Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বঁটি নিয়ে রুখে দাঁড়ানোর ‘পরামর্শ’ তৃণমূল নেতার

দলীয় কোন্দলে দু’জনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মাথায় এলাকায় গিয়ে দলীয় কর্মীদের বাড়ির মহিলাদের বঁটি নিয়ে রুখে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিলেন কোচবিহারের তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। সোমবার সকালে দলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত সুটকাবাড়িতে যান রবীন্দ্রনাথবাবু। গত শনিবার রাত থেকে ওই এলাকায় গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

সুটকাবাড়িতে রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। হিমাংশুরঞ্জন দেবের তোলা ছবি।

সুটকাবাড়িতে রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। হিমাংশুরঞ্জন দেবের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৪ ০২:২২
Share: Save:

দলীয় কোন্দলে দু’জনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মাথায় এলাকায় গিয়ে দলীয় কর্মীদের বাড়ির মহিলাদের বঁটি নিয়ে রুখে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিলেন কোচবিহারের তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। সোমবার সকালে দলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত সুটকাবাড়িতে যান রবীন্দ্রনাথবাবু। গত শনিবার রাত থেকে ওই এলাকায় গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গুলি, ধারাল অস্ত্রের ব্যবহারও হয় বলে অভিযোগ। দলীয় সূত্রের খবর, জেলা সভাপতির অনুগামীদের সঙ্গে জেলার আরেক নেতা তথা জেলার সহ সভাপতি আবদুল জলিল আহমদের গোষ্ঠীর গোলমাল চলছে। ঘটনায় চার জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এঁদের মধ্যে দু’জন গুলিবিদ্ধ। জেলা পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “সংঘর্ষের ঘটনায় এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে।”

শুধু মহিলাদের বটি নিয়ে রুখে দাঁড়ানোর পরামর্শ নয়, আবদুল জলিল গোষ্ঠীর দখলে থাকা একটি দলীয় পার্টি অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথবাবু। এ দিন সকালে শতাধিক কর্মীদের নিয়ে এলাকায় যান তিনি। আক্রান্ত দলীয় কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে কথা বলেন। একের পর এক অভিযোগ শুনে ক্ষুব্ধ তৃণমূল জেলা সভাপতি কর্মীদের রুখে দাঁড়ানোর পরামর্শ দেন। জ্যোৎস্না বিবি নামে এক মহিলা তাঁকে অভিযোগ করেন, “দুস্কৃতীরা রাতে বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর চালিয়েছে। অস্ত্র বার করে ভয় দেখিয়েছে।” তা শুনে ক্ষুব্ধ রবীন্দ্রনাথবাবু ওই মহিলাকে পরামর্শ দেন, “ভয় পাবেন না। বাড়িতে বঁটি নেই? বটি নিয়ে বার হয়ে রুখে দাঁড়াবেন। মনে রাখবেন, মা দুর্গাও অস্ত্র হাতে অসুর নিধন করেছিলেন।” পরক্ষণেই তিনি জানান, পুলিশ পিকেট বসবে। কোতোয়ালি থানার আইসি বিষয়টি দেখবেন। ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ এ প্রসঙ্গে বলেন, “ওনার বক্তব্য প্ররোচণামূলক। পুলিশের উপরে তৃণমূল নেতাদেরও যে আস্থা নেই এতেই তা প্রমাণিত।”

তবে গোষ্ঠী কোন্দলের বিষয়টি তৃণমূল সভাপতি মানতে চাননি। তিনি বলেন, “এলাকায় একদল সমাজবিরোধী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। নিরীহ মানুষের উপরে হামলা করছে। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে লুঠ করছে। মহিলাদের উপরে আক্রমণ হচ্ছে। একটাকেও ছাড়া হবে না। পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলেছি।” পাল্টা মারের বিষয় নিয়ে তিনি অবশ্য কিছু বলতে চাননি। তৃণমূলের কোচবিহার জেলার সহ সভাপতি আব্দুল জলিল আহমেদ বলেন, “ওই এলাকায় সকলেই তো আমাদের লোক। কিছু সিপিএমের কর্মী দলে ঢুকে ঝামেলা তৈরির চেষ্টা করছে। গোলমাল হচ্ছে। বিষয়টি রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়ে আলোচনার মাধ্যমে তা মেটানো হবে।”

দলীয় সূত্রে খবর, সুটকাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সিরাজুল হক জলিল গোষ্ঠীর নেতা বলে পরিচিত। রবীন্দ্রনাথ গোষ্ঠীর অভিযোগ, প্রধানের নেতৃত্বেই এলাকায় সন্ত্রাস চলছে। জলিল গোষ্ঠীর পাল্টা অভিযোগ, সুটকাবাড়ির অঞ্চল সভাপতি হোসেন আলির নেতৃত্বে হামলা হচ্ছে। হোসেন আলি রবীন্দ্রনাথবাবুর অনুগামী।

এ দিন এলাকায় অঘোষিত বন্ধ হয়। দোকান-পাট বন্ধ বাজারে মানুষের সংখ্যাও কম ছিল। আশেপাশের এলাকা থেকে রবীন্দ্রনাথ অনুগামীদের ১০ টি মিছিল ঢোকে সুটকাবাড়িতে বাজারে। সর্বত্র পুলিশ পাহারা ছিল। মিছিল নিয়ে বাজারের ভিতরে ঢুকে রবীন্দ্রনাথবাবু দোকান খোলার আবেদন করেন ব্যবসায়ীদের। যে সব দোকান ভাঙচুর হয়েছে তাদের মালিকদের আশ্বাস দেন, “দোকান খুলুন। আমি রাতেও আসব। কে হামলা চালায় দেখি।”

এলাকার অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা অভিযোগ, তৃণমূল নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোল করছে। ফল ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের। দুই পক্ষ বিষয়টি কেন মিটিয়ে নিচ্ছে না বুঝতে পারছি না। জ্যোৎস্না বিবি, মর্জিনা বিবিরা এদিন ক্ষোভের সঙ্গে জেলা সভাপতিকে জানান, রাত হলেই তৃণমূলের মিছিল বার হয়। ওই মিছিলে নেতৃত্ব দেন দলের গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান। তাঁরাই বাড়িতে হামলা চালান। সুটকাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সিরাজুল হক অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “বাম আমল থেকে বহু সন্ত্রাস সহ্য করে আমরা তৃণমূল করছি। দলই আমাকে এলাকায় নেতৃত্বে বসিয়েছে। এখন আমার উপরেই হামলা হচ্ছে। ফলে এলাকায় শান্তি নষ্ট হচ্ছে। নেতাদের সেটা দেখতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE