Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বাবলির ফলে খুশির হাওয়া চাঁচলের সিদ্ধেশ্বরী স্কুলে

গ্রামের বাসস্ট্যান্ডে একটি ঝুপড়ি ঘরে দর্জির দোকান বাবার। সেই দোকানের আয় থেকে সংসার চালাতে রীতি মতো হিমশিম খেতে হয়। তবু সংসার চালানোর পাশাপাশি মেধাবী তিন ছেলেমেয়ের পড়াশোনার কথা ভেবে দিনরাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেন বাবা মর্তুজ খান। সংসারে চরম দারিদ্র্য না থাকলেও স্বচ্ছলতাও নেই। আর স্বামীর যেটুকু রোজগার হয় তা দিয়েই ছেলেমেয়েদের আগলে রেখেছেন মা রুকসানা খাতুন।

বাবলি খাতুন। নিজস্ব চিত্র।

বাবলি খাতুন। নিজস্ব চিত্র।

বাপি মজুমদার
চাঁচল শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৫ ০৩:০৫
Share: Save:

গ্রামের বাসস্ট্যান্ডে একটি ঝুপড়ি ঘরে দর্জির দোকান বাবার। সেই দোকানের আয় থেকে সংসার চালাতে রীতি মতো হিমশিম খেতে হয়। তবু সংসার চালানোর পাশাপাশি মেধাবী তিন ছেলেমেয়ের পড়াশোনার কথা ভেবে দিনরাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেন বাবা মর্তুজ খান। সংসারে চরম দারিদ্র্য না থাকলেও স্বচ্ছলতাও নেই। আর স্বামীর যেটুকু রোজগার হয় তা দিয়েই ছেলেমেয়েদের আগলে রেখেছেন মা রুকসানা খাতুন।

বাবা-মায়ের সেই কষ্টকে সার্থক করেই মালদহের চাঁচল সিদ্ধেশ্বরী স্কুল থেকে বি়জ্ঞান বিভাগে ৯৩ শতাংশ নম্বর পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে বাবলি খাতুন। সব ক’টি বিষয়েই ৯০ শতাংশের উপরে নম্বর পেয়েছে বাবলি। স্কুলের ২০৯ জন পড়ুয়ার মধ্যেই শুধু সর্বোচ্চ নম্বরই নয়, চাঁচল মহকুমার সব ক’টি স্কুলের মধ্যেও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে চাঁচল সিদ্ধেশ্বরী স্কুলের এই কৃতী ছাত্রী।

তার ওই ফলাফলে পরিবার, প্রতিবেশীদের পাশাপাশি স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যেও খুশির হাওয়া। বাংলায় ৯০, ইংরেজিতে ৯৪, অঙ্কে ৯৩, পদার্থবিদ্যায় ৯৮, রসায়নে ৯২ ও চতুর্থ বিষয় বায়োলজিতে ৯০ পেয়েছে বাবলি। মোট নম্বর ৪৬৭। তবে ভালো ফল করলেও বরাবরের মেধাবী মেয়েকে অর্থাভাবে জয়েন্ট এন্ট্রান্সের কোচিং দিতে না পারার দুঃখটা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না মর্তুজ খান। তিনি বলেন, ‘‘মেয়ে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা দেওয়ার কথা বলেছিল। সেজন্য কোচিং নিতে হত। কিন্তু সেই সাধ্য ছিল না।’’ ফলে চিকিত্সক বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার আশা ছেড়ে পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশুনা করতে চায় বাবলি।

বাবলির বাড়ি রতুয়ার শ্রীপুর পশ্চিমপাড়ায়। বাড়ি বলতে মাটি দিয়ে গাঁথা ইটের দেওয়ালের উপরে টালির ছাদ। তিন ভাইবোনের মধ্যে বাবলি ছোট। দাদা ও দিদি দুজনেই মেধাবী। দাদা রাকিব খান অঙ্কে স্নাতকোত্তর করার পর বিএড পড়ছে। দিদি রাখী খাতুনও অঙ্কে অনার্স পড়ছে। দাদা উচ্চমাধ্যমিকে অঙ্কে ১০০ পেযেছিলেন। বাবলি পেয়েছে ৯৩। তাই ভাল ফল করেও অঙ্কে পুরো নম্বর না পাওয়ার আক্ষেপ একটা রয়ে গিয়েছে তার।

বাবলির দাদা ও দিদি দু’জনে একসঙ্গে মালদহে থাকে। সেখানে দাদা রাকিব টিউশন করে নিজেদের পড়ার খরচ চালান। সামসি সীতাদেবী গার্লস স্কুল থেকে মাধ্যমিকেও ভালো ফল করার পর চাঁচল সিদ্ধেশ্বরী স্কুলে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছিল ফলে বিজ্ঞান বিষয়ে কিছুদিন টিউটর ছিল। বাকি নিজের চেষ্টাতেই পড়াশুনা করেছে বাবলি। তাকে সাহায্য করত দাদা রাকিবও। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আসরারুল হক বলেন, ‘‘বাবলি অত্যন্ত মেধাবী। পাশাপাশি ও যথেষ্ট পরিশ্রমী। ও যা করেছে তাতেই আমরা খুশি। ওকে সবরকম সাহায্য করা হবে।’’

আর বাবলি বলে, ‘‘ইচ্ছে রয়েছে পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশুনা করে গবেষনা করব। যেভাবেই হোক বাবা-মায়ের কষ্ট সার্থক করে তুলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE