সংস্থার সদর দফতরের সামনে হিমুল বাঁচাও কমিটির অবস্থান বিক্ষোভ।—নিজস্ব চিত্র।
বাম আমলে নেতা-মন্ত্রী-আমলারা নানা সময়ে বিস্তর আশ্বাস দিয়েছেন। তৃণমূলের শাসনেও ঢালাও আশ্বাস মিলছে। কিন্তু, কারও উপরেই আর ভরসা রাখা যাচ্ছে না জানিয়ে অরাজনৈতিক মঞ্চ গড়ে আন্দোলনের নামলেন উত্তরবঙ্গের দুধ সরবরাহকারী সংস্থা হিমূলের কর্মী, অফিসারেরা। তাতে যোগ দিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত কর্মী থেকে শুরু করে সংস্থার দুধ সরবরাহকারীরাও। সিটু ও আইএনটিইউসি শ্রমিক সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে কমিটিতে উল্লেখযোগ্যভাবে যোগ দিয়েছেন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র সদস্যরাও।
সোমবার দুপুরে ‘হিমূল বাঁচাও কমিটি’র সদস্যরা মাটিগাড়ায় সংস্থার মূল গেটের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। সেখানে সরকারি অফিসারদের পাশাপাশি রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। পরে সংস্থার দ্রুত পুনরুজ্জীবন, নিয়মিত বেতন, অবসরপ্রাপ্তদের বকেয়া মেটানোর দাবিতে মুখ্য কার্য নির্বাহী আধিকারিকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বাঁচাও কমিটির সদস্যদের অভিযোগ, কয়েক দফায় টাকা দিলেও সংস্থার ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় নজর দিচ্ছে না রাজ্য সরকার। বাম আমলে যা হয়েছে এখনও তাই হচ্ছে। শুধুমাত্র হিমূলের জন্য প্রশাসনিক অফিসার নিয়োগ করা হয়নি। যাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, তাঁরা দার্জিলিঙেই থাকেন। অনেকে কোনওদিন সংস্থার দফতর, কারখানায় পর্যন্ত আসেননি। কেবলমাত্র কর্মীদের দোষারোপ করার পালা চলছে। বেতন, বকেয়া কিছুই ঠিকঠাক নেই। বিরাট সম্পত্তি, ভবন ভগ্নদশায় পরিণত হচ্ছে। তাই সবাই মিলে একযোগে আন্দোলন করা ছাড়া আর উপায় নেই।
এই প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “আমি হিমূলের অবস্থার কথা জানি। সরকার, অফিসারেরা চেষ্টা করছেন। অনেক টাকাই দেওয়া হয়েছে। আরও পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। আমি কয়েকদিনের মধ্যেই কলকাতা যাচ্ছি। প্রাণিসম্পদ বিকাশ মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।”
অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে বলে অবশ্য দাবি করেছেন সংস্থার সিইও রচনা ভকত। তিনি বলেন, “দুই মাস আগেও আমরা একবেলা দুধ সরবরাহ করছিলাম। এখন তা দু’বেলা হয়েছে। পাহাড়ের ঘুমে নতুন করে প্ল্যান্ট চালু হচ্ছে। দেরি হলেও কর্মীরা বেতন পাচ্ছেন। বকেয়াগুলিও দেখা হচ্ছে। সরকার টাকা দিয়েছে। একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে কর্মীদের।” তিনি জানান, হিমূল বাঁচাও কমিটির কোনও চিঠি এখনও পাইনি। তা পেলে খতিয়ে দেখব।
আইএনটিইউসি-র সুবীর মুখোপাধ্যায় বা সিটুর বিজয় প্রধানদের বক্তব্য, “আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে। জানুয়ারি মাসের বেতন মেলেনি। এখন একজোট হয়ে আন্দোলন করা ছাড়া উপায় নেই। আমাদের মনে হচ্ছে, হিমূলকে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে।” আর তৃণমূল সংগঠনের সদস্য পূর্ণ বাহাদুর দোর্জি, লবা আইচেরা বলেন, “সংস্থা বাঁচলে আমরা পরিবার নিয়ে খেয়ে বাঁচব। তা না হলে কিসের সংগঠন। তাই আমরাও একজোট হয়েছি।”
সংগঠনের সদস্যদের বক্তব্য প্রসঙ্গে আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি অরূপরতন ঘোষ বলেন, “সরকারের উপর ভরসা রাখতে হবে। ওই সব কমিটি গড়ে আখেরে কিছু লাভ হবে না। অফিসাররা চেষ্টা করছেন। আর আমাদের কিছু লোক কমিটিতে থাকতেই পারেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলা হবে।”
বর্তমানে হিমূলের ১১৬ জন কর্মী, অফিসার আছেন। ১২ জনের মত অস্থায়ী কর্মী আছেন। জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বর্তমানে দ’ুবেলা মিলিয়ে ৯ হাজার লিটারের মত দুধ প্যাকেটজাত হচ্ছে। তবে সমতলে এখনও প্রায় ১ কোটি টাকা দুধের বকেয়া রয়েছে। পিএফ, গ্রাচ্যুইটি-সহ অন্যান্য হিসাব মিলিয়ে অবসরপ্রাপ্তদের বকেয়া প্রায় ৪ কোটি টাকা। মাঝে পিএফের টাকা জমা না পড়ায় সংস্থার সমস্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও সিল করে দেন পিএফ কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ টাকা দিয়ে পিএফ, বিদ্যুত্ বিল, ও দুধের বিল মেটানো হয়। ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা সেপ্টেম্বর থেকে ছ’মাসের জন্য ‘ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল’ হিসাবে দেওয়া হয়েছে। ২০ লক্ষ করে তিন মাসের টাকা খরচও হয়েছে বলে জানা গেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy