Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ফাঁড়িতে ওসি-র কুপ্রস্তাব, চটি-পেটা মহিলার

অভিযুক্ত এক বিজেপি কর্মীকে না পেয়ে বাড়ি থেকে তার এক আত্মীয়াকেই তুলে এনেছিল পুলিশ। অভিযোগ, গ্রামের লাগোয়া জঙ্গলে গাছে বেঁধে মহিলার গোপনাঙ্গে বিছুটি পাতা ঘষে দিয়েছিল পুলিশ। বীরভূমের সাত্তোরের ওই ঘটনায় উর্দিধারীদের উপস্থিতিতেই শাসক দলের স্থানীয় কর্মীরা ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ছিল মহিলাকে। সেই উর্দিধারীদের বিরুদ্ধে এ বার উঠল আরও গুরুতর অভিযোগ। শনিবার, মালদহের ভালুকা ফাঁড়িতে নিজের ঘরে ডেকে নিয়ে গিয়ে কুপ্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন এক মহিলা।

ভালুকা ফাঁড়িতে পুলিশকে মারের সেই দৃশ্য।  —ফাইল চিত্র।

ভালুকা ফাঁড়িতে পুলিশকে মারের সেই দৃশ্য। —ফাইল চিত্র।

বাপি মজুমদার
হরিশ্চন্দ্রপুর (মালদহ) শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৩০
Share: Save:

অভিযুক্ত এক বিজেপি কর্মীকে না পেয়ে বাড়ি থেকে তার এক আত্মীয়াকেই তুলে এনেছিল পুলিশ। অভিযোগ, গ্রামের লাগোয়া জঙ্গলে গাছে বেঁধে মহিলার গোপনাঙ্গে বিছুটি পাতা ঘষে দিয়েছিল পুলিশ। বীরভূমের সাত্তোরের ওই ঘটনায় উর্দিধারীদের উপস্থিতিতেই শাসক দলের স্থানীয় কর্মীরা ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ছিল মহিলাকে।

সেই উর্দিধারীদের বিরুদ্ধে এ বার উঠল আরও গুরুতর অভিযোগ। শনিবার, মালদহের ভালুকা ফাঁড়িতে নিজের ঘরে ডেকে নিয়ে গিয়ে কুপ্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন এক মহিলা।

অপমানে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে এসে গ্রামে ফিরে মহিলা সে কথা জানাতেই, এ দিন দুপুরে ভালুকার বাসিন্দারা ভেঙে পড়েছিলেন ফাঁড়িতে। ওসি সনৎ বিশ্বাসকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। নিজের চেয়ারে বসে ওসি অবশ্য সে সময়ে পাল্টা দাবি করেন, ‘সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা বলছেন মহিলা।’ আর তাতেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। ক্ষিপ্ত ওই মহিলা সপাটে চড় কষিয়ে দেন ওসি’র গালে। বেগতিক দেখে ফাঁড়ির অন্য পুলিশ কর্মীরা সনৎবাবুকে অন্য একটি ঘরে ঢুকিয়ে আড়াল করার চেষ্টা করতে এ বার, নিজের পা থেকে হাওয়াই চটি খুলে ওসি’র গায়ে দু-এক ঘা বসিয়ে দেন ওই মহিলা।

কী অবস্থায় এমন মারমুখী হয়ে উঠলেন মহিলা তা খতিয়ে দেখতে এ দিন বিকেলে তদন্ত শুরু করেছে জেলা পুলিশের কর্তারা। তবে এ দিন রাত পর্যন্ত ওই মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়নি। ভালুকা ফাঁড়ির ওসি’র বিরুদ্ধেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। চাঁচলের এসডিপিও কৌস্তভদীপ্ত আচার্য বলেন, “কোন পরিস্থিতিতে ফাঁড়িতে ঢুকে পুলিশকর্মীকে মারধর করল জনতা তা খতিয়ে দেখা হবে।” তবে, ভালুকা ফাঁড়ির ওসি সনৎ বিশ্বাস অবশ্য ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন। তাঁর দাবি, “আমি কোনও খারপ আচরণ করিনি। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।”

ঘটনাটি জানাজানি হতেই সরব হয়েছেন বিরোধীরা। মালদহের (উত্তর) সাংসদ কংগ্রেসের মৌসম বেনজির নূরের প্রশ্ন, “পুলিশ-প্রশাসন বলে এ রাজ্যে কিছু আছে বলে মনে হয় না। না হলে থানার মধ্যেই পুলিশের কুপ্রস্তাব দেওয়ার ঘটনা কেউ শুনেছে?” হরিশ্চন্দ্রপুরের ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক তজমূল হোসেনের মন্তব্য, “জুতোপেটা করাটা নিন্দনীয়। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, এক জন মহিলা কতটা অপমানিত হলে এমন বেপরোয়া কাজ করতে পারেন।” তাঁরা সকলেই ওই ওসিকে বরখাস্ত করার দাবি করেছেন।

মহিলার পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে, পড়শির সঙ্গে বিবাদের জেরে মাথা ফেটেছিল ওই মহিলার। এ ব্যাপারে ফাঁড়িতে গিয়ে লিখিত অভিযোগ জানালেও তা নিয়ে নড়েচড়ে বসেনি পুলিশ। এ দিন সে ব্যাপারেই খোঁজ করতে স্বামীর সঙ্গে গিয়েছিলেন ওই মহিলা। সঙ্গে ছিল আরও একটি অভিযোগ পত্র।

মহিলার অভিযোগ, স্বামী বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ওসি’র সঙ্গে দেখা করতে তাঁর ঘরে একাই গিয়েছিলেন তিনি। মহিলা বলেন, “স্বামীকে ডেকে পাঠিয়ে জেরা করা তাঁকে বাইরে বসতে বলেন বড়বাবু। তারপরই আমাকে বলেন, আমি জানি তুমি স্বামীর সঙ্গে থাক না। অন্য এক জনের সঙ্গে তোমার সম্পর্ক আছে তা-ও জানি। তা আমার সঙ্গে থাকতে আপত্তি আছে!” মহিলা জানান, এ কথা শোনার পরে অপমানে কাঁপতে থাকেন তিনি। মহিলার কথায়, “এই সময়ে ওসি আমার হাত ধরে কাছে টানার চেষ্টা করেন। আমি কোনওরকমে হাত ছাড়িয়ে বেরিয়ে আসি।” বছর ত্রিশের ওই মহিলার স্বামী কাটিহারে একটি দোকানে কাজ করেন। দিন কয়েক হল গ্রামে ফিরেছেন। তিনি বলেন, “ওসি’র ঘর থেকে স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে এল দেখে আমি বার বার জিজ্ঞেস করতে থাকি, কী হয়েছে, রাগে অপমানে ও কাঁপছিল। কথার উত্তর দিতে পারেনি।”

পরে গ্রামে ফিরে মহিলা সে কথা জানাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে ভালুকা। বিক্ষোভ ভেঙে পড়ে ওই ফাঁড়িতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

fari police bapi majumdar harishchandrapur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE