একটি নার্সারি স্কুলের কেজি টু-র ছাত্রীকে অপহরণের অভিযোগে তারই পড়শি দুই ছাত্রকে গ্রেফতার করল পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলায় স্কুল ছুটির সময়ে ওই ছাত্রীকে অপহরণ করা হয়। সেই রাতেই এলাকার বাসিন্দারা ওই দুই ছাত্রকে সন্দেহজনকভাবে একটি গাড়িতে ঘোরাফেরা করতে দেখে ধরে ফেলে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
ধৃতদের এক জন প্রণব শর্মা গঙ্গারামপুর কলেজের অ্যাকাউন্টেন্সি অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। অন্য জন ডালখোলার একটি স্কুলের দশম শ্রেণিতে পড়ে। দু’জনেই অত্যন্ত গরিব পরিবারের ছেলে। পুলিশের দাবি, রাতারাতি মোটা টাকা হাতানোর জন্যই প্রতিবেশী পরিবারের সন্তান ওই ছাত্রীকে তারা অপহরণ করেছিল বলে ধৃতরা জেরায় কবুল করেছে। শুক্রবার তাদের ইসলামপুর আদালতে তোলা হলে মুখ্য দায়রা বিচারক অর্ঘ্য চক্রবর্তী তাদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতে রাখার আর্জি মঞ্জুর করেন। তবে তারা কোনও মুক্তিপণ আদায় করেছে কি না, সে ব্যাপারে পুলিশ কিছু বলতে চায়নি। উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার ওয়াকার রেজা বলেন, “টাকার বিষয়টি জানা নেই। এখনই কিছু বলতে পারব না।” তিনি জানান, একটি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ঘটনায় আরও কেউ জড়িত রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, প্রণব এলাকায় মেধাবী ছাত্র হিসেবে পরিচিত। মাধ্যমিকে ৭৭ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন। বছর তিনেক আগে প্রণবের বাবার মৃত্যু হয়। মামারবাড়ির আত্মীয়েরাই তাঁর পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন। তাঁর কাকা সরকারি কর্মচারী। পুলিশ জানিয়েছে, অপহরণের জন্য যে গাড়িটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি তাঁর ওই কাকার অফিসেরই গাড়ি বলে প্রণব দাবি করেছেন। সেই দাবি কতটা সত্যি তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। অতীতে প্রণব আরও কোনও অপরাধে জড়িত ছিলেন কি না, তা-ও পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।
পুলিশ জানিয়েছে, সম্প্রতি প্রণব এলাকার বাসিন্দা দশম শ্রেণির ওই ছাত্রটির সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি করে। ওই স্কুল ছাত্রের বাবা বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। সে থাকে তার মায়ের সঙ্গে। মা একটি স্কুলে মিড ডে মিলের রান্না করে সংসার চালান। পুলিশি জেরায় ধৃত স্কুল ছাত্র দাবি করেছে, টাকার লোভেই সে অপহরণের প্রস্তাবে রাজি হয়েছিল।
ছাত্রীর বাড়ির লোকজন স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের অভিযোগ এনেছেন। তাঁদের অভিযোগ, স্কুল ছুটির পরে তাঁদের মেয়েকে পরিবারের সদস্য নন এমন একজনের হাতে তুলে দেওয়া উচিত হয়নি। স্কুলের অধ্যক্ষ রতন দে-র কিন্তু যুক্তি, “ওই যুবক নিজেকে ছাত্রীটির বাবার দোকানের কর্মচারী বলে পরিচয় দেন। সে জন্য তাঁর হাতে ছাত্রীটিকে তুলে দিয়েছি। এমন অনেকেই নিয়ে যান।” কিন্তু ছাত্রীটিকে যেখানে রোজ তার দিদিমা, পিসি বা দাদু নিয়ে যান, সেখানে অন্য লোক দেখে সন্দেহ হল না কেন? জবাবে অধ্যক্ষ কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, ছাত্রীটির বাড়ির লোক পৌঁছনোর আগেই সে দিন প্রণব গিয়ে স্কুল থেকে ছাত্রীটিকে নিয়ে গাড়িতে তোলেন। পরিচিত মুখ দেখে ছাত্রীটিও আপত্তি করেনি। গাড়িতে ওঠে ওই স্কুল ছাত্রও। ওই ছাত্রীর বাবা জানান, প্রথমে ২০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। পরে দাবি করা হয় ৩ লক্ষ টাকা। প্রথমে বলা হয় রায়গঞ্জে যেতে। পরে ডালখোলায় ডেকে নেওয়া হয় তাঁদের। ওই ছাত্রীর বাবার দাবি, সেখানে বাইপাসের একটি জায়গায় টাকা ফেলার পরে তাঁকে জানানো হয়, তাঁর মেয়ে কোথায় রয়েছে। সেখান থেকে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy