Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Rail Accident

Bikaner Express derailed: সত্যিই কি বেঁচে, না কি চোখের ভুল! অবিশ্বাস্য রকম ভাবে বেঁচে ফেরারা কী বললেন

কেরলবাসী নিদাল বলেন, ‘‘বুঝতে পারছিলাম না, এটা কী হল। কী ভাবে পৌঁছব গুয়াহাটি।’’ এক হাত দূরত্বে মৃত্যুকে দেখে তখনও বিহ্বল মধ্য কুড়ির তরুণ।

— নিজস্ব চিত্র।

পার্থপ্রতিম দাস
ময়নাগুড়ি শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২২ ১৬:৪৪
Share: Save:

বৃহস্পতিবারের বিভীষিকা এখনও ভীষণ জ্যান্ত ওঁদের কাছে। বিকেল পাঁচটা নাগাদ তিস্তার উপর রেলসেতু পেরিয়ে বিকানের এক্সপ্রেস গতি বাড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছে নিউ ময়নাগুড়ির দিকে, আচমকাই বিকট শব্দ। তার পরের কথা অনেকেই ভাল মতো মনে করতে পারছেন না। আবার কারও তা মনে পড়লেও, কথায় প্রকাশে অক্ষম। ওঁরা সকলেই অভিশপ্ত বিকানের এক্সপ্রেসের যাত্রী। কী করে প্রাণ বাঁচল, এখনও তা যেন নিজেদেরই বিশ্বাস হচ্ছে না নিদাল, সঙ্গীতা, সঞ্জীবদের। কিন্তু বেঁচে আছেন, এটাই বাস্তব।

নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গুয়াহাটি যাবেন বলে বিকানের এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন মধ্য কুড়ির নিদাল। সংরক্ষিত এস-৩ কামরায় নিজের আসনে গুছিয়ে বসে, জানালা দিয়ে উত্তরবঙ্গের শোভা দেখছিলেন। এরই মধ্যে এনজেপি ছাড়িয়ে বেলাকোবা, রানিনগর, জলপাইগুড়ি রোড পেরিয়ে তিস্তা সেতুতে ট্রেন। ঝম ঝম আওয়াজের সঙ্গে বিপুল তিস্তার রূপ দেখতে দেখতে তন্ময় নিদাল কি ভেবেছিলেন মিনিট কয়েকের মধ্যেই কী অপেক্ষা করছে তাঁদের জন্য?

হ্যাঁচকা ধাক্কায় দাঁড়িয়ে যায় ট্রেন। কিছু একটা হয়েছে টের পাওয়ার পরই নিদাল দরজা দিয়ে মাথা বাড়ান। দেখেন, তাঁর কামরার ঠিক আগের কামরাটি পর্যন্ত দুমড়েমুচড়ে গিয়েছে। সামনে তাকিয়ে বোঝেন, একের পর এক কামরার একই অবস্থা। বহু মানুষের আর্তনাদ কানে নিয়ে, দ্রুত ট্রেন থেকে নেমে দুর্ঘটনাগ্রস্ত কামরাগুলোর দিকে এগোন নিদাল। তাঁর কথায়, ‘‘ওই আধো অন্ধকারে অনেক যাত্রীর মৃতদেহ দেখলাম। কত জন গুরুতর আহত। রক্ত ঝরছে, বাচ্চাদের চিৎকার। স্থানীয়রা ছুটে এসে তত ক্ষণে উদ্ধারকাজ শুরু করে দিয়েছেন। আমার অসহায় লাগছিল। বুঝতে পারছিলাম না, এটা কী হল। কী ভাবে পৌঁছব গুয়াহাটি।’’ এক হাত দূরত্বে মৃত্যুকে দেখে তখনও বিহ্বল মধ্য কুড়ির তরুণ।
পরে অবশ্য বিশেষ ট্রেনের সাহায্যে নিদালকে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয়। গুয়াহাটি স্টেশনে নেমেও ঠিক বিশ্বাস করতে পারছেন না দক্ষিণের তরুণ, সত্যিই কি বেঁচে আছেন, না কি চোখের ভুল!

একই অবস্থা দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের আর এক যাত্রী সঙ্গীতারও। গুয়াহাটিগামী বিশেষ ট্রেনে চড়ে তিনিও পাড়ি দিয়েছেন বাড়ির দিকে। বলছেন, ‘‘এমন ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, যে মরে গিয়েছি না বেঁচে, বুঝতেই অনেকটা সময় পেরিয়ে গিয়েছিল। এত ভয় জীবনেও পাইনি। জানি না, কী ভাবে বাঁচলাম!’’
আগরা থেকে গুয়াহাটি যাচ্ছিলেন সন্দীপ কুমার। তিনিও দুর্ঘটনার প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠে বসেছেন বিশেষ ট্রেনে। বললেন, ‘‘বিকেল পাঁচটা থেকে দুর্ঘটনাস্থলেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিছুই মাথায় ঢুকছিল না। তার পর রেল থেকে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হল। তাতে উঠে পড়ি। যাত্রা পথে খাবারদাবার ও জলের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল।’’ কিন্তু দুর্ঘটনা যাঁদের প্রাণ কেড়ে নিল, তাঁদের পরিজনদের কথা ভেবে এখনও শিউরে উঠছেন। আর নিজেকেই প্রশ্ন করছেন, ‘‘এই একই অবস্থা তো আমারও হতে পারত!’’
বেঁচে ফেরা কি একেই বলে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rail Accident jalpaiguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE