পানিট্যাঙ্কিতে এই চা বাগানের জমিই বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
যে জমি দখল করে পানিট্যাঙ্কিতে প্লট বিক্রি হচ্ছে, তার পুরোটাই সরকারি লিজে থাকা চা বাগানের জমি। আগামী সোমবার এ বিষয়ে বিশদ তথ্য রিপোর্ট আকারে জেলাশাসকের দফতরে জমা পড়তে চলেছে। এরপরে জমিকে দখলমুক্ত করা এবং দখলকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ শুধু সময়ের অপেক্ষা বলে প্রশাসনের আধিকারিকদের একাংশের দাবি।
এ দিকে, শুক্রবার থেকে জমিতে মাপজোখ শুরু হওয়ার পরেই জমি কিনতে অগ্রিম টাকা দেওয়া ব্যবসায়ীরা টাকা ফেরতের দাবি তুলেছেন। এলাকার এক তৃণমূল নেতার বাড়িতে গত শুক্রবার বিকেলে বিক্ষোভও দেখান কয়েকজন ব্যবসায়ী। ওই তৃণমূল নেতাকে অবশ্য এ দিনও পানিট্যাঙ্কি বাজারে দেখা যায়নি। মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও সাড়া মেলেনি।
প্রশাসনিক স্তরে কী পদক্ষেপ হতে পারে? সূত্রের খবর, রিপোর্ট জমা পড়ার পরে সরকারি লিজের জমি দখল করার অভিযোগে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের হবে। খুঁটি পুতে, টিনের বেড়া দিয়ে যে প্লট ভাগ করা হয়েছে, যত নির্মাণ হয়েছে সব সরিয়ে দেওয়া হবে ও বাগান মালিককেও শোকজ করার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে চলেছে। ছটপুজো পর্ব হয়ে গেলে উচ্ছেদ শুরু হতে পারে বলে সূত্রের খবর।
নেপাল সীমান্তবর্তী পানিট্যাঙ্কি বাজার লাগোয়া সতীশচন্দ্র চা বাগানের জমি দখল করে বিক্রির অভিযোগ উঠেছিল। এলাকার জনপ্রতিনিধি এবং ডান-বাম নেতাদের একাংশ দাবি করেছিলেন, এশিয়ান হাইওয়ে তৈরির জন্য উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীদের পুর্নবাসন দিতে চা বাগান লাগোয়া জমি নেওয়া হয়েছে। কোনও লেনদেন হয়নি বলে তাঁরা দাবি করেছেন। এমনকী যে জমিতে ‘পুর্নবাসন’ হচ্ছে সেটিও চা বাগানের লিজের জমি নয় বলে দাবি করা হয়েছিল। চা বাগানের পাশে অব্যবহৃত জমিতে দোকান ঘর তৈরি হবে বলে ব্যবসায়ীদের দাবি ছিল। যদিও, তা যে সত্যি নয়, সরকারি সমীক্ষা রিপোর্টেই তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। শুক্রবার বেশি রাত পর্যন্ত ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের অফিসে এলাকার খতিয়ান-সহ বিভিন্ন রেকর্ড মিলিয়ে দেখা হয়। যে পনেরো একর জমি বেড়া দিয়ে ঘিরে প্লট তৈরি করে বিক্রি হচ্ছে তার পুরোটাই চা বাগানের লিজে থাকা জমি বলে জেনেছেন ভূমি আধিকারিকরা। দার্জিলিঙের অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি) সঞ্জীব চাকী বলেন, ‘‘জমি দখলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার বেশ কিছু সরকারি প্রক্রিয়া রয়েছে। তার প্রথমটা সারা হয়েছে। জেলাশাসকের দফতরে রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে।’’
তিনমাসেরও বেশি সময় ধরে চা গাছ উপড়ে কংক্রিটের খুঁটি পুঁতে বাগানের ১৫ একর জমি ঘেরা হয়েছে। সেই জমিকে তিনমাপের প্লটে ভাগ করা হয়েছে। দুই ধরনের প্লট রাখা হয়েছে দোকান তৈরির জন্য অপেক্ষাকৃত বড় অন্য প্লটটি শ্রমিকদের আবাসন তৈরির জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছিল। দোকানের জমি নূন্যতম ৩ থেকে ১০ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে অভিযোগ। অন্যদিকে এক একটি শ্রমিক আবাসন নূন্যতম দেড় লক্ষ টাকায় বিক্রির পরিকল্পনা হয়েছিল বলে অভিযোগ। এই পরিকল্পনায় শুধুমাত্র শ্রমিক আবাসন বিক্রি করেই অন্তত ১০ কোটি টাকা বাজার থেকে তোলা সম্ভব হতো বলে একাংশ দাবি করেছে। সরকারি তৎপরতা শুরু হতে গোটা প্রক্রিয়া ভেস্তে যেতে বসেছে। প্রশ্ন উঠেছে জমি কেনার জন্য যে টাকা ব্যবসায়ীরা দিয়েছেন, তার কী হবে?
পানিট্যাঙ্কির নয়া বাজারের একটি দোকান ঘরে রীতিমতো অফিস করে এলাকার জনপ্রতিনিধিদের একাংশ এবং ডান-বাম বিভিন্ন দলের সরকারি কর্মীরা জমি বিলির প্রক্রিয়া সেরেছিলেন বলে অভিযোগ। সেই নেতাদের কয়েকজন দাবি করেছেন, জমি কেনার অগ্রিম দেওয়া পুরো টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়। পুরো টাকা ফেরত চেয়ে ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা গত শুক্রবার এলাকার এক তৃণমূল নেতার বাড়ি ঘেরাও করেছিলেন। স্থানীয় কয়েকজন নেতার মধ্যস্ততায় অপ্রীতকর ঘটনা এড়ানো গিয়েছে বলে দাবি। যদিও, এলাকার তৃণমূল নেতারা বিষয়টি স্বীকার করতে চাননি। তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য হান্দ্রু ওঁরাও দাবি করেছেন, ‘‘এমন কোনও ঘটনার কথা শুনিনি।’’
পানিট্যাঙ্কির বাসিন্দা নন, এমন কয়েকজন নেতার নামও জডিয়েছে জমি লেনদেনের সঙ্গে। তাঁরা ফোন করে আশ্বাস দেওয়াতেই ব্যবসায়ীরা জমি কিনতে সাহস পেয়েছিল বলে দাবি করেছেন। সেই সব নেতাদের ভূমিকাও প্রশাসন খতিয়ে দেখুক, দাবি ব্যবসায়ীদের। মোবাইলের কল রেকর্ড পরীক্ষা করলেই সব তথ্য সামনে চলে আসবে বলে দাবি। প্রশাসন আদৌও কোনও সাহসী পদক্ষেপ করবে নাকি কাগজে কলমে মামলা দায়ের করেই ক্ষান্ত থাকবে, সেই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সীমান্তবর্তী জনপদ পানিট্যাঙ্কিতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy