মন কষাকষি মিঠু ও বিশুর। তারই প্রভাব পড়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচনে।
দু’জনেই কংগ্রেস নেতা। তবুও যেন পরস্পরের ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’। একজন আলিপুরদুয়ারের জেলা সভাপতি বিশ্বরঞ্জন সরকার। অন্য জন আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায়। দেবপ্রসাদ রায় ওরফে মিঠুর দাবি, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে সাহায্যের জন্য আলিপুরদুয়ারের বিভিন্ন গ্রাম থেকে দিল্লিতে তাঁর কাছে ফোন যাচ্ছে।’’ এই দাবি মানতে নারাজ বিশ্বরঞ্জন। তাঁর কথায়, ‘‘মিঠুর কোনও গুরুত্ব নেই জেলায়।’’
এই মন কষাকষির শুরু ২০১৬-র বিধানসভা ভোটের সময় থেকে। জেলা সভাপতির দাবি, ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে দেবপ্রসাদ দলের বিরুদ্ধে কাজ করেছিলেন। কংগ্রেসের সঙ্গে স্থানীয় স্তরে সিপিএম আসন সমঝোতা করলেও দেবপ্রসাদ তাঁকে হারাতে মাঠে নেমেছিলেন বলে দাবি বিশ্বরঞ্জনের। তাঁর কথায়, ‘‘সে জন্য দলের কাছে ব্রাত্য তিনি। কংগ্রেস কর্মীরাও মিঠুকে মানতে চায়না।’’ দেবপ্রসাদ পাল্টা বলেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতে জেলা স্তর থেকে কর্মীরা সেভাবে সাহায্য পাচ্ছেন না। সেজন্য ফোন আসছে আমার কাছে। আমি কর্মীদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি দিল্লিতে আছি। জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করতে।’’
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বার গ্রাম পঞ্চায়েতে কংগ্রেস জিতেছিল ১৪৮টি আসন। জেলায় মোট আসন ৯৯৯টি। সেখানে এ বার তারা প্রার্থী দিতে পেরেছে মাত্র ১৩১টি আসনে। গত বার জেলা পরিষদে আসন পেয়েছিল তিনটি। জেলা পরিষদের আসন সংখ্যা ১৮টি। এ বার কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছে মাত্র ১০টিতে। পঞ্চায়েত সমিতিতে গতবার আসন পেয়েছিল ৩৩টি। পঞ্চায়েত সমিতির আসন সংখ্যা ১৮৮টি। সেখানে এ বার কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছে মাত্র ৩৪টি আসনে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কংগ্রেস কর্মীদের দাবি, মিঠু ও বিশুর এই লড়াইয়ে ক্ষতি হয়েছে দলেরই। বিভিন্ন জায়গায় বিভ্রান্ত কর্মীদের অনেকেই। এর ফায়দা নিয়েছে অন্য দলেরা। জেলায় কংগ্রেসের বড় নেতারা দল বদল করেছেন আগেই। এতে প্রভাব পড়েছে পঞ্চায়েতে। কর্মীদের অনেকেই বলছেন, ‘‘এ বার তৃণমূলের অন্দরে কোন্দল থাকায় ফায়দা তোলা যেত। নিজেদের কোন্দলে তা করা যায়নি।’’
দেবপ্রসাদ দাবি করছেন, তিনি যে কিছু করতে পারছেন না তা কর্মীদের জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্য ও জেলায় দল ব্রাত্য করে রাখায় আমি কিছু করতে পারছি না।’’ বিশ্বরঞ্জন অবশ্য জেলায় মিঠুর প্রভাব আছে বলেই মানতে চান না। তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘আমরা সাধারণ মানুষকে নিয়েই তৃণমূল-বিজেপিকে রুখব।’’