Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

সাদা কালোর সত্যি-মিথ্যে নিয়ে হিমশিম

সাদা-কালো ‘নোট’-এর দুনিয়ায় এখন কত কাহিনিই না ঘুরে বেড়াচ্ছে! তার কতটা সত্যি, কতটা মিথ্যে তা ঠাহর করতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ-প্রশাসন, ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। কারণ কখনও শোনা যাচ্ছে, সেবক রোডের এক ব্যবসায়ী তাঁর শতাধিক কর্মীকে এক লপ্তে ১ বছরের মাইনে ধরিয়ে দিয়েছেন।

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৩৮
Share: Save:

সাদা-কালো ‘নোট’-এর দুনিয়ায় এখন কত কাহিনিই না ঘুরে বেড়াচ্ছে! তার কতটা সত্যি, কতটা মিথ্যে তা ঠাহর করতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ-প্রশাসন, ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।

কারণ কখনও শোনা যাচ্ছে, সেবক রোডের এক ব্যবসায়ী তাঁর শতাধিক কর্মীকে এক লপ্তে ১ বছরের মাইনে ধরিয়ে দিয়েছেন। বাতাসে ভাসছে, খালপাড়ার এক ব্যবসায়ী ২ লক্ষ টাকার এনজেপি-দিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেসের ২ লক্ষ টাকার টিকিট কেটেছেন। পুলিশের অন্দরে চর্চা হচ্ছে, এক পুলিশ অফিসার গ্রামের বাড়ি থেকে ১২ জন চেনাজানাকে ধরে তাঁদের স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে গড়ে দেড় লক্ষ টাকা করে জমা করিয়েছেন। পূর্ত দফতরের এক বড় কর্তা নাকি পরিচারিকা ও তাঁর রিকশাচালক স্বামীর অ্যকাউন্টেও টাকা জমা করিয়েছেন। উপরন্তু, দূর সম্পর্কের গরিব আত্মীয়-স্বজনদের কদর রাতারাতি বেড়ে গিয়েছে যেন। বিধান মার্কেট লাগোয়া এলাকার এক লটারি ব্যবসায়ী কলকাতা, অসম, তেজপুরের আত্মীয়দের মাধ্যমেও ব্যাঙ্কে টাকা জমা দিতে লোকজন পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে লটারি-দুনিয়ায় চাউর হয়েছে।

শিলিগুড়ির একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার দিনভর যত টাকা মজুত হয়েছে তার মধ্যে মধ্যবিত্তদের সেভিংস অ্যাকাউন্টের সংখ্যা কিন্তু কম নয়। সাধারণত যে সব অ্যাকাউন্টে বেশি টাকা জমা অতীতে পড়েনি, সেখানে কিছু কিছু জায়গায় এক লপ্তে ২ লক্ষ টাকা জমা হয়েছে। আবার কেউ কেউ ব্যাঙ্কে এদিন অ্যাকাউন্ট খোলার চেষ্টাও করেছেন। কিন্তু, এই লেনদেনের বাজারে নয়া অ্যাকাউন্ট খোলার সময় কোথায়! অগত্যা, বপাংশু মুখে টাকার ব্যাগ নিয়ে বাড়িমুখো হতে দেখা গিয়েছে হবু অ্যাকাউন্ট হোল্ডারকে।

শিলিগুড়ির সেবক রোড এলাকার ব্যবসায়ী সংগঠনের এক কর্তাকে ধরা গেল তাঁর দোকানেই। কী ব্যাপার! একজন ব্যবসায়ী নাকি তাঁর শতাধিক কর্মীকে এক বছরের মাইনে দিয়েছেন? জবাবে হেসে ওই ব্যবসায়ী সংগঠনের কর্তা জানান, তিনিও শুনেছেন। কিন্তু, য়াঁরা মাইনে নিয়েছেন, তাঁরা তো চাকরি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে পারেন। তখন টাকা আদায় কী ভাবে হবে! ইতিমধ্যে দোকানে ঢুকে পড়েছিলেন আরেক ব্যবসায়ী নেতা। তিনি যুক্তি দেন, এমন লেনদেনের দুনিয়ায় ‘বিশ্বাস’টাই বড় ব্যাপার। কেউ চাকরি ছাড়লেও টাকা আদায় করে নেওয়ার ‘দম’ ওই ব্যবসায়ীর আছে বলেও যুক্তি দেন তিনি।

যিনি ২ লক্ষ টাকার ট্রেনের টিকিট কেটেছেন, তঁর মতলব কি! হিলকার্ট রোডের এক ট্যুর অপারেটর সোজাসাপটা জানান, ওই ‘আনকনফার্মড’ টিকিট ফেরৎ দিলে সামান্য কিছু টাকা কেটে ফেরৎ দেবে রেল। সঙ্গে সঙ্গে পুরো টাকাটা নতুন নোটে পাওয়া যাবে যে! এর পরেই ওই ট্যুর অপারেটরের সংযোজন, টাকা পেলেও তা আর হাতে মিলবে না। কারণ, বুধবার রাতেই রেল বিষয়টা আঁচ করে জানিয়ে দিয়েছে, টিকিট বাতিল হলে টাকা দেওয়া হবে প্রাপকের অ্যাকাউন্টে। ফলে, টিকিট কাটার হিড়িক বৃহস্পতিবার অবশ্য কিছুটা কমেছে।

তা বলে কালোকে রাতারাতি সাদা করার নিত্য নতুন উপায় খোঁজার চেষ্টা এতটুকুও থামেনি। রাতারাতি তৈরি হওয়া ‘সিন্ডিকেট’ যেমন ১৫-২০ শতাংশ টাকা কেটে কালোকে র বদলে সাদা দিচ্ছে, তেমনই কয়েকজন সোনার দোকান মালিকও আসরে নেমেছেন। পুলিশ জেনেছে, বৃহস্পতিবার গবীর রাত অবদি কয়েকটি সোনার দোকানে জমজমাট লেনদেন হয়েছে শিলিগুড়িতে। সেই সব দোকানে কারা, কত টাকার সোনা কিনেছেন সে সব নথি আয়কর বিভাগ চাইতে পারে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। ইতিমদ্যেই সোনার দাকোনের মালিকদের কাছে বড় মাপের ক্রেতার প্যান নম্বর রাখাটা বাধ্যতামূলক বলে ঘোষমাও হয়েছে। পুলিশের একাধিক অফিসার জানান, তাঁরাও গোটা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছেন। শিলিগুড়ির স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতির এক কর্তা জানান, তাঁরা শীঘ্রই বৈঠকে বসে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবেন।

দোরগোড়ায় বিয়ে, টাকা না পেয়ে চিন্তা

নিজস্ব সংবাদদাতা, বালুরঘাট: ব্যাঙ্ক থেকে মেয়ের বিয়ের খরচের টাকা তুলতে না পেরে রাতের ঘুম ছুটেছে অভিভাবকদের। দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকের বাসিন্দা পেশায় স্কুলকর্মী উত্তম পান্ডে বা বালুরঘাটের কাঁঠালপাড়ার বাসিন্দা সরকারি কর্মী উত্তম কুন্ডু, সকলেরই মেয়ের বিয়ে বাবদ লক্ষাধিক টাকার প্রয়োজন। দিনভর সংশ্লিষ্ট ব্লক প্রশাসন এবং ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের দ্বারস্থ হয়ে মেয়ের বিয়ের খরচের জন্য ব্যাঙ্কে জমানো টাকা তোলার ব্যবস্থা করতে আকুল আর্জি জানিয়েও তাঁরা কোনও আশ্বাস পাননি বলে অভিযোগ। সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক ম্যানেজার চেকের মাধ্যমে বিয়ের খরচ মেটানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু বড় খরচ ছাড়াও প্রচুর ছোট অথচ থাকে, যা মেটাতে চেকের বদলে নগদ টাকার প্রয়োজন। নভেম্বরের শেষ দিকে ওই দুই ব্যক্তির মেয়ের বিয়ে। তার আগে নোট বদলের সমস্যার জেরে মাথায় হাত পড়েছে অসংখ্য ব্যক্তিদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

government Black money
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE