শিলিগুড়ির কিছু হোটেলে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা যথাযথ নয়, কোথাও আপত্কালীন পরিস্থিতিতে বহুতল হোটেলে থাকা বাসিন্দাদের বার হওয়ার বিকল্প ব্যবস্থা নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে হোটেলকর্মীদের বেশিরভাগই জানেন না, কী করে আগুন নেভানোর যন্ত্র ব্যবহার করবেন। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে তা নেভাতে জলাধারের ব্যবস্থাও অনেক ক্ষেত্রেই নেই। মঙ্গলবার শিলিগুড়ির প্রধানগরের হোটেলে অগ্নিকাণ্ডে দুই তরুণ তরুণীর মৃত্যুর পরে তাই হোটেলের নিরাপত্তার প্রশ্ন জোরদার হয়ে উঠল। বারবার বলার পরেও হোটেল কর্তৃপক্ষের একাংশের তরফে সে ব্যাপারে কিছু করা বয়নি বলে অভিযোগ। পুলিশ প্রশাসন এবং দমকলের তরফেও এ ব্যাপারে উদাসীন থাকার জন্যই মঙ্গলবার প্রধাননগরের একটি হোটেলে আগুন লেগে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
মঙ্গলবার রাত ১টা নাগাদ হঠাত্ই হোটেলের রিসেপশন থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখেন কর্মীরা। কয়েকজন কর্মী জানিয়েছেন, কর্মীরা দেখেন রিসেপশন ঘরটি দাউ দাউ করে জ্বলছে। ততক্ষণে আগুন দেখে হোটেলের বাইরেও চেঁচামেচি শুরু হয়ে গিয়েছে। পুলিশ এবং দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, দোতলায় হোটেলের রিসেপশন এবং তার পিছনে থাকা সিঁড়ির ঘরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছিল। ধোঁয়ায় ঢেকে যাওয়া সিঁড়ি এবং আগুনের হলকায় হোটেলে থাকা পর্যটকরা নামতে পারেননি। নিরুপায় হয়ে মেঘালয়ের তুরার বাসিন্দা শিবপ্রসাদ পি হাজং পরিবার নিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন। ঘরের ভিতরে জল ছিটিয়ে বাঁচার মরিয়া চেষ্টা চালান। যদিও বাকি পর্যটকেরা ছাদে উঠে যাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই এড়ানো সম্ভব হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। দমকলের দু’টি ইঞ্জিন গিয়ে দু’ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন নেভার পরে পুলিশ এবং দমকলকর্মীরা আটকে থাকা পর্যটকদের উদ্ধার করেন। সে সময়েই সিঁড়িতে পড়ে থাকায় দুই তরুণ-তরুণীর দগ্ধ দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধার কাজের সময় জানলার কাঁচ ভেঙে মাথায় পড়ে এক পুলিশ আধিকারিক জখম হয়েছেন।
হোটেলের ৩০৩ এবং ৫০৩ নম্বর ঘর দু’টিতে আটকে ছিলেন কলকাতা থেকে আসা ১৪ জনের পর্যটকদের একটি দল। তাঁদের মধ্যে একজন দমদম নাগেরবাজারের কাজল মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “চিত্কার আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায়। দরজা খুলে দেখি আগুনের হল্কা। তার সঙ্গে প্রচণ্ড ধোঁয়া ঘরে ঢুকতে থাকে। ভয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কিছু পরে একজন দরজা খুলতে বলে। আমি খুললে তিনি ঘরে ঢুকে জানলার কাচ ভেঙে দেন। গ্রিল খুলে তিনি নেমে যান। পরে দমকল কর্মীরা এসে আমাদের উদ্ধার করেন।”