Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ঘৃণা থেকেই কি খুন বাবাকে

পুলিশের দাবি, এই পরিস্থিতিতে মায়ের মত শ্বেতাও তার বাবার এই আচরণ সহ্য করতে পারতো না৷ বাবার প্রতি প্রবল ঘৃণা তৈরি হয় তার৷ আর তাই প্রথম দিকে অনির্বাণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে সে তার মাকে বারণ করলেও পরবর্তীতে অনির্বাণের সঙ্গে মায়ের মেলামেশা মেনে নিয়েছিল শ্বেতা৷

অভিযুক্ত: উত্তম মোহান্ত খুনে গ্রেফতার মেয়ে শ্বেতা। —নিজস্ব চিত্র।

অভিযুক্ত: উত্তম মোহান্ত খুনে গ্রেফতার মেয়ে শ্বেতা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৭ ০২:৫১
Share: Save:

বাবার প্রতি তৈরি হওয়া ঘৃণা থেকেই মা ও মায়ের প্রেমিকের সঙ্গে খুনের ষড়যন্ত্রে মেয়ে সামিল হয়েছিল বলে সন্দেহ পুলিশের। জলপাইগুড়িতে এলআইসি-র ডেভেলপমেন্ট অফিসার উত্তম মোহান্ত খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে এমন সন্দেহই গাঢ় হচ্ছে পুলিশের৷ ওই ঘটনায় ধৃত উত্তমবাবুর স্ত্রী লিপিকা ও মেয়ে শ্বেতা ওরফে তুলিকে এ দিন জলপাইগুড়ি আদালতে তোলা হলে শ্বেতাকে পাঁচদিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক৷ অন্যদিকে লিপিকাকে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷

গত ২৯ জুন দুপুরে জলপাইগুড়ির কদমতলা বাস স্ট্যান্ড লাগোয়া ভাড়াবাড়িতে উত্তমবাবুকে তার স্ত্রী লিপিকা ও লিপিকার প্রেমিক অনির্বাণ খুন করে বলে প্রথমে অভিযোগ ওঠে৷ যার জেরে আগেই গ্রেফতার করা হয় লিপিকাকে৷ পালিয়ে যায় অনির্বাণ৷ গোটা ঘটনা নাটকীয় মোড় নেয় গত বৃহস্পতিবার৷ দিনভর দফায় দফায় জেরার পর বাবাকে খুনের অভিযোগে ওইদিন বিকালে গ্রেফতার করা হয় শ্বেতাকে৷

পুলিশ সূত্রের খবর, জেরায় ধৃতরা জানিয়েছে, প্রায় প্রতিদিনই অত্যাধিক মদ্যপান করে বাড়িতে মাতলামি করতেন উত্তমবাবু৷

পুলিশের দাবি, এই পরিস্থিতিতে মায়ের মত শ্বেতাও তার বাবার এই আচরণ সহ্য করতে পারতো না৷ বাবার প্রতি প্রবল ঘৃণা তৈরি হয় তার৷ আর তাই প্রথম দিকে অনির্বাণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে সে তার মাকে বারণ করলেও পরবর্তীতে অনির্বাণের সঙ্গে মায়ের মেলামেশা মেনে নিয়েছিল শ্বেতা৷ এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘আমাদের ধারণা, বাবার প্রতি প্রবল ঘৃণা থেকেই এই ষড়যন্ত্রে সামিল হয়েছিল সে৷’’

এরইমধ্যে শ্বেতার একটি ফেসবুক পোস্ট ঘিরে তদন্তকারীদের মধ্যে রহস্য দানা বেধেছে৷ উত্তমবাবু মারা যাওয়ার দু’দিন আগে, অর্থাৎ ২৭জুন ওই ফেসবুক পোস্টে শ্বেতা লিখেছেন, “ঝাটের লোকজন আজ থেকে আউট অফ মাই লাইফ অ্যান্ড আউট মাই থটস৷ আজকে থেকে জাস্ট মি অ্যান্ড মাই ড্রিমস৷” ঠিক কী উদ্দেশ্যে শ্বেতা ফেসবুকে ওই পোস্টটি করেছিল তাকে জেরা করে তা জানার চেষ্টা চলছে বলে তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা জানিয়েছেন৷

এ দিন দুপুরে জলপাইগুড়ি আদালতে তোলা হয় শ্বেতাকে৷ তার সঙ্গেই আদালতে তোলা হয় পুলিশ হেফাজতের মেয়াদ শেষ হওয়া লিপিকাকে৷ শ্বেতার আইনজীবী সন্দীপ দত্ত সাফ বলেন, ‘‘শ্বেতা সম্পুর্ণ নির্দোষ৷ তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে৷ ষড়যন্ত্রে সে জড়িত নয়৷ এবং কোন তথ্য প্রমাণ ছাড়াই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে৷’’

শ্বেতার গ্রেফতারের ধরণ নিয়েও আদালতে প্রশ্ন তোলেন তিনি৷ তার কথায়, ‘‘থানায় মাকে দেখতে যাওয়ার সময় সেখানেই তাকে আটকে দেয় পুলিশ৷ অথচ, খাতায় কলমে তারা বলছে, কদমতলা এলাকা থেকে শ্বেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷’’ সরকার পক্ষের আইনজীবী প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘শ্বেতা এই ষড়যন্ত্রে সামিল৷ তাই তাকে সাত দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়৷’’

দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক তাকে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন৷ আর লিপিকাকে ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠান হয়৷

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE