। সুভাষবাবুর আশঙ্কা, সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ৫ কোটি টাকার কাছাকাছি দাঁড়াবে।

এ দিন দুপুর পর্যন্ত গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত সমস্ত এলাকায় পৌঁছতে পারেননি। বেলা ১২টা পর্যন্ত কোথাও ত্রাণ সামগ্রী যায়নি। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাত ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত ঝড়ের তাণ্ডব চলে। চূড়াভাণ্ডার, আমগুড়ি এবং সাপটিবাড়ি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তত ২২টি বুথ এলাকা জুড়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। চূড়াভাণ্ডারের রথেরহাট, ভাঙারহাট, হুসলুরডাঙা, চরচূড়া ভাণ্ডার, আমগুড়ির ধওলাগুড়ি এবং সাপটিবাড়ির জবরামালি, কালিরহাট, সীতাপাড়া, রহমতুল্লা গ্রাম বিপর্যস্ত। চূড়াভাণ্ডার গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান কাকলি বৈদ্য মণ্ডল জানান, ১৪টি সংসদ এলাকা মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, দেড় হাজার ঘর পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে। অন্তত পাঁচশো পরিবার খোলা আকাশের নীচে পড়ে আছে। এ দিকে আমগুড়ির ধওলাগুড়ি গ্রামের অন্তত দুশো পরিবার মাথা গোঁজার ঠাই হারিয়ে দিশেহারা হয়েছেন।

ক্ষতিগ্রস্থ বাসিন্দারা জানান, রাত ১২টা নাগাদ প্রথমে শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। এর পরেই চলে বজ্রবিদ্যুৎ সহ ঝড়ের তাণ্ডব। প্রকাণ্ড বট গাছ ভেঙে পড়ে। ভাঙারহাট প্রাথমিক স্কুলের একাংশ নেলাপাড়া জুড়ে চাল উড়ে বাঁশ বাগান টপকে পাট খেতে পড়ে। ততক্ষণে শিলাবৃষ্টিতে খেতের কচি পাট চারা নষ্ট হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা রূপেশ রায় বলেন, “ঘুমিয়ে ছিলাম। আচমকা বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। গায়ে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে দেখে উপরে তাকাই দেখি ঘরের চাল নেই। এর পর থেকে ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে একখানে ঠায় বসে রাত কাটে।”

একই দশা তপন রায়ের। যেন মত্ত হাতির তাণ্ডব চলেছে তাঁর বাড়িতে। বাঁশ, সুপারি, আম, কাঁঠাল বাগানের সমস্ত গাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। মাস্টারেরবাড়ি গ্রামে হিরণবালা রায়ের দোতলা কাঠের বাড়ির চাল উড়ে আধ কিলোমিটার দূরে পড়েছে। সকালে এমন বিধ্বস্ত চেহারা দেখে নিজের গ্রামকে অচেনা ঠেকেছে অখিল রায়, অনিল রায়দের। ঝড় শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে গাছ উপড়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক। রাস্তায় দাঁড়িয়ে যায় কয়েক হাজার ট্রাক। গ্রামের ভিতরের রাস্তারও একই দশা। স্থানীয় বাসিন্দারা গাছ কেটে সরানোর পড়ে বেলা ১২টা নাগাদ যাতায়াত স্বাভাবিক হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mainaguri hailstorm rain jute
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE