Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
চাকুলিয়া

সিপিএম নেতা বাবাকে দলে টানতে চান তৃণমূলের প্রার্থী

কন্যা আলেমা নুরি তৃণমূলের নেত্রী। উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি। পিতা লাল মহম্মদ সিপিএমের দাপুটে নেতা। তিনি গোয়ালপোখর-১ ব্লকের পাঞ্জিপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান।

গৌর আচার্য
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৬ ০১:৫৬
Share: Save:

কন্যা আলেমা নুরি তৃণমূলের নেত্রী। উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি। পিতা লাল মহম্মদ সিপিএমের দাপুটে নেতা। তিনি গোয়ালপোখর-১ ব্লকের পাঞ্জিপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান।

আলেমাও আগে সিপিএমেই ছিলেন। শাসক দলে যোগ দেওযার পরে তিনি জেলা পরিষদের দায়িত্ব পান। এ বার আরও বড় দায়িত্ব কাঁধে চেপেছে। চাকুলিয়া কেন্দ্রে তিনি তৃণমূলের প্রার্থী।

চাকুলিয়া কিন্তু সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি বলেই পরিচিত। তাই আলেমা এখন বাবার দ্বারস্থ হয়েছেন। তিনি চান বাবাকে তৃণমূলে টানতে। লাল মহম্মদ পাঞ্জিপাড়া লোকাল কমিটিরও সম্পাদক। সঙ্গীদের নিয়ে তাঁকে দলে টানতে তাই মরিয়া তৃণমূল।

লাল মহম্মদ ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত জেলা পরিষদের সিপিএমের সদস্যও ছিলেন। ২০১১ সালে গোয়ালপোখর বিধানসভা ভেঙে চাকুলিয়া বিধানসভা গঠিত হয়। বর্তমানে ভৌগলিক কারণে চাকুলিয়া বিধানসভাটি গোয়ালপোখর-২ ব্লকের অন্তর্ভুক্ত হলেও ২০১১ সাল পর্যন্ত সেখানে গোয়ালপোখর-১ ব্লকের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী সমর্থকেরা নির্বাচনের প্রচার থেকে দলের সমস্ত কাজ কর্ম পরিচালনা করেছেন। সে দিক থেকে পাঞ্জিপাড়া পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান লালবাবুর সেখানে এখনও যথেষ্ট রাজনৈতিক প্রভাব ও অনুগামী রয়েছেন বলে সিপিএমের অন্দরের খবর।

সে কথা মাথায় রেখেই খোদ তৃণমূল সাংসদ তথা দলের জেলা পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারীও কিছু দিন আগে সিপিএমের দাপুটে নেতা বলে পরিচিত লালবাবুকে শাসক দলে যোগ দেওয়ার অনুরোধ করেছেন।

লালবাবুর বাড়ি পাঞ্জিপাড়ার তেলিয়াপুকুর এলাকায়। প্রায় তিন বছর আগে প্রতিবেশী মাজহারুল হক নামে এক যুবকের সঙ্গে তিনি তাঁর মেয়েকে বিয়ে দেন। বাবার নির্দেশেই ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদের পাঞ্জিপাড়া আসন থেকে সিপিএমের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আলেমাদেবী জয় পান। সেই সময় আলেমাদেবীর হয়ে নির্বাচনী প্রচারের প্রধান দায়িত্ব সামলেছেন এই লালবাবুই।

আলেমাদেবী বলেন, ‘‘বাবার আশীর্বাদ আমার মাথায় না থাকলে বামেদের দখলে থাকা চাকুলিয়া বিধানসভা কেন্দ্রে আমার পক্ষে জয় পাওয়া কঠিন হবে। বাবা আমার অভিভাবকের পাশাপাশি রাজনৈতিক গুরুও। সব বাবারাই চান, মেয়েরা অনেক উন্নতি করুক। তাই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে প্রার্থী করার পর থেকেই গত পাঁচ দিন ধরে বাবাকে আমি তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে চলেছি।’’ আলেমার দাবি, ‘‘বাবা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন।’’

আলেমাদেবীর স্বামী মাজহারুলবাবুও ইতিমধ্যেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তিনিও এক সময়ে পাঞ্জিপাড়া এলাকায় সিপিএমের নেতা বলে পরিচিত ছিলেন। স্ত্রী জেলা পরিষদের সভাধিপতি হওয়ার পরে তিনিও তৃণমূলে যোগ দিয়ে দলের গোয়ালপোখর-১ ব্লকের সহ সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘শ্বশুরমশায় তৃণমূলে যোগ দিলে চাকুলিয়া বিধানসভা এলাকার তাঁর অনুগামী সিপিএমের কয়েক হাজার নেতা ও কর্মী সহ তাঁদের পরিবার ও আত্মীয়রা তৃণমূলে যোগ দেবেন। পাঞ্জিপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতও তৃণমূলের দখলে চলে আসবে। তাতেই আমার স্ত্রীর জয় পাওয়া সহজ হবে।’’

শুভেন্দুবাবুর দাবি, ‘‘বামেদের দখলে থাকা চাকুলিয়া বিধানসভা এলাকার সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে তাঁর মেয়েকে বিধানসভায় পাঠানোর জন্য আমি লালবাবুকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার অনুরোধ করেছি। তাঁর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা আলেমাকে জেতাতে সাহায্য করবে।’’ শুভেন্দুবাবুরও দাবি, ‘‘কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি অনুগামীদের নিয়ে তৃণমূলে যোগ দেবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।’’

খোদ লালবাবুও তৃণমূলে যোগ দেওয়ার প্রসঙ্গ উড়িয়ে দেননি। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলে যোগ দেওয়া বা না দেওয়ার ব্যাপারে আমি এখনই কিছু বলছি না। কয়েক দিনের মধ্যেই সব স্পষ্ট হবে।’’

২০১১ সালে গোয়ালপোখর বিধানসভা ভেঙে চাকুলিয়া বিধানসভা গঠিত হয়। সেই থেকে ওই বিধানসভা দখলে রেখেছে বামফ্রন্টের শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক। তার আগে ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কংগ্রেস গোয়ালপোখর বিধানসভা দখলে রাখলেও ওই তিন বছর বাদ দিলে গত তিন দশক ধরে ফরওয়ার্ড ব্লক ওই বিধানসভার ক্ষমতা ধরে রেখেছে। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কংগ্রেসের ৪ জন ও বামেদের ৬ জন জেলা পরিষদ সদস্যকে নিয়ে আলেমা তৃণমূলে যোগ দেন। ফলে বামেদের কাছ থেকে জেলা পরিষদের ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

chakulia alema nuri support gaur acharya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE