Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

স্বনির্ভরতার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন জ্যোত্‌স্না

কারও স্বামী শ্রমিকের কাজ করেন। কারও স্বামী আবার গাড়ি চালান। তা দিয়ে সংসার চালাতে হয় টেনেটুনে। ফলে নিজেরাও উপার্জনের স্বপ্ন দেখেছিলেন মালদহের ইংরেজবাজার ব্লকের ৫ জন মহিলা। সকলে মিলে জোট বেঁধে গোষ্ঠী গড়ে খুলেছেন খাবারের দোকান। সংসার সামলে ওই দোকান চালিয়ে দিনান্তে ঘরে নিয়ে যাচ্ছেন গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরে খুশি ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রামের ওই মহিলারা। ওই মহিলাদের উদ্যোগ দেখে পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা প্রশাসনও।

জেলাশাসকের ক্যান্টিনে আনন্দধারা গ্রুপের স্বনির্ভর মহিলারা। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

জেলাশাসকের ক্যান্টিনে আনন্দধারা গ্রুপের স্বনির্ভর মহিলারা। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

অভিজিত্‌ সাহা
মালদহ শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৫ ০২:০৮
Share: Save:

কারও স্বামী শ্রমিকের কাজ করেন। কারও স্বামী আবার গাড়ি চালান। তা দিয়ে সংসার চালাতে হয় টেনেটুনে। ফলে নিজেরাও উপার্জনের স্বপ্ন দেখেছিলেন মালদহের ইংরেজবাজার ব্লকের ৫ জন মহিলা। সকলে মিলে জোট বেঁধে গোষ্ঠী গড়ে খুলেছেন খাবারের দোকান। সংসার সামলে ওই দোকান চালিয়ে দিনান্তে ঘরে নিয়ে যাচ্ছেন গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরে খুশি ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রামের ওই মহিলারা। ওই মহিলাদের উদ্যোগ দেখে পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা প্রশাসনও।

সাত বছর আগে ইংরেজবাজার ব্লকের যদুপুরের আমবেলা বিবি, কাজি গ্রামের ডলি বিবি, নরহাট্টার রাজেশ্বরী মন্ডল ও বাগবাড়ির জ্যোত্‌স্না গোস্বামী এবং বাহান্ন বিঘার মমতা সিংহ মিলে ‘আনন্দধারা’ নামে একটি দল গঠন করেছিলেন। তবে সকলেই এক গ্রামের বাসিন্দা নন। বিভিন্ন গ্রাম থেকে নানা সূত্রে পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হয়ে তাঁরা গোষ্ঠী গড়েছিলেন।

দলের নেত্রী বাগবাড়ির জ্যোত্‌স্না মণ্ডল। তাঁর স্বামী বিজন পেশায় গাড়ি চালক। দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে তাঁদের সংসার। ফলে বিজনবাবুর যা আয়, তাতে সংসার চালিয়ে ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার খরচ জোগাড় করা মুশকিলের ব্যাপার। তাই তিনি ভেবেছিলেন একটি ব্যবসা করবেন। সে জন্য অর্থের প্রয়োজন। তাই তাঁর মতো কয়েকজন মহিলাকে পেলে ব্যবসা করতে অনেকটা সুবিধে হবে ভেবেছিলেন।

সেই সময় প্রশাসন একটি দল করে মহিলাদের স্বনির্ভর করতে উদ্যোগী হয়। ইংরেজবাজার ব্লক অফিসে ৫ জন মহিলার পরিচয় হয়। পাঁচ জন মিলে গড়ে তোলেন একটি দল। প্রথম দিকে তাঁরা বাড়িতেই পাঁপড় তৈরি করতেন। প্রশাসনের কাছ থেকে ঋণও নিয়েছিলেন। সেই পাঁপড় বাজারে বিক্রি করতেন তাঁরা। আলুর পাঁপড়, সাবুর পাঁপড় এবং বিভিন্ন ডালের বড়িও তৈরি করে বাজারের বিক্রি করতেন তাঁরা। জেলা প্রশাসন ওই দলের কাজ দেখে দোকান করে দিতে উদ্যোগী হয়। গ্রামোন্নয়ন ভবনের নীচে একটি ঘরের মধ্যে বর্তমানে চলছে তাদের দোকান। এক বছর আগে দোকানটি চালু হয়েছে। মুড়ি, ঘুগনি, সঙ্গে রয়েছে আলুর চপ এবং বেগুনি। বাজারের চপ, বেগুনি গড়ে ৫ টাকা করে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দোকানে তা ৩ টাকায় মেলে।

শুধু মুড়ি, চপ, বেগুনির মতো তেলেভাজা নয়, লুচি-সবজির চাহিদাও কম নয়। বরাত পেলে ডাল-ভাত তৈরি করেন। তবে তেলেভাজার উপরে বেশি জোর দেন তাঁরা। সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত চলে দোকানটি। দৈনিক আয় ইদানীং ভালই হয়। কারণ, ওই চত্বরে রয়েছে প্রশাসনিক ভবন। জেলা আদালত, পুলিশ সুপারের অফিস, ইংরেজবাজার পুরসভা, জেলা পরিষদের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান।

সরকারি দফতরের কর্মীরা সকলেই ওই গোষ্ঠীর উদ্যোগের প্রশংসা করে থাকেন। দোকানের বিক্রি বাড়ছে বলে গ্রামোন্নয়ন ভবনের একটি পাঁচিল ভেঙে দোকান ঘর তৈরি করা হচ্ছে। তা হলে দোকানটি প্রশাসনিক চত্বরের বাইরের খদ্দেরদেরও টানতে পারবে। জ্যোত্‌স্না দেবী বলেন, “নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরে খুবই ভাল লাগছে। পাঁচ দিন দোকান করে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ থেকে শুরু করে বাড়ির অন্য কাজেও সুবিধে হচ্ছে। এ ছাড়া প্রশাসন আমাদের সরকারি মেলাতেও আমাদের খাবারের দোকানের স্টল বসাতে দেয়। তাদের সাহায্য ছাড়া এগোনো সম্ভব হতো না।”

আমবেলা বিবি, মমতা সিংহরা এখন গাঁয়ের বাসিন্দাদের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন। তাঁদের দেখে অন্যরাও উত্‌সাহিত হচ্ছেন। আমবেলা, মমতারা বললেন, “একা কী ভাবে কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। গোষ্ঠী গড়ার পরে জীবনটাই যেন বদলে গিয়েছে। টাকাপয়সা হাতে থাকছে। বাড়িতে সাহায্য করতে পারছি। আসবাবপত্র কেনা থেকে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জোটাতে পারছি। গাঁয়ের আগ্রহী মহিলাদেরও বলছি স্বনির্ভর হওয়ার ইচ্ছেটাই বড় কথা!”

ওই ৫ মহিলার উপলব্ধি, “ঘর-সংসার সামলেও নিজের পায়ে দাঁড়ানো যায়। তাতে সংসার আরও সুখের হয়। সংসারে মেয়েদের মর্যাদাও বাড়ে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE