বাম জমানাতেও যা ছিল এখনও তাই। ছবিটা একই আছে কালিয়াচকের মোজমপুর ও নওদা যদুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে। দুই পঞ্চায়েতের মোট ৩৭টি আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে চলেছে শাসক তৃণমূল।
১৬ তারিখ মনোনয়ন প্রত্যাহার পর্বের পর সরকারিভাবে সেই জয়ের সিলমোহর পড়বে। শুএই দুই গ্রাম পঞ্চায়েতে থাকা কালিয়াচক ১ পঞ্চায়েত সমিতির তিনটি করে আসনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হচ্ছে শাসকদল। জালুয়াবাথাল, সুজাপুর ও কালিয়াচক ২ পঞ্চায়েতেরও মোট ৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের পথে তৃণমূল। এই আশঙ্কাই করেছিল বিরোধীরা।
বাম জমানায় কালিয়াচকের মোজমপুর ও নওদা যদুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতেও একই ‘হাল’ করে রাখত সিপিএম। সেসময়ে সিপিএমের তত্কালীন দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা আসাদুল্লা বিশ্বাসের কব্জায় ছিল ওই দুই পঞ্চায়েত এলাকা। জেলা পরিষদ ভোট কোনওরকমে হলেও কী পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতি কোনও ভোটই সেখানে হত না। জমানা বদলের পর সেই আসাদুল্লা বিশ্বাস নাম লেখায় তৃণমূলে। তাই, গত ২০১৩ সালের পঞ্চায়েতে সেই আসাদুল্লা বিশ্বাস-সহ বকুল শেখ, জাকির শেখদের হাত ধরে মোজমপুর পঞ্চায়েতের ১৪টি আসন ও নওদা যদুপুরের ২৩টি আসনে তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিল তৃণমূল।
একইভাবে জয় আসে মোজমপুরে থাকা পঞ্চায়েত সমিতির দুটি আসন ও নওদা যদুপুরের তিনটি আসনেও। আসাদুল্লাও পঞ্চায়েত সমিতির ৩৩ নম্বর আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতেন। গত পঞ্চায়েতে যে নেতাদের হাত ধরে তৃণমূল এমন ‘সাফল্য’ পেয়েছিল সেই নেতারা বেশিরভাগই বছরআগে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন জালনোট, আফিমের কারবার, খুন-সহ একাধিক মামলায়। এরমধ্যে বকুল ও জাকির শেখ এক বছরের বেশি সময় ধরে মালদহ জেলে বন্দি। বছর খানেক জেলে ছিল আসাদুল্লাও। তবে সম্প্রতি সে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছে। কিন্তু জেলায় ঢুকতে পারবে না বলে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
তবে, এই নেতারা জেলেই থাকুন আর বাইরে, তাদের সাঙ্গোপাঙ্গদের দাপটে ওই দুই পঞ্চায়েতে যে তাঁরা মনোনয়ন করতে পারবেন না, তা নিয়ে আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল বিরোধীরা। সুজাপুরের কংগ্রেস বিধায়ক ইশা খান চৌধুরী পুলিশের দারস্থও হয়েছিলেন। সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। মোজমপুর পঞ্চায়েতের ১৪টি আসন ও নওদা যদুপুর পঞ্চায়েতের ২৩টি আসনে তৃণমূল ছাড়া কোনও প্রার্থীর মনোনয়ন জমা পড়েনি। এই দুই পঞ্চায়েত এলাকার মোট ৬টি পঞ্চায়েত সমিতি আসনেও একই চিত্র। এ ছাড়া, সুজাপুর পঞ্চায়েতের ১৯ নম্বর আসন, জালুয়াবাথাল পঞ্চায়েতের ১১ ও ১২ নম্বর আসন এবং কালিয়াচক ২ পঞ্চায়েতের ১৫ নম্বর আসনেও তৃণমূল ছাড়া কেউ নেই। ফলে ব্লকে পঞ্চায়েতের মোট ৪১টি ও পঞ্চায়েত সমিতির ৬টি আসনে কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছে তৃণমূল।
জেলা কংগ্রেস সভানেত্রী মৌসম নূর বলেন, ‘‘এই এলাকায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা সন্ত্রাসের বাতাবরণ করে রেখেছে। সেকারণেই প্রার্থী দিতে পারা গেল না।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, ‘‘ওখানে সন্ত্রাসের জয় হয়েছে।’’ তৃণমূল জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন অবশ্য বলেন, ‘‘কংগ্রেস ও সিপিএমের পায়ের তলা থেকে মাটি যে সরে গিয়েছে এটা তারই প্রমাণ।’’