Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সাবেক ছিটের বিচ্ছিন্ন পরিবারকে মেলাতে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠির ভাবনা

সাবেক ভারতীয় ছিটমহলের বাসিন্দা স্ত্রী ও মেয়ে এখন মেখলিগঞ্জের অস্থায়ী শিবিরে রয়েছেন। কিন্তু আইনি জটিলতায় এখনও বাংলাদেশেই রয়েছেন স্বামী বলরাম বর্মন।

বলরাম বর্মন

বলরাম বর্মন

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৬ ০২:১০
Share: Save:

সাবেক ভারতীয় ছিটমহলের বাসিন্দা স্ত্রী ও মেয়ে এখন মেখলিগঞ্জের অস্থায়ী শিবিরে রয়েছেন। কিন্তু আইনি জটিলতায় এখনও বাংলাদেশেই রয়েছেন স্বামী বলরাম বর্মন।

ছিটমহল বিনিময়ের পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া ওই পরিবারের সদস্যদের মেলাতে উদ্যোগী হয়েছে ভারতীয় ছিটমহল ইউনাইটেড কাউন্সিল। ওই ব্যাপারে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ও দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। ওই সংগঠন নেতৃত্বের অভিযোগ, গত ফেব্রুয়ারি মাসে সমস্যার কথা কোচবিহার জেলা প্রশাসনকে জানান হয়। বলরামবাবুর স্ত্রী স্বপ্নারানি রায় (বর্মন) স্বামীকে দেশে নিজেদের কাছে ফেরানোর জন্য লিখিত আবেদন জানান। কিন্তু এত দিনেও আখেরে কোনও কাজ হয়নি। তাই সাংগঠনিক ভাবে বলরামবাবুকে এ দেশে ফেরানোর বন্দোবস্ত করতে মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, ২০১১ সালের তালিকার ভিত্তিতে ঠিকানা বদলে আগ্রহীদের তালিকা তৈরি করা হয়। ওই তালিকায় কারও নাম না থাকলে আপাতত তাঁদের কিছু করার নেই। কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেছেন, “পুরো বিষয়টি বিদেশ মন্ত্রকে জানানো হয়েছে। নামের একটি তালিকাও পাঠানো হয়েছে।” কোচবিহারের সাংসদ রেণুকা সিংহ বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। লোকসভার আগামী অধিবেশনেই সমস্যা মেটানোর ব্যাপারে সরব হতে চাইছি।”

প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০১১ সালের যৌথ জনগণনার তালিকা অনুযায়ী সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের ঠিকানা বদলানোর ব্যাপারে মতামত নেওয়া হয়। সেই ভিত্তিতে গত বছর জুলাই মাসে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় চুক্তি কার্যকর হওয়ার পরে সাবেক ভারতীয় ছিটমহলের ৯৯৫ জন বাসিন্দা এদেশের নাগরিকত্ব নিতে আগ্রহের কথা জানান। ওই তালিকায় নাম থাকায় গত নভেম্বর মাসে সাবেক ছিটমহল ১১২ বাঁশকাটার বাসিন্দা স্বপ্নাদেবী ও তাঁর নাবালিকা মেয়ে রাধা অন্যদের সঙ্গে কোচবিহার জেলায় আসেন। মেখলিগঞ্জের অস্থায়ী শিবিরে তারপর থেকেই মা ও মেয়ে রয়েছেন। কিন্তু ওই তালিকায় নাম না থাকায় বলরামবাবু আসতে পারছেন না। ভারতীয় ছিটমহল ইউনাইটেড কাউন্সিলের উপদেষ্টা দেবব্রত চাকি বলেন, “আইনি জটিলতার জেরে ওই পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। গোটা বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে বলরামবাবুকে ফেরানোর ব্যবস্থা করা দরকার। পুরো বিষয়টি ইতিমধ্যে প্রশাসন, কোচবিহারের সাংসদের নজরেও আনা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কাছেও আর্জি জানাব। এমন সমস্যায় অন্য কোন আগ্রহী বাসিন্দা থাকলে তাঁদের বিষয়ও দেখা দরকার।”

এই পরিস্থিতিতে বর্তমান বাংলাদেশ ভূখন্ডে থাকা স্বামী বলরামবাবুকে নিয়ে উদ্বেগে দিন কাটছে স্বপ্নারানিদেবীর। তিনি বলেন, “২০১১ সালে স্বামী বাড়িতে না থাকায় তালিকায় ওঁর নাম ওঠেনি। আমরা ভেবেছিলাম পরে সমস্যা হবে না। তাই মেয়েকে নিয়ে মেখলিগঞ্জের শিবিরে চলে এসেছি। কিন্তু এত দিনেও সমস্যা না মেটায় চিন্তায় পড়েছি। ওখানে কী করছে, কী ভাবে আছে, তা নিয়ে উদ্বেগ কাটছে না।” অভিযোগ, মতামত দিয়েও সাবেক ছিটমহলের অন্তত ৭১ জন বাসিন্দা শেষ মূহূর্তে বাংলাদেশ ভূখন্ড থেকে এদেশে আসেননি। তাঁদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে সম্প্রতি কেন্দ্রের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরেও যায়। কিন্তু পরিজনের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া আগ্রহীদের ফেরাতে সে ভাবে কোনও উদ্যোগ নেই। ভারতীয় ছিটমহল ইউনাইটেড কাউন্সিলের এক কর্তা জানান, ‘‘পরবর্তী জয়েন্ট বাউন্ডারি ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকেও আমরা ওই সমস্যা সমাধানে আলোচনা চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CM camp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE