Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুন, ধৃত

তৃতীয় শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে রায়গঞ্জের ভাগডুমুর এলাকায় ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে খুনের অভিযোগে মৃতার প্রতিবেশি এক যুবককে গ্রেফতার করল পুলিশ। রবিবার সকালে রায়গঞ্জের কলেজপাড়া এলাকা থেকে তাকে ধরা হয়।

রায়গঞ্জ থানায় ধৃত উৎপল বর্মন। ছবি: গৌর আচার্য।

রায়গঞ্জ থানায় ধৃত উৎপল বর্মন। ছবি: গৌর আচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৫ ০২:১৫
Share: Save:

তৃতীয় শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে রায়গঞ্জের ভাগডুমুর এলাকায় ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে খুনের অভিযোগে মৃতার প্রতিবেশি এক যুবককে গ্রেফতার করল পুলিশ। রবিবার সকালে রায়গঞ্জের কলেজপাড়া এলাকা থেকে তাকে ধরা হয়। রায়গঞ্জ থানার আইসি গৌতম চক্রবর্তী জানান, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে নেশাসক্ত অবস্থায় উত্পল ওই নাবালিকাকে পাটখেতে নিয়ে গিয়ে শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে। ধৃতের বিরুদ্ধে আপাতত ৩০২ ধারায় খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। মৃতার ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ধর্ষণের কোনও প্রমাণ মিললে এর ওপর ধর্ষণের মামলা যুক্ত করা হবে। তিনি জানান, রায়গঞ্জের মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতের মাধ্যমে ধৃতকে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ওই নাবালিকার খুনের ঘটনার দুই দিন পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্ত গ্রেফতার না হওয়ায় গত শনিবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র মৃতার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলার পর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা না হলে দলের তরফে আন্দোলনে নামারও হুমকি দেন তিনি। সিপিএমের উত্তর দিনাজপুর জেলা সম্পাদক অপূর্ব পালের দাবি, বিরোধী দলনেতা পুলিশের উপর চাপ সৃষ্টি করেছেন বলেই পুলিশ রাতারাতি অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে।

উল্লেখ্য, ভাগডুমুর এলাকাটি কালিয়াগঞ্জ বিধানসভার মধ্যে পড়েছে। এ দিন সকালে কালিয়াগঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক প্রমথনাথ রায় ও জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্তের নেতৃত্বে কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দল মৃতার বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। এর পর মৃতার শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানের জন্য তার বাবার হাতে আর্থিক সাহায্যে তুলে দেন। দুপুরে চিকিত্সকদের নিয়ে মৃতার বাড়িতে গিয়ে তার অসুস্থ মায়ের চিকিত্সার ব্যবস্থা করেন রায়গঞ্জ ব্লক তৃণমূল সভাপতি পূর্ণেন্দু দে, আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি অরিন্দম সরকার ও দলের রায়গঞ্জ বিধানসভা কমিটির আহ্বায়ক তিলক চৌধুরী। তাঁরাও মৃতার শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানের জন্য তার বাবার হাতে আর্থিক সাহায্য তুলে দেন।

রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিতবাবু বলেন, ‘‘পুলিশ তত্পরতার সঙ্গে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারায় আমরাও খুশি। দলের তরফে সোমবার পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তিন মাসের মধ্যে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়ে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হবে।’’ আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি অরিন্দম সরকারের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দলের তরফে ঘটনার কথা জানানো হয়েছে। মৃতার পরিবার দুঃস্থ হওয়ায় তিনি সরকারি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, গত বৃহস্পতিবার বিকালে নন্দিনী সরকার (৮) নামে ওই ছাত্রীর দেহ বাড়ির অদূরে একটি পাটক্ষেত থেকে আংশিক বিবস্ত্র অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। মৃতার গলায় পাটগাছের কাঁচা সুতোর ফাঁস জড়ানো ছিল।

এ ছাড়াও তার মুখে, গালে একাধিক আঁচড়ের দাগ ছিল। হাত, পা-সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্নও মেলে। ঘটনাস্থলের কাছেই পুরুষদের একটি সাইকেলও উদ্ধার করে পুলিশ। সেই সূত্র ধরেই পেশায় চাষি মৃতার বাবা ভানুরাম সরকার উত্পলকে চিহ্নিত করে পুলিশের কাছে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। ভানুরামবাবু বলেন, ‘‘জেল হেফাজতে রেখেই যাতে ওর ফাঁসি অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ব্যবস্থা করা হয়, কংগ্রেস ও তৃণমূল নেতাদের কাছে সেই অনুরোধ করেছি।’’ অভিযোগের বিষয়ে ধৃত উত্পল কোনও মন্তব্য করতে চায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE