Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
এক সদস্যের কমিটিতে ক্ষোভ তৃণমূলের

মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার মেয়রের

কংগ্রেস, তৃণমূলের শ্রমিক-কর্মচারীদের বিক্ষোভের মুখে পুরকর্মীদের বেতন-মজুরি বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রত্যাহার করতে বাধ্য হলেন শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। শনিবার পুরসভার মাসিক বোর্ড মিটিংয়ের ঘটনা।

(বাঁ দিকে) সভাকক্ষের বাইরে তৃণমূলের বিক্ষোভ। (ডান দিকে) সভাকক্ষের মধ্যে তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন কাউন্সিলরেরা। শনিবার শিলিগুড়ি পুরসভায়। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

(বাঁ দিকে) সভাকক্ষের বাইরে তৃণমূলের বিক্ষোভ। (ডান দিকে) সভাকক্ষের মধ্যে তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন কাউন্সিলরেরা। শনিবার শিলিগুড়ি পুরসভায়। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:১৬
Share: Save:

কংগ্রেস, তৃণমূলের শ্রমিক-কর্মচারীদের বিক্ষোভের মুখে পুরকর্মীদের বেতন-মজুরি বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রত্যাহার করতে বাধ্য হলেন শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। শনিবার পুরসভার মাসিক বোর্ড মিটিংয়ের ঘটনা।

সভার বাইরে যখন আন্দোলনে উত্তেজনা ছড়াতে থাকে, তখনই সভায় তৃণমূলের কাউন্সিলরেরাও প্রতিবাদে সরব হন। বাম কাউন্সিলরদের মধ্যে তর্কাতর্কি, বাইরে একে অপরকে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকিও চলে। আন্দোলনকারীদের দাবি, সমস্ত শ্রমিক সংগঠন, পরিষদীয় দলের সঙ্গে আলোচনার পরেই বেতন, মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হবে। এক সদস্যের কমিটি গড়ে মেয়র পারিষদ এই সিদ্ধান্ত নিলে তা মানা হবে না।

এর প্রতিবাদেই সভাকক্ষের গেট পতাকা, ব্যানার দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া, গেটের বাইরে চড়-লাথি স্লোগান দেওয়া শুধু নয়, একটা সময় বাম কাউন্সিলদের বাইরে যেতে দিতে দেননি আন্দোলনকারীরা। তৃণমূল কাউন্সিলরেরা বিক্ষোকারীদের শান্ত করার চেষ্টাও করেন। শেষ অবধি মেয়র প্রস্তাব প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন। প্রস্তাবে পদ অনুসারে হাজিরা ১০ টাকা থেকে মাসিক ১ হাজার টাকা বৃদ্ধির সুপারিশ ছিল। আন্দোলনে সংগঠন তৃণমূলের সঙ্গে থাকলেও বোর্ড সভায় কংগ্রেসের কাউন্সিলরেরা আসেননি।

অশোকবাবু বলেন, ‘‘আমরা শ্রমিক, কর্মীদের সবসময় বেশি বেতন, মজুরি পক্ষে। কিন্তু টাকার জোগান-সহ সবকিছু ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ওঁরা যেমন চাইছেন, তেমনই সবার সঙ্গে আলোচনা করে মেয়র পারিষদ সিদ্ধান্ত নেবে। তাই প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিয়েছি।’’ অশোকবাবু জানান, এ দিনের বিক্ষোভ পুরোটাই তৃণমূলের পরিকল্পিত। তাঁর কথায়, ‘‘গেট বন্ধ করে কাউন্সিলরদের আটকে রাখার চেষ্টা হয়। গেট ধাক্কাধাক্কি, চিৎকার করে নানা ধরনের কথাবার্তা বলা হয়েছে। রাজনীতিতে এমন আচরণ কাম্য নয়।’’

প্রায় ৪ ঘণ্টা পর পুর চেয়ারম্যানের ঘোষণার পর পুরসভার পরিস্থিতি শান্ত হয়। বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের রঞ্জন সরকার পাল্টা বলেন, ‘‘এ দিন সংখ্যালঘু বোর্ডের মেয়র ব্যর্থ তা প্রমাণ হল। শ্রমিক-কর্মী, বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা না করেই মেয়র একাই সব সিদ্ধান্ত নিয়ে নিচ্ছেন। ওঁর উচিত এখনই চেয়ার ছেড়ে চলে যাওয়া। এরা কী করছেন তা শিলিগুড়ি মানুষ দেখছেন।’

পুরসভা সূত্রের খবর, স্থায়ী, অস্থায়ী মিলিয়ে পুরসভার ২ হাজারের উপর কর্মী, শ্রমিক আছেন। মেয়র শ্রমিক, অস্থায়ীদের ১০-১৫ টাকা প্রতিদিন এবং বাকি কর্মী, অফিসাদের অধিকাংশের ১ হাজার টাকা বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছিন। কংগ্রসের ওয়ার্ডগুলিতে বৈষম্য করা হচ্ছে বলে কংগ্রেসের কাউন্সিলরেরা সভায় না যাওয়ায় বোর্ড সভায় বামেরা পুরোপুরি সংখ্যালঘু ছিল। এ দিন পরিস্থিতি এমন জায়গায় যেতে থাকে, তাতে মেয়র প্রস্তাব প্রত্যাহার না করলে বামেদের রাতভর ঘেরাও করার হুমকিও দেওয়া হয়। এক সময় প্রাক্তন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্তকেও তৃণমূলের হাতে এমনভাবে ঘেরাও হতে হয়েছিল। প্রায় ৪ ঘণ্টা পর মেয়র পারিষদের অন্য প্রস্তাব পুরসভার বোর্ডে পাশ হয়।

কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা সুজয় ঘটক বলেন, ‘‘আমাদের প্রশ্নের জবাব মেয়র না দিলে আমরা সভায় যাব না। উনি সংখ্যালঘু বোর্ডই চালান। এ দিন আমাদের কর্মী, শ্রমিকেরা আন্দোলন করছেন। প্রয়োজনে আবার করবেন।’’ তাঁর দাবি, এককভাবে মজুরি বৃদ্ধির চেষ্টা করা হচ্ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘অস্থায়ী ৩০০ অতিরিক্ত লোক নিচ্ছেন। আর পুরানো লোকেদের ১০ টাকা বাড়াতে চাইছেন। এটা কী নাটক! সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mayor Wage Worker
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE