আর এমনটা হবে নাই বা কেন? বাসিন্দাদের অভিযোগ, দুই দশক আগেও তুফানগঞ্জের জনসংখ্যার চাপ তেমনটা ছিল না। এখন শুধু পুরসভা এলাকাতেই অন্তত ৪০ হাজার মানুষের বসবাস। মহকুমা সদর বলে অফিস, আদালত, স্কুল-কলেজ, হাসপাতালে নিত্য যাতায়াতে শহরে আসেন দৈনিক গড়ে ৪০ হাজার মানুষ যানবাহনের সংখ্যাও বেড়েছে। কয়েকগুণ কিন্তু ওই প্রধান রাস্তা চওড়া হয়নি।
কয়েক বছর আগে পুরসভার নেওয়া থানামোড় থেকে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক লাগোয়া এলাকা পর্যন্ত উড়ালপুলের পরিকল্পনাও ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে। অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলির গা ঘেঁষে কোথাও দোকান বসেছে, কোথাও বাজার ভিড় এড়াতে সাইকেল, রিকশা, মোটর বাইক থেকে ভুটভুটি, ছোট গাড়িও ঢুকে পড়ছে। এলাকার বাসিন্দা চিকিৎসক ঠাকুরদাস পালের কথায়, “ব্যস্ত সময়ে ওই প্রধান সড়ক তো বটেই, বেশ কিছু গলির রাস্তাতেও যাতায়াত করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এতদিনেও কোথাও ফুটপাত বলে কিছু হয়নি।” নাটাবাড়ি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক তথা তুফানগঞ্জের বাসিন্দা রঞ্জিত সেন বলেন, “উড়ালপুল দূর অস্ৎ, বাস স্ট্যান্ড দু’টির উন্নয়ন, রাস্তা চওড়া করা, কিছুই পরিকল্পনা মত হয়নি।”
এখানেই শেষ নয়। বাসিন্দারাই জানাচ্ছেন, বসত বাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন রাস্তা। অথচ সুষ্ঠু নিকাশির ব্যবস্থা আজও হয়নি। একটু ভারী বৃষ্টিতেই জলে ভাসে তুফানগঞ্জ পুরসভা এলাকার অলিগলি। শহরের প্রধান রাস্তাও বিক্ষিপ্তভাবে ডুবে যায়। বাড়িতে পানীয় জল সরবরাহের জন্য অসংখ্য আবেদন জমা পড়ে থাকলেও সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না।
নেই বিনোদন উদ্যান। একটি মাত্র শিশু উদ্যান থাকলেও তা অত্যন্ত অপরিসর। বিয়ে কিংবা অন্য কোনও সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য বাম আমলে একটি মাত্র অনুষ্ঠান বাড়ি ‘আবাহন’ করা হয়। সময়ের সঙ্গে সেটির বুকিংয়ের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় কোনও অনুষ্ঠান বাড়ি তৈরি হয়নি। ফলে বিয়ে, অন্নপ্রাশনের মত অনুষ্ঠানের তারিখ চূড়ান্ত করার আগে ওই বাড়িটির বুকিং হয়েছে কি না খোঁজ নিতে বাধ্য হন বাসিন্দাদের অনেকেই। শহরে পূণাঙ্গ স্টেডিয়াম দূর অস্ৎ, গড়ে ওঠেনি একটি ইন্ডোর পর্যন্ত। মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার একটি মাত্র মাঠ খেলাধূলো চর্চার মূল ভরসা। অথচ শিবশঙ্কর পালের মত ক্রিকেটার তুফানগঞ্জ থেকেউ পাদপ্রদীপের আলোয় গিয়েছেন। মুক্তমঞ্চের দাবি উপেক্ষিত। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের একমাত্র ভরসা শহরের কমিউনিটি হলের অবস্থা নিয়েও ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। শহরের বাসিন্দা কবি অজিত অধিকারী বলেন, “শহরের সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল বিকাশের স্বার্থেই মুক্তমঞ্চ, কমিউনিটি হলের আমূল সংস্কার, মডেল লাইব্রেরির মত অনেক কিছুই করা দরকার।”
তুফানগঞ্জ পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর অনন্ত বর্মা বলেন, “শহরের মেন রোড চওড়া করে ডিভাইডার বসানো হয়নি। নাগরিক স্বাছন্দ্য বাড়ানর ব্যাপারে পুরসভা পুরো ব্যর্থ।”
তুফানগঞ্জ পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তথা সিপিএম নেতা রমেশ সরকার বলেন, “উড়াল পুলের প্রকল্পে বরাদ্দ মেলেনি। পরে থানা মোড় থেকে শহরের বুক চিরে যাওয়া প্রধান রাস্তা চওড়া করতে পূর্ত দফতরে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। জমি ও টাকার অভাবে অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। অনুন্নয়নের প্রভাব পড়েছে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও। সমস্যা বাড়ছে ক্রমশ।
(চলবে)