Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

হাতি নেই, দোলের সময় কাঁধে সওয়ার রাজার গোপাল

জলপাইগুড়ির রাজবাড়ি বৈকুন্ঠপুরের রাজপরিবার নামেই পরিচিত। এই রাজপরিবারের দোলযাত্রার কথা রয়েছে ইতিহাসের নথিতে। উৎসবও শুধু রাজপরিবারে সীমাবন্ধ নেই, আশেপাশের বাসিন্দারাও এখন জলপাইগুড়ির রাজবাড়ির উৎসবে সামিল।

আগাছায় ঢেকেছে জলপাইগুড়ির রাজবাড়ি। নিজস্ব চিত্র

আগাছায় ঢেকেছে জলপাইগুড়ির রাজবাড়ি। নিজস্ব চিত্র

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:৩৩
Share: Save:

বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গল থেকে ওষধি গাছগাছালি সংগ্রহ করতে এসেছিলেন জোসেফ ডালটন হুকার। কিন্তু হাতি ছাড়া তো জঙ্গলের ভেতরে ঢোকা সম্ভব নয়। এ দিকে হুকার সাহেবকে হাতি দিতে রাজি নন রাজা। সাহেবের প্রতিনিধিকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হল, দোল উৎসবে রাজার গোপাল হাতি চেপে ‘সওয়ারি’তে যাবেন। তাই হাতি দেওয়া যাবে না সাহেবকে।

হোলির দিন সাহেব দেখলেন রাজবাড়ি থেকে তিনটি হাতি নিয়ে শোভাযাত্রা বের হলো। প্রথম হাতিতে রাজবাড়ির কৃষ্ণ বিগ্রহ। সালটা ১৮৪৯। ঘোর ব্রিটিশ রাজেও বিলেত থেকে আসা সাহেবকে মুখের ওপর না বলে দিতে পেরেছিলেন জলপাইগুড়ি রাজবাড়ির কর্তারা। সেই রাজ্যপাট এখন নেই, জাঁকজমকও নেই। নেই হাতিও। তবে রীতি মেনেই রাজবাড়ি থেকে গোপাল বিগ্রহ বের হয় দোলের দিন। আর উৎসবও শুধু রাজপরিবারে সীমাবন্ধ নেই, আশেপাশের বাসিন্দারাও এখন জলপাইগুড়ির রাজবাড়ির উৎসবে সামিল। তাঁরাই দোলনায় বসিয়ে সওয়ারিতে নিয়ে যান ‘রাজার গোপাল’কে। জলপাইগুড়ি বৈকুন্ঠপুরের রাজ ঐতিহ্য বয়ে চলেছে বাসিন্দাদের কাঁধে চেপে।

জলপাইগুড়ির রাজবাড়ি বৈকুন্ঠপুরের রাজপরিবার নামেই পরিচিত। এই রাজপরিবারের দোলযাত্রার কথা রয়েছে ইতিহাসের নথিতে। রাজা যাঁকে হাতি দিতে অস্বীকার করেছিলেন সেই হুকার সাহেব পরবর্তী কালে তাঁর অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘হিমালয়া জার্নাল’ নামে একটি বই লিখেছিলেন। তাতে হাতি না পাওয়ার ঘটনার কথাও লিখেছিলেন তিনি। হুকার সাহেবের সেই বই অনুবাদ করা হয়েছে বাংলা ভাষাতেও। রাজ পরিবারের পুরোহিত জানালেন, পূর্ণিমায় রাজপরিবারের কুলদেবতা বৈকুণ্ঠনাথ এবং গোপাল ঠাকুরের বিগ্রহকে সিংহাসন থেকে নামিয়ে দোলনায় বসানো হয়। পরদিন অর্থাৎ প্রতিপদ তিথিতে সওয়ারি হন তাঁরা। দুই দেবতাকে দোলনায় বসিয়ে বিভিন্ন এলাকা ঘোরানো হয়। তারপর বিগ্রহকে নিয়ে যাওয়া হয় রাজবাড়ির পুকুরে। বংশ পরম্পরায় রাজ পরিবারের পুজো করছেন শিবু ঘোষাল। বলেন, ‘‘অষ্টম দিনে দুই দেবতাকে ফের সিংহাসনে বসানো হয়। এখন আশেপাশের বাসিন্দারা সওয়ারিতে নিয়ে যান। তাঁদের সাহায্য ছাড়া এই উৎসব চালানো সম্ভব নয়।’’

এলাকার বাসিন্দা মালতি রায়, জ্যোৎস্না ঘোষ, সুমি দত্তরা প্রতিবারই দোল পূর্ণিমায় সকাল সকাল রাজ মন্দিরে চলে আসেন। পুজোর আচার থেকে পালকি বহন সবই করেন তাঁরা। আগে রাজবাড়ি থেকে সোজা পুকুর পর্যন্ত যেত বিগ্রহ। এখন রাজবাড়ি পাড়ার অলিগলিতেও ঘোরানো হয় রাজার গোপালকে। এলাকার এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘সকলেই তো চান গোপালের সওয়ারি যাক তাঁদের বাড়ির সামনে দিয়ে। তাই একটু পাড়ায় ঘুরিয়ে ফের পৌঁছে দেওয়া হয় নাটমন্দিরে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE