শ্রমিকদের বেতন থেকে কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ড (ইপিএফ) খাতে টাকা কাটা হচ্ছে। অথচ নানা অজুহাত দেখিয়ে বহু ক্ষেত্রে তা সময়মতো পিএফ কর্তৃপক্ষের ঘরে (ইপিএফও) জমা দেওয়া হচ্ছে না। চা বাগান মালিকদের একাংশের বিরুদ্ধে লাগাতার এই অভিযোগ তুলে আসছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। এ বার সেই একই কারণে আঙুল উঠল দার্জিলিং ও উত্তর দিনাজপুর জেলার প্রায় ৫০টি বাগানের বিরুদ্ধে। যেখানে পিএফ বকেয়ার পরিমাণ ছুঁয়ে ফেলেছে ১০০ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ি আঞ্চলিক শাখার পিএফ কমিশনার মনোজ কুমারের অভিযোগ, ওই ৫০ বাগানের প্রতিটিতে গড়ে ৩০০ জন শ্রমিকের ইপিএফ বকেয়া ফেলে রেখেছে মালিকপক্ষ। যার অঙ্ক ১০০ কোটি। এর মধ্যে চারটি চা বাগান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগও জানানো হয়েছে। কিন্তু আর্থিক সঙ্কটের হাজারটা কারণ দেখিয়ে মালিকপক্ষ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে রাখায় ইপিএফ কর্তৃপক্ষ কিছু করতে পারছেন না বলে জানান তিনি।
এ দিন মনোজ বলেন, ‘‘বেতন থেকে ওই টাকা কেটে রাখার পরেও জমা না করা চুক্তি ভাঙার সামিল। শ্রমিকদের টাকা উদ্ধারের জন্য সব রকম ব্যবস্থা নেবেন কর্তৃপক্ষ।’’
পিএফ দফতরের দাবি, শ্রমিকদের হকের ওই টাকা আদায়ের জন্য ইপিএফও সংশ্লিষ্ট মালিকপক্ষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সাময়িক ভাবে বন্ধ করতে পারে ও বেচতে পারে বাগানের সম্পত্তি। এ ভাবে আদায় হওয়া টাকা থেকে প্রথমেই শ্রমিকদের পিএফ বকেয়া চোকানো হয়। তবে আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় এই মুহূর্তে অপেক্ষায় রয়েছে তারা।
পিএফ কমিশনার জানিয়েছেন, গয়াগঙ্গা, বেলগাছি, কমলপুর এবং গঙ্গারাম বাগান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়েছে শ্রমিকদের টাকা জমা না করার জন্য। পানীঘাটা বাগান কর্তৃপক্ষ আবার গত পাঁচ বছরে শ্রমিকদের ইপিএফ বাবদ ৪ কোটি টাকা বকেয়া ফেলেছে। মালিকপক্ষের হদিস নেই।
তরাই ইন্ডিয়া প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশন সম্পাদক উদয়ভানু দাস বলেন, ‘‘আইন মেনেই শ্রমিকদের ইপিএফের টাকা বাগান মালিকদের জমা করা উচিত। সংগঠন সব সময় সেটাই চায়। সদস্যদেরও বারবার এ কথা বলা হয়েছে।’’
দার্জিলিং জেলায় বড়-মাঝারি মিলিয়ে শতাধিক চা বাগান। উত্তর দিনাজপুরে ৪০টির মতো। শ্রমিক সংগঠনগুলিকে নিয়ে গঠিত জয়েন্ট ফোরামের আহ্বায়ক জিয়াউল আলম বলেন, ‘‘পিএফ দফতর যে ১০০ কোটি বকেয়া পড়ে থাকার কথা বলছে, তা একটা অংশ মাত্র। বহু বাগানে বহু শ্রমিক পিএফ-এর আওতাতেই আসেননি। বাগানগুলির বিভিন্ন কর্মী সংগঠনকেই এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে।’’ তাঁর দাবি, আইন কার্যকর করার জন্য পিএফ কর্তৃপক্ষও সারা বছর সক্রিয় থাকলে ভাল হয়।