Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Dengue

জানি না কী ভাবে সংসার চলবে এখন

ছেলেটা মাধ্যমিক দেবে। ঘরের মধ্যে একা বসে থাকলেই চোখের জল বাগ মানে না। আমরা যে এলাকাটায় থাকি সেটা শিলিগুড়ি কুমোরটুলি লাগোয়া বস্তি এলাকা। অাদর্শনগর কলোনি। বাড়ির পাশেই একটা নিচু ডোবা মতো জায়গায় জল জমে থাকে।

শিল্পী বিশ্বাস

শিল্পী বিশ্বাস

শিল্পী বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৪২
Share: Save:

ঘুমের ঘোরেই চমকে উঠি। ডেঙ্গি, জ্বরের আতঙ্কে। জ্বর তো অনেকেরই হয়। তাই বলে জ্বরে এ ভাবে মানুষটাকে হারাতে হবে। মনে করতেই চোখের জল আটকে রাখতে পারি না। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে কাঁদতে বসি। সংসারটা কী ভাবে চালাব। আমি তো কোনও দিন কাজকর্ম করতাম না। আমার স্বামীই সব করতেন। সামনে মহানন্দা সেতু লগোয়া ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে গাড়ির সওয়ারি ধরে দিতেন। তাতে কমিশন মিলত। তা দিয়েই সংসার চালাতেন। সব তিনিই দেখতেন, তাই অভাব হলেও কখনও ভয় পাইনি। ডেঙ্গিতে ওকে হারিয়ে এখন সেই ভয়টাই দিনে-রাতে আমাকে পেয়ে বসেছে।

ছেলেটা মাধ্যমিক দেবে। ঘরের মধ্যে একা বসে থাকলেই চোখের জল বাগ মানে না। আমরা যে এলাকাটায় থাকি সেটা শিলিগুড়ি কুমোরটুলি লাগোয়া বস্তি এলাকা। অাদর্শনগর কলোনি। বাড়ির পাশেই একটা নিচু ডোবা মতো জায়গায় জল জমে থাকে। সেটা থেকেই নাকি এলাকায় মশা ছড়াচ্ছে। ঘরের জানলার পাশেই। বারবার এলাকার লোকেরা জানালেও জল সরাতে কেউ ব্যবস্থা নেননি।

হঠাৎ করে ও জ্বরে পড়ল। ও কেবলই বলছে শরীর খুব খারাপ লাগছে। চারি দিকে জ্বর হচ্ছে শুনে ভয়ে ২৩ অগস্ট শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করাই। শয্যা নেই। সিঁড়ির ধারে জায়গা মেলে। স্যালাইন দেওয়া নিয়ে তর্ক হয়। আমাদের মতো গরিব পরিবারের লোকেরা ভরসা করে হাসপাতালে যাই। সেখানে এই অবস্থা দেখে ভয় লাগে। পরীক্ষা করতে রক্ত নিলেও রিপোর্ট দেয়নি। আমাদের মতো গরিব লোকেরা কোথায় যাবে? ২৫ অগস্ট নার্সরা জানান, শরীর খুবই খারাপ। আর বিকেলে চিকিৎসক দেখে বলেন, ‘অবস্থা ভাল নয়। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে রেফার করে দিলাম।’’

সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ হেরিটেজ নার্সিংহোমে নিয়ে যাই। রাত ১২টা নাগাদ নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ জানাল, অবস্থা ভাল নয়। কিডনি, যকৃৎ আক্রান্ত হয়েছে। এনএসওয়ান পরীক্ষায় শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। আনন্দলোক নার্সিংহোমে নিন। আমাদের দিন-আনি দিন-খাই অবস্থা। ওই নার্সিংহোমে অনেক খরচ হয়। কী করে নেব? তবু বিদ্যাচক্র ক্লাবে ওর বন্ধুরা এগিয়ে এল। ২৫ হাজার টাকা দিল। গভীর রাতে আনন্দলোকে নিয়ে গেলাম। সেখানে শনিবার দিনটা ছিল। আইসিইউতে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়। এক দিনে ৩৬ হাজার টাকা বিল হয়েছে। বাইরে থেকে প্লেটলেট কিনতে ১২০০, ১৫০০ টাকা লাগছে। আর টাকা দিতে পারব না-ভেবে চোখ ছলছল করত। কী করব, কোথায় যাব? পরিচিতদের কয়েকজনের কথায় রবিবার শান্তি নার্সিংহোমে নিয়ে যাই স্বামীকে। সেখানেই মারা যান।বাড়িতে মেয়র, কাউন্সিলররা এলেন। বাড়ির পাশে নিচু জায়গাটায় জমে থাকা জল বার করা হল। সাহায্যের আশ্বাস দিলেন। ছেলেটা এ বছর মাধ্যমিক দেবে। দিন চলবে কী করে? বাড়িতে এখন মিষ্টির দোকানের প্যাকেট তৈরি করছি।

(মিঠু বিশ্বাসের স্ত্রী)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE