Advertisement
E-Paper

পাঁচ জনকে হারানোর শোকে স্তব্ধ হলদিবাড়ি

রবিবার দুপুরে পড়ে গিয়ে পায়ে আঘাত পেয়েছিলেন স্বদেশ রায়ের স্ত্রী। দুপুরে কোচবিহার থেকে ভাই মুকেশকে স্ত্রীর পায়ের এক্স-রে করিয়ে ডাক্তার দেখানোর কথা বলেন তিনি। রাতে দুর্ঘটনা ঘটার আগের মুহূর্তেও ভাইয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। তারপর থেকে আর মোবাইলে পাওয়া যায়নি তাঁকে। দুর্ঘটনায় স্বদেশ রায়ের নিহত হওয়ার খবর রাতেই তাঁর বাড়িতে পৌঁছয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৫ ০১:৩৯

রবিবার দুপুরে পড়ে গিয়ে পায়ে আঘাত পেয়েছিলেন স্বদেশ রায়ের স্ত্রী। দুপুরে কোচবিহার থেকে ভাই মুকেশকে স্ত্রীর পায়ের এক্স-রে করিয়ে ডাক্তার দেখানোর কথা বলেন তিনি। রাতে দুর্ঘটনা ঘটার আগের মুহূর্তেও ভাইয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। তারপর থেকে আর মোবাইলে পাওয়া যায়নি তাঁকে। দুর্ঘটনায় স্বদেশ রায়ের নিহত হওয়ার খবর রাতেই তাঁর বাড়িতে পৌঁছয়। তারপর থেকেই অন্ধকার নেমেছে তাঁর পরিবারে। সোমবার কাঁদতে কাঁদতেই এ কথা জানান তার ছোটভাই মুকেশ। সকালে স্বদেশের বাড়িতে যান বিধায়ক অর্ঘ্য রায়প্রধানের স্ত্রী পূরবী রায়প্রধান। তিনি বলেন, “এত কষ্ট করে সংসার গড়ে তুলেছিল ছেলেটা, এখন সব শেষ হয়ে গেল।”

একা স্বদেশ নয়, কষ্ট করে সংসারের হাল ধরেছিলেন সুশান্ত, ভুদেব, সুবীর আর মজিবুল। রবিবারে দুর্ঘটনায় এই পাঁচজনকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ হলদিবাড়ি। সোমবার মৃতদেহগুলি হলদিবাড়িতে আসলে সমস্ত রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

রবিবার দলের একটি বৈঠকে যোগ দিতে হলদিবাড়ি থেকে কোচবিহারে গিয়েছিলেন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের আট জন কর্মী। সভা শেষে ফেরার পথে জলপাইগুড়ির বালাপাড়ার কাছে একটি মোটরসাইকেল আরোহীকে বাঁচাতে গিয়ে সরাসরি একটি ট্রাকের সঙ্গে তাদের গাড়িটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। দুর্ঘটনায় গাড়িটির চালক সমেত নয় জন যাত্রী গুরুতর আহত হন। তাদের জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে আনা হলে পাঁচ জনকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। সকলেই হলদিবাড়ির বাসিন্দা। এই পাঁচ জনের মধ্যে একজন সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজ করেন। তিনি বাদে বাকি সবাই ছোট ব্যবসায়ী। প্রায় সকলেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি।

হলদিবাড়ির তৃণমূল যুব কংগ্রেস নেতা মৃত স্বদেশ রায় একটি পোলট্রি তৈরি করেছিলেন। এই ফার্মটিই ছিল তাঁর সম্বল। তিন ভায়ের মধ্যে বড় স্বদেশ। তাদের বাবা নেই। হলদিবাড়ির পাঠানপাড়ায় বাড়িতে মা প্রমীলা রায়, স্ত্রী বাসন্তী রায় এবং দুই ছেলে সাত বছরের নীলেশ এবং তিন বছরের দীপসাগরকে নিয়ে ছোট পরিবার। ভায়েরা তাদের পরিবার নিয়ে কাছেই থাকেন।

চিলাহাটি মোরে একটি সারের দোকান করেছিলেন হেমকুমারীর সিপাইপাড়ার বাসিন্দা মৃত ভূদেব রায়। খুব ভাল বেচাকেনা ছিল না। সংসার চালাতে একটি ধানকলের মিলে কাজ নিয়েছিল তিনি। তার মা নেই। বাড়িতে স্ত্রী জয়ন্তী রায়, দুই মেয়ে চার বছরের ঋতিকা এবং দেড় বছরের স্বস্তিকা আছে। এছাড়া বাবা হরিকিশোর এবং একভাই আছে। এখন দুই মেয়েকে নিয়ে কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না তাঁর স্ত্রী।

হলদিবাড়ি থানার বটেরডাঙা গ্রামের বাসিন্দা মৃত সুবীর রায় বটেরডাঙা বাজারে একটা মাইকের দোকান করেছিলেন। দু’বছর আগে তিনি হলদিবাড়ি থানায় সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজ পান। বাড়িতে স্ত্রী রুমা রায় এবং তার দেড় বছরের একটা ছেলে আছে। বাবা পাষান রায় চাষের কাজ করেন। দু’বছর আগে সুবীরের দাদা হৃদরোগে মারা যান। বক্সিগঞ্জ গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান রাজেন্দ্রনাথ রায় বলেন, “সুবীরের স্ত্রীকে চাকরি দেওয়া হলে সংসারটা বেঁচে যাবে।”

পারমেখলিগঞ্জের বাসিন্দা সুশান্ত নন্দী ডেকরেটরের কাজ করতেন। পারমেখলিগঞ্জের বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাবের সম্পাদক ছিলেন তিনি। মাত্র দু’মাস আগে তার বিয়ে হয়। বাবা, মা দুইভাই মিলে যৌথ পরিবার ছিল। তার স্ত্রী দেবাঞ্জলির কাছে এখন সবকিছু অন্ধকার।

নিজের গাড়ি নিজেই চালাতেন দুর্ঘটনায় মৃত গাড়ির চালক মজিবুল হল সরকার। এক সময় তাদের পরিবারের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। আট বছর আগে একটি গাড়ি কেনেন। গাড়িটি নিজেই চালাতেন। পরিবারের অবস্থা ফেরে। তার স্ত্রী রহিমা খাতুন ছাড়াও তার আট বছরের মেয়ে মুস্কান, ছয় বছরের মেয়ে মেহের এবং ২ বছরের ছেলে রাজপীর আছে। যে কষ্টের মধ্যে থেকে সংসারটি দাঁড়িয়েছিল এখন রহিমা তার দুই মেয়ে এক ছেলেকে নিয়ে যে তারা সেই তিমিরেই ফিরে গেলেন।

এ দিন হলদিবাড়িতে দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারে দেখা করেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। প্রতিটি পরিবারকে অর্থ সাহায্য করেন। তিনি বলেন, “মৃতরা প্রত্যেকে দলের সদস্য ছিলেন। দল তাদের পরিবারের পাশে সবসময় থাকবে।”

Haldibari Five people cooch behar Gautam Deb North Bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy