এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে পড়ুয়া শিক্ষকদের কান ধরে বেঞ্চে দাঁড় করানোর নির্দেশের অভিযোগকে ঘিরে জলপাইগুড়ি আনন্দচন্দ্র শিক্ষক শিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
ওই বিএড কলেজের পড়ুয়ারা শুক্রবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বয়কট আন্দোলনে নেমেছেন। তাঁদের অভিযোগ, শুধু অভব্য আচরণ নয় ওই শিক্ষিকা পড়ুয়াদের পোশাক ও ব্যাগ ব্যবহারের উপরেও মৌখিক ফতোয়া জারি করে তাঁদের উপরে মানসিক চাপ সৃষ্টি করছেন।
মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ শুভেন্দুভূষণ মোদক এবং টিচার্স কাউন্সিলের সম্পাদক সঞ্জীব রায় পড়ুয়াদের অভিযোগ অস্বীকার করেননি। তাঁরা আলোচনায় বসে সমস্যা সমাধানের জন্য উদ্যোগী হয়েছেন। অধ্যক্ষ বলেন, “পড়ুয়া শিক্ষকরা এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অভব্য আচরণের অভিযোগ জানিয়েছেন, তিনি ক্লাসে ঢুকে কান ধরে বেঞ্চে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন। শুনে অবাক হয়েছি। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
টিচার্স কাউন্সিলের সম্পাদক বলেন, “এর আগেও ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ উঠেছে। আলোচনায় বসে মিটমাট করা হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে ফের টিচার্স কাউন্সিলের সভা ডেকে অভিযুক্ত শিক্ষিকার বক্তব্য জানতে চাওয়া হবে।” যদিও মহাবিদ্যালয় পরিচালন সমিতির সভাপতি সুশীল দেব ঘটনাটির বিষয়ে জানেন না। তিনি বলেন, “কলেজের অধ্যক্ষ অথবা ছাত্র, কোনও তরফেই আমাকে কিছু জানানো হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।”
অভিযুক্ত শিক্ষিকা লিলি সরকার অবশ্য পড়ুয়াদের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ এবং টিচার্স কাউন্সিলের কর্তারা পড়ুয়াদের উস্কে দিয়ে তাঁকে হেনস্থার ষড়যন্ত্র করছেন। তিনি বলেন, “আমি পড়ুয়াদের কান ধরে বেঞ্চে দাঁড় হতে বলব কেন! এসব মিথ্যে অপবাদ। মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ এবং টিচার্স কাউন্সিলের কর্তারা এ সব করাচ্ছেন।”
যদিও অধ্যক্ষ দাবি করেন, “উনি এখন তো এসব বলবেন। ক্লাসে কি আমি ছিলাম!”
মহাবিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার। ওই দিন দুপুর নাগাদ মহাবিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন ১০০ জন পড়ুয়া। তাঁদের মধ্যে ৫০ জন বিভিন্ন হাই স্কুলের শিক্ষক ১ জুলাই থেকে ক্লাস শুরু হয়েছে। মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সন্তু মণ্ডল অভিযোগ করেন, “বৃহস্পতিবার প্রথম ক্লাস শেষ হওয়ার পরে শ্রেণি কক্ষে দাঁড়িয়ে কয়েকজন পড়ুয়া নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল। ওই সময় আসেন বাংলা শিক্ষিকা লিলি সরকার। তিনি শ্রেণি কক্ষে ঢুকে পড়ুয়াদের উদ্দেশ্য করে বলতে শুরু করেন অশিক্ষিত, বেয়াদপের দল। এর পরে পড়ুয়াদের কান ধরে বেঞ্চে দাঁড়াতে নির্দেশ দেন।” ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে তাঁরা অধ্যক্ষকে স্মারকলিপি দেন বলে জানান সন্তু।
ছাত্র পুলকচাঁদ দাস বলেন, “আমি প্রতিবাদ করে ম্যাডামের কাছে জানতে চাই কেন এসব বলছেন! তিনি কোন কথা না শুনে আমাকে ক্লাস থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন।” শুক্রবার ক্লাস বয়কট করে মহাবিদ্যালয়ের গেট আটকে হাতে লেখা পোস্টার নিয়ে বিক্ষোভ দেখানোর সময় পড়ুয়ারা জানান, শিক্ষিকা ভুল স্বীকার না করা পর্যন্ত তাঁদের কেউ ক্লাসে যাবেন না। ছাত্রী অশ্বিনী সিদ্ধান্ত বলেন, “যাদের কান ধরে বেঞ্চে দাঁড়াতে বলা হয়েছে তাঁরা প্রত্যেকে স্কুলের শিক্ষক। কী শিক্ষা নিয়ে ফিরে যাব! কোন ধরনের ব্যাগ ব্যবহার করব, অলঙ্কার পরব সেটাও ম্যাডাম ঠিক করে দিচ্ছেন!” যদিও শিক্ষিকা লিলিদেবী বলেন, “মহাবিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের নির্দিষ্ট পোশাক পরার রীতি রয়েছে। আমি শুধুমাত্র সেটাই বলেছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy