Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
আমাদের চিঠি

ফুটপাথে হাঁটছি না পুজোর মণ্ডপে, বুঝতেই পারি না

শিলিগুড়ি শহর হল ‘আমার শহর’। শিলিগুড়িতেই আমার জন্ম। ছোট থেকে শহরেই বেড়ে উঠেছি। নানা সুখ-দুঃখের স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। আনন্দের স্মৃতিও কম নেই। ভূমিকম্পও দেখেছি। ছোটবেলা থেকে অনেক পথ পেরিয়ে মধ্য পঞ্চাশে পৌঁছে শহরকে অনেক সময়ে চিনতে পারি না। ‘আমার শহর’ বলে যে এলাকাকে চিনতাম এ যেন সে নয়! অজান্তেই শহরের উপর থেকে আমাদের অধিকার যেন হারিয়ে যেতে বসেছে।

বিধান মার্কেট দিয়ে চলাফেরা করাই দায়। ছবি: দিব্যেন্দু দাস।

বিধান মার্কেট দিয়ে চলাফেরা করাই দায়। ছবি: দিব্যেন্দু দাস।

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৫ ০২:৫৪
Share: Save:

শিলিগুড়ি শহর হল ‘আমার শহর’। শিলিগুড়িতেই আমার জন্ম। ছোট থেকে শহরেই বেড়ে উঠেছি। নানা সুখ-দুঃখের স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। আনন্দের স্মৃতিও কম নেই। ভূমিকম্পও দেখেছি। ছোটবেলা থেকে অনেক পথ পেরিয়ে মধ্য পঞ্চাশে পৌঁছে শহরকে অনেক সময়ে চিনতে পারি না। ‘আমার শহর’ বলে যে এলাকাকে চিনতাম এ যেন সে নয়! অজান্তেই শহরের উপর থেকে আমাদের অধিকার যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। হারাতে বসেছি কত কিছুই। ফুটপাত দিয়ে চলাফেরার অভ্যেস হারিয়ে ফেলতে বসেছি।

বিধান মার্কেটের রাস্তায় সকাল থেকে রাত, সব সময় ধীরে ধীরে চলতে হয়। যেমন ভিড়ে ঠাসা পুজো মন্ডপে পা টিপে টিপে চলতে হয় তেমন আর কি! কারণ, রাস্তার মধ্যে চলমান হকার যাতায়াত করে থাকে। রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে বিক্রি করছে জিনিসপত্র। কারও কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। হকারদের বিক্রি হলেই হল! রাস্তার উপরে আইসক্রিম, রান্নার অ্যাপ্রন, ছাতু, চিরুনি, তেলেভাজা, আখের রস, আরও কত কি? যাঁরা প্রতিবাদ করবেন, তাঁরাই তো খদ্দের! এখন বিধান মার্কেটের রাস্তা জুড়ে এই মোবাইল হকারদের বাড়বাড়ন্ত। এর উপরে রয়েছে রিকশা। সমস্ত রাস্তা জুড়ে চলতে থাকে রিকশাগুলো। লাগাতার রিকশার হর্নে কান ঝালাপালা হয়ে যায়। বিধান মার্কেটের আরেকটা বৈশিষ্ট্য হল, প্রায় সব দোকানদার নিজেদের দোকানের নোংরা রাস্তার মাঝখানে এনে জনো করে রাখেন। বড় বড় ঢাউস জুতোর বাক্স প্রায়ই রাস্তার মাঝখানে পড়ে থাকে। রাস্তা পার হতে অসুবিধেয় পড়তে হয় পথচারীদের।

শেঠ শ্রীলাল মার্কেটের রাস্তা জুড়ে মোমো, ফুচকা, চুড়ি, রুমাল বিক্রি হচ্ছে। প্রায় সব সময় সেখানে ভিড়। পর্যটকেরা ওই এলাকায় ভিড় করেন সম্বত্‌সর। ফলে, সেখানে বিক্রিও বেশি। এ সব দেখলে মনে হয়, আমার শহর শিলিগুড়িতে ট্রাফিক আইন বলে যেন কিছু নেই। বিধান রোডের বিধান মেডিক্যালের মোড়ে সব সময় অন্তত দুটো সিটি অটো দাঁড়িয়ে থাকে। সে জন্য যানজট হয়। বিধান রোড থেকে ঋষি অরবিন্দ রোডে ঢুকলে দেখা যায় দুধারে সারি সারি মোটরবাইক, সাইকেল, রিকশা, ভ্যান, গাড়িও দাঁন করানো রয়েছে। সেখান দিয়ে চলাফেরা করা দায়। যাঁরা ওই রাস্তায় বাইক, ভ্যান রিকশা রাখেন, তাঁদের দায়িত্বজ্ঞান, ট্রাফিক আইন সম্পর্কে কোনও ধারনা আছে কি না সেটা ভাবার বিষয়। ‘আমি যেভাবে খুশি, যেখানে খুশি বাইক রাখার জন্য অন্যের অসুবিধে হতে পারে’ এই ভাবনা সকলের মধ্যে থাকা দরকার।

ট্রাফিক পুলিশের আরও সক্রিয় হওয়া জরুরি। অতীতে দেখতাম হেলমেট না পরলেই জরিমানা দিতে হতো। আমরাও দিয়েছি। সারা শহরে অফিসার-পুলিশকর্মীরা ঘুরে বেড়াতেন। কোথাও বেআইনি পার্কিং হলে গাড়ি তুলে নিয়ে যাওয়া হতো। এখন পুলিশ কমিশনারেট হয়েছে। খাকি ছেড়ে নীল-সাদা রঙের উর্দি হয়েছে। স্বয়ং পুলিশ কমিশনার রয়েছেন। অথচ পুলিশের সক্রিয়তা আগের মতো নেই কেন সেটাই ভেবে আশ্চর্য লাগে। না হলে হিলকার্ট রোডে কেন বিধি ভেঙে একমুখী রাস্তায় সাইকেল উল্টোদিকে রোজই ছোটে। পুলিশকে তোয়াক্কা করে না। সাইকেল তেকেও তো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পুলিশের উদাসীনতা দেখে রিকশাওয়ালারাও একমুখী রাস্তায় উল্টোদিকে চলছেন। ডিভাইডার যে অংশে ফাঁকা রয়েছে, সেখানে দিয়ে সাইকেল পারাপার হয় কী করে? ট্রাফিক পুলিশকে আরও সক্রিয় হতে হবে। সাধারণ মানুষকেও প্রতিবাদ করতে হবে। সচেতনতাও বাড়বে।

রিকশার সমস্যার সমাধানও দরকার। চালকদের বেশির ভাগই বাইরের। যা খুশি ভাড়া চেয়ে বসে। বয়স্কদের, মহিলাদের ভাড়া নিয়ে কটূ কথা শোনাতেও ছাড়ে না একশ্রেণির রিকশাচালক। শহরের নানা রাজনৈতিক দল যে ভাবে এসজেডিএ-এর দুর্নীতির অভিযোগ, থুতু-কাণ্ড, নানা আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে যে প্রতিবাদ করে থাকেন, তার সিকিভাগও রিকশা সমস্যা মেটানোর জন্য করলে কাজের কাজ হতো। ভোট আবারও আসছে। প্রচুর প্রতিশ্রুতি শুনব। পরে সমস্যা বাড়বে বই কমবে না। শহরটাকে নিয়ে রাজনীতির অন্ত নেই। এমন চলতে থাকলে শিলিগুড়ি একদিন ‘স্রেফ রাজনীতির শহর’ হিসেবে চিহ্নিত না হয়ে যায়!

মনতোষ দত্ত, অতুলপ্রসাদ সরণি, হাকিমপাড়া, শিলিগুড়ি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

letters siliguri amar shohor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE