Advertisement
E-Paper

লাইন ধরে দুষ্কৃতী ধাওয়া ছাত্রীর

হাতে ধরা ছিল ব্যাগ। সেই ব্যাগ যে কেউ ছিনিয়ে নিয়ে চলে যেতে পারে, কল্পনাও করেননি। কিন্তু তাই যখন হল, সাত-পাঁচ না ভেবে কলকাতার যোগমায়া দেবী কলেজের প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছিনতাইবাজের পিছু ধাওয়া করেন। জুতো পর্যন্ত পায়ে গলানোর সময় পাননি, খালি পায়েই লাফ দেন ট্রেন থেকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৮ ০৪:২১
সাহসী: ছিনতাই হওয়া ব্যাগ মেলেনি। বাবার সঙ্গে থানার পথে মৈত্রেয়ী। ছবি: তথাগত সেন শর্মা

সাহসী: ছিনতাই হওয়া ব্যাগ মেলেনি। বাবার সঙ্গে থানার পথে মৈত্রেয়ী। ছবি: তথাগত সেন শর্মা

রাত এগারোটা। ট্রেন সবে স্টেশনে দাঁড়িয়েছে। সংরক্ষিত কামরায় ছিলেন কলেজের ছাত্রী মৈত্রেয়ী ঝা। হাতে ধরা ছিল ব্যাগ। সেই ব্যাগ যে কেউ ছিনিয়ে নিয়ে চলে যেতে পারে, কল্পনাও করেননি। কিন্তু তাই যখন হল, সাত-পাঁচ না ভেবে কলকাতার যোগমায়া দেবী কলেজের প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছিনতাইবাজের পিছু ধাওয়া করেন। জুতো পর্যন্ত পায়ে গলানোর সময় পাননি, খালি পায়েই লাফ দেন ট্রেন থেকে। আলো-আঁধারি রেললাইনের পাশের পাথরের উপর দিয়ে আগে হাতে ধারালো অস্ত্র নিয়ে দৌড়ে চলেছে অভিযুক্ত, পিছনে মৈত্রেয়ী। ভয়ও পায়নি, খালি পা পাথরে রক্তাক্ত। তবুও থামেননি।

এ দিকে মেয়েকে লাফ দিতে দেখে মৈত্রেয়ীর বাবাও ট্রেন থেকে লাফিয়ে নামেন, জুড়ে দেন চিত্কার। বিপদ বুঝে দুষ্কৃতী ট্রেনের নীচ দিয়ে পার হয়ে প্ল্যাটফর্মে উঠে পড়ে, একই ভাবে মেয়েটিও ট্রেনের নীচ দিয়ে ঢুকে প্ল্যাটফর্মে উঠতেই ট্রেন চলতে শুরু করে। মায়ের চিত্কার-চেঁচামেচিতে যাত্রীরা অবশ্য চেন টেনে ট্রেন থামান। এরই মধ্যে দৌড়ে প্ল্যাটফর্মের ও পাশে থাকা মালগাড়ি টপকে রাতের অন্ধকারে পগারপার হয়ে যায় ছিনতাইবাজ। বুধবার রাতে এমনই রোমহর্ষক ঘটনা ডাউন মালদহ-হাওড়া ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনের সংরক্ষিত কামরায়। মালদহের খালতিপুর স্টেশনে ওই কাণ্ড ঘটে যাওয়ার পর ওই ট্রেনেই টহলরত পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। এ নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়ায়।

রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ মালদহ স্টেশনে ট্রেন থামলে মৈত্রেয়ীর বাবা মালদহ জিআরপিতে পুরো ঘটনা জানিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে রেল পুলিশ। কিন্তু এই ঘটনায় রেলের যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

ইংরেজবাজারের বিধানপল্লির বাসিন্দা মৈত্রেয়ী। বাবা তুষারকান্তি ঝা শান্তা দেব্যা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। মৈত্রেয়ী রসায়নে অনার্স নিয়ে কলকাতায় পড়ায় মেয়েকে নিয়ে মা এখন কলকাতাতেই থাকেন। বাড়িতে লোকজন আসবে বলে তুষারবাবু স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে বুধবার হাওড়া-মালদহ ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসে বাড়ি ফিরছিলেন। ডি-থ্রি সংরক্ষিত কামরায় তাঁদের আসন নম্বর ছিল ৫৭, ৫৮ ও ৫৯। রাতে ট্রেন থেকে নেমে রীতিমতো বিধ্বস্ত মৈত্রেয়ী জানালো, ট্রেনে খাগড়া স্টেশন অবধি প্রচণ্ড ভিড় ছিল, ফরাক্কা স্টেশনে অনেক যাত্রীই নেমে যায়। সে সময় সে তাঁদেরই আসনের পাশে ফাঁকা থাকা একটি জানালার ধারে বসে। হাতে ছিল ছোট একটি ব্যাগ। সেই ব্যাগে ছিল দু’টি দামি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল সেট, দু’টি চশমা, কিছু টাকা ও অন্য প্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী। এরপর খালতিপুরে কয়েকজন নামতেই আচমকা হলুদ জামা, গলায় সাদা স্কার্ফ ও জিনসের প্যান্ট পরা এক যুবক সেই কোচে উঠে তাঁর হাতে ধরে থাকা ব্যাগটি রীতিমতো ছিনতাই করে নিয়ে ট্রেন থেকে লাফ দেয়। মৈত্রেয়ী বলেন, ‘‘ট্রেনে পুলিশ প্রহরা থাকা সত্ত্বেও ব্যাগ ছিনতাই হবে। তাই জেদ চেপে যাওয়ায় ছিনতাইবাজের পিছু নিয়েছিলাম।’’

বৃহস্পতিবার বাড়ি গিয়ে দেখা গেল এ দিনও সে রীতিমতো বিধ্বস্ত। সকালে হাসপাতালে গিয়ে প্রাথমিক চিকিত্সা করে এসেছে। মা জয়শ্রীদেবী বলেন, ‘‘কাল রাতে ঘুমোতে পারেনি, ঘরের আলো বন্ধ করতে দেয়নি।’’ তুষারবাবু বলেন, ‘‘মেয়ে খুনও হয়ে যেতে পারত। পুলিশ অনেক পরে সেখানে আসে।’’ পূর্ব রেলের মালদহ ডিভিশনের ডিআরএম তনু চন্দ্রা জানিয়েছেন, রেলের নিরাপত্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Thief Phone Thief Howrah-Malda Town Intercity Express Train Maitrayee Jha মৈত্রেয়ী ঝা Reserved Coach
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy