এক সিপিএম নেতাকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠল এক সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে৷ ওই সিভিক ভলান্টিয়ার এলাকার তৃণমূলের বুথ সহ সভাপতি বলেও পরিচিত৷ মঙ্গলবার রাতে আলিপুরদুয়ারের তপসিখাতা চৌপথিতে ঘটনাটি ঘটেছে৷ ওই সিপিএম প্রভাত অধিকারী। প্রভাতবাবু অবশ্য অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছেন। সিভিক ভলান্টিয়ারের নাম তুষার বর্মন। দু’জনেরই বাড়ি পারোর পাড় এলাকায়। এই ঘটনার পরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে ফের একবার সরব হয়েছেন বিরোধীরা৷ তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ৷
তপসিখাতা এলাকাটি আলিপুরদুয়ার ১ ব্লকে অবস্থিত৷ পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা শুরু হতেই এই ব্লকে বড় অশান্তি হয়েছিল৷ তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে উত্তাল হয়ে উঠেছিল বিডিও অফিস চত্বর৷ এক পুলিশ কর্তা ও দুই পুলিশ কর্মীও জখম হন৷
বিরোধীদের অভিযোগ, গোটা আলিপুরদুয়ার জেলার মধ্যে শাসকদলের সব থেকে বেশি সন্ত্রাস আলিপুরদুয়ার ১ ব্লকেই৷ বিরোধীদের দাবি, সন্ত্রাস করেই ওই ব্লকের পাতলাখাওয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সব আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল৷ পরোরপাড় গ্রাম পঞ্চায়েতেরও চারটি আসন এ ভাবেই তৃণমূল জয়ী হয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের৷
সিপিএমের অভিযোগ, পাকড়িতলায় তাঁদের প্রার্থী ৬ এপ্রিল মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বাধার মুখে পড়েন৷ এই অবস্থায় গত ৯ এপ্রিল প্রভাতবাবুর ভাইপোর স্ত্রী কোনও মতে নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দেন৷ তার পরেই তৃণমূলের রাগ গিয়ে পড়ে প্রভাতবাবুর উপর৷
সিপিএম সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাতে তপসিখাতায় দলীয় অফিসে বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন কৃষক সভার প্রাক্তন ব্লক সম্পাদক প্রভাতবাবু৷ ৯টা নাগাদ আচমকাই তুষার আর এক সঙ্গীকে নিয়ে হাজির হয়৷ প্রভাতবাবুর অভিযোগ, ‘‘কেন আমার ভাইপোর স্ত্রী মনোনয়নপত্র জমা দিল সেই প্রশ্ন তুলে আমাকে পার্টি অফিস থেকে বের করে নিয়ে গুলি চালায় তুষার৷ গুলিটি আমার গা ঘেঁষে পার্টি অফিসের দেওয়ালে লাগে৷’’ সিপিএম নেতাদের অভিযোগ, এর পর বন্দুক উঁচিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যায় তুষার৷ খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে এলাকা থেকে গুলির খোল উদ্ধার করে পুলিশ৷
বুধবার সকালে এলাকায় যান বামফ্রন্টের জেলা নেতারা৷ সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃণালকান্তি রায় বলেন, ‘‘তৃণমূল ও পুলিশ যে মিলিত ভাবে কাজ করছে, তা এই সিভিক ভলান্টিয়ারের গুলি চালানোর ঘটনা থেকেই স্পষ্ট৷ আমরা অভিযুক্তের কড়া শাস্তি চাই৷’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালে সিভিক ভলান্টিয়ার হিসাবে নিযুক্ত হন তুষার৷ আলিপুরদুয়ার থানায় দীর্ঘ দিন কাজ করেছেন তিনি৷ বর্তমানে আলিপুরদুয়ারেই পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে তিনি কাজ করছেন৷ মঙ্গলবারের ঘটনার পর বিরোধীরা এই প্রশ্নও তুলতে শুরু করেছেন, বন্দুক কোথায় পেল ওই সিভিক ভলান্টিয়ার৷ তুষার অবশ্য বলছেন, ‘‘আমার কাছে বন্দুক নেই৷ তাই কাউকে গুলি ছোড়া তো দূরের কথা, মঙ্গলবার রাতে আমি তপসিখাতা চৌপথীতেই যাইনি৷ আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।’’ এ নিয়ে থানায় একটি পাল্টা অভিযোগও দায়ের করেছে তৃণমূল৷ দলের এলাকার বুথ সভাপতি জীমুত রায় বলেন, ‘‘সিপিএমের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরেই মঙ্গলবার রাতের ঘটনা৷ এর সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক নেই৷’’ আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার আভারু রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘গোটা ঘটনার তদন্ত চলছে৷’’