এনসেফ্যালাইটিসের এ বারের প্রকোপ মনে করিয়ে দিচ্ছে ২০০১ সালে শিলিগুড়িতে মারণ জ্বরের প্রাদুর্ভাবের কথা। এ বার জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত নানা ধরনের জ্বরে শুধু উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের মধ্যে ১২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৪ বছর আগে শিলিগুড়িতে তিন সপ্তাহের মধ্যে মৃতের সংখ্যা ৩৫ ছাড়িয়ে যায়। এ বার যেমন সরকারের ঘুম ভেঙেছে দেরিতে, সে বারেও তেমন পরে টনক নড়ে তৎকালীন বাম সরকারের।
সে বার গোটা শহরে আতঙ্ক ছড়ায়। শিলিগুড়িতে বাইরের লোকজন আসা কার্যত বন্ধ করে দেন। শহরের দোকানপাট দিনেও বন্ধ হতে শুরু করে। মুখোশ লাগিয়ে রাস্তায় চলাফেরা করতে দেখা যেত লোকজনকে। ওই সময়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে বাম সরকার। শেষ পর্যন্ত তৎকালীন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের উদ্যোগে রাতারাতি ২৫ জন চিকিৎসককে কলকাতা থেকে আনিয়ে প্রায় এক মাস মেডিক্যাল কলেজে রাখা হয়। অতিরিক্ত ২০টি ভেন্টিলেটর পৌঁছয় মেডিক্যালে। সকাল থেকে গভীর রাত সব কাজ ছেড়ে শুধু মারণ জ্বর প্রতিরোধের কাজের তদারকি করতে দেখা গিয়েছিল সেই মন্ত্রীকে। শুধু তাই নয়, যে সব রক্ত পরীক্ষা মেডিক্যাল কলেজে হয় না, তা করানোর জন্য শহরের নামী একাধিক বেসরকারি প্যাথোলজি ক্লিনিকে সরকারি খরচে তা করানোর ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। সেই টাকা দিয়েছিল শিলিগুড়ি পুরসভা। শহরের নার্সিংহোম ও বেসরকারি প্যাথোলজি ক্লিনিক মালিকদের সংগঠন সূত্রের খবর, অন্তত ১৫টি জায়গায় এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু নির্ণয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ চাইলে, সেই সব পরীক্ষা কম খরচে করে দিতে বেসরকারি ল্যাবরেটরি কর্তৃপক্ষ তৈরি রয়েছেন। কিন্তু শিলিগুড়ি পুরবোর্ড এখন অকেজো। ফলে, উদ্যোগী হবে কে? পুর কমিশনার সোনম ওয়াংদি ভুটিয়া সব দেখাশোনা করছেন। তাঁর যুক্তি, “আমরা কী করব! স্বাস্থ্য দফতর সরঞ্জাম দিক। তা ছাড়া শিলিগুড়ি শহরের কেউ তো মারা যায়নি!”
রোগীদের পরিবারের তরফে কিন্তু বারবারই অভিযোগ করা হচ্ছে, পরিষেবা মিলছে না। এমনকী, মেডিক্যাল কলেজের অন্দরেও প্রবীণ অফিসার-কর্মীদের একাংশ রোগ মোকাবিলায় সুসংহত পরিকল্পনার ছাপ দেখা যাচ্ছে না বলে আক্ষেপ করেছেন। তবে শুক্রবার মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে দীর্ঘ বৈঠকের পরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, “ঠিকঠাক তথ্য-পরিসংখ্যান আমাদের দেওয়া হয়নি। যাই হোক, পরিস্থিতি এখন আগের চেয়ে অনেক ভাল। আমরা সবরকম পদক্ষেপ করছি। রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা হবেই।” শুক্রবার জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার তৃণমূল যুব কংগ্রেসের তরফে মেডিক্যাল কলেজ লাগোয়া এলাকায় একটি ‘সেবাকেন্দ্র’ চালু হয়েছে তৃণমূল নেতা সৌরভ চক্রবর্তীর উদ্যোগে।