Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

টাকা পড়ে রয়েছে, এখনও ক্ষতিপূরণ পাননি পান চাষিরা

প্রচণ্ড শীতের জন্য বিগত বছরে লোকসানের মুখ দেখতে হয়েছিল পান চাষিদের। লোকসান হলেও তারা সরকারি কোনও ক্ষতিপূরণ পাননি। অথচ ক্ষতির মুখে পড়া পান চাষিদের জন্য বরাদ্দ টাকা কয়েক বছর ধরে পড়ে রয়েছে মালদহ জেলা পরিষদে। একই ভাবে সবজি চাষিদের বীজ কিনে দেওয়ার টাকাও পাঁচ বছর ধরে জেলা পরিষদের কৃষি বিভাগে পড়ে রয়েছে বলে অভিযোগ। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই ক্ষোভ দানা বেঁধেছে চাষিদের মধ্যে। বিরোধী দলগুলি কংগ্রেস পরিচালিত জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন।

অভিজিৎ সাহা
মালদহ শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৪১
Share: Save:

প্রচণ্ড শীতের জন্য বিগত বছরে লোকসানের মুখ দেখতে হয়েছিল পান চাষিদের। লোকসান হলেও তারা সরকারি কোনও ক্ষতিপূরণ পাননি। অথচ ক্ষতির মুখে পড়া পান চাষিদের জন্য বরাদ্দ টাকা কয়েক বছর ধরে পড়ে রয়েছে মালদহ জেলা পরিষদে। একই ভাবে সবজি চাষিদের বীজ কিনে দেওয়ার টাকাও পাঁচ বছর ধরে জেলা পরিষদের কৃষি বিভাগে পড়ে রয়েছে বলে অভিযোগ। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই ক্ষোভ দানা বেঁধেছে চাষিদের মধ্যে। বিরোধী দলগুলি কংগ্রেস পরিচালিত জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন।

এই বিষয়ে মালদহ জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা সিপিএমের শেখ খলিল বলেন, “শীতের মরশুমে জেলার পান চাষিরা প্রায় ক্ষতিগ্রস্থ হন। ক্ষতিপূরণের জন্য সরকারের বিভিন্ন দফতরে ঘুরে বেড়ান। তাঁদের প্রাপ্য টাকা পড়ে রয়েছে। শুধু পান চাষিদেরই টাকা নয় চাষিদের বীজের টাকাও পড়ে রয়েছে। তবু পরিষদ কর্তৃপক্ষের কোনও হুঁশ নেই।” তাঁর অভিযোগ, কংগ্রেস পরিচালিত জেলা জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ নিজেদের খেয়াল খুশি মতো জেলা পরিষদ চালাচ্ছেন। জেলা পরিষদের তৃণমূলের সদস্য গৌর চন্দ্র মন্ডল বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেস ক্ষমতায় রয়েছে। কিন্তু, উন্নয়নের টাকা বছরের বছর পড়ে থাকলেও সেই টাকা খরচ করতে পারছেন না তারা।”

যদিও দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। জেলা পরিষদের কৃষি ও সেচের স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ কংগ্রেসের চন্দনা সরকার বলেন, “এই প্রকল্পের টাকা বিগত বোর্ডের আমলে বীজ কেনার ব্যপারে কয়েকবার টেন্ডার ডাকা হয়েছিল। টেন্ডারে সে ভাবে কেউ অংশগ্রহণ না করায় সেই টাকা খরচ করা যায়নি। দ্রুত ফের টেন্ডার ডাকা হবে। আর যেই সময় পান চাষিদের জন্য টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল সেই সময়কার চাষিদের পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করে মেটানোর চেষ্টা করছি।” জেলা পরিষদের অতিরিক্ত কার্যনির্বাহী আধিকারীক অমলকান্তি রায় বলেন, “ফের বীজ কেনার ব্যাপারে টেন্ডার ডাকা হবে। এ ছাড়া পান চাষিদের টাকা তাদের উন্নয়নে কি ভাবে খরচ করা যায় তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে।”

জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালের মার্চ মাসে কৃষি ও সেচ দফতরের তরফে জেলার ক্ষতিগ্রস্থ পান চাষিদের জন্য পরিষদের তরফ থেকে আর্থিক অনুদান দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্থ পান চাষিদের জন্য ৩লক্ষ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। সবজি চাষিদের বীজ কিনে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। সে জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। জেলার প্রতিটি ব্লকে বেগুন ও লঙ্কা বীজ কিনে চাষিদের মধ্যে বিলি করার উদ্যোগী হয়েছিল তৎকালীন কংগ্রেস পরিচালিত বোর্ড।

পরিষদ সূত্রের খবর, চাঁচল-২ এবং পুরাতন মালদহের মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে ব্যাপক পান চাষ হয়। চলতি মরশুমে পান চাষিদের তেমন ক্ষতি হয়নি। গত বছরের ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে পড়তে হয়েছিল তাঁদের। উদ্যান পালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রচন্ড শীত ও কুয়াশার জন্য পান পাতা হলুদ হয়ে পচে যায়। এ ছাড়া পাতা গুলি ঝরে পড়ে। তাই পচন্ড শীতে চাষিদের খুবই সমস্যা হয়। জেলার সব ব্লকেই প্রচুর সবজি চাষি রয়েছেন। তাঁরা অনেক সময় ঋণ নিয়ে চাষবাস করেন। ওই প্রকল্প গুলি সুবিধা পেলে খুবই উপকৃত হন বলে জানিয়েছেন চাষিরা। মুচিয়ার পান চাষি পান্ডব দাস, জীবন দাস, ভরত দাস প্রায় একই সুরে বলেন, “এবার শীত ও কুয়াশা তেমন না থাকায় ক্ষতির মুখ দেখতে হয়নি। তবে গত বছর গুলিতে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমাদের সমস্যার কথা প্রশাসনের কর্তাদের জানা রয়েছে। তবুও হায্য পাননি। শুনেছি, আমাদের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা পড়ে রয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

abhijit saha malda
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE