Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

আলু বলয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে চাষিদের

দিন যাচ্ছে আর আলুর দাম যে ভাবে কমছে তাতে মাথায় হাত পড়েছে কৃষকদের। মহাজন ও ব্যাঙ্কের থেকে ঋণ নিয়ে আলু চাষ করে কম দামে আলু বিক্রি করে ঋণের টাকা কী ভাবে শোধ করবেন তা ভেবে ঘুম উড়ে গিয়েছে উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রধান দুই আলু বলয় ফালাকাটা ও ধূপগুড়ির চাষিদের মধ্যে।

হিমঘরে রাখতে না পেরে এভাবেই আগাছা ঢেকে রাখা হচ্ছে আলু। ফালাকাটায়। —নিজস্ব চিত্র।

হিমঘরে রাখতে না পেরে এভাবেই আগাছা ঢেকে রাখা হচ্ছে আলু। ফালাকাটায়। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ফালাকাটা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৫ ০৩:৪৫
Share: Save:

দিন যাচ্ছে আর আলুর দাম যে ভাবে কমছে তাতে মাথায় হাত পড়েছে কৃষকদের। মহাজন ও ব্যাঙ্কের থেকে ঋণ নিয়ে আলু চাষ করে কম দামে আলু বিক্রি করে ঋণের টাকা কী ভাবে শোধ করবেন তা ভেবে ঘুম উড়ে গিয়েছে উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রধান দুই আলু বলয় ফালাকাটা ও ধূপগুড়ির চাষিদের মধ্যে।

এক মাস আগে যে জ্যোতি আলু পাঁচ টাকা কিলো দরে কৃষকেরা বিক্রি করেছেন, তার দাম বর্তমানে নেমে গিয়েছে তিন টাকার নীচে। বৃহস্পতিবার ফালাকাটা ও ধূপগুড়ির পাইকারি বাজারে কিলো প্রতি জ্যোতি আলুর দাম নেমে দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ৯০ পয়সায়। এতেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত চাষিরা। তিন-চার মাস জমির আলু হিমঘরে মজুত রাখার পর দাম মিলবে বলে তাঁদের আশা। বহু চাষি হিমঘরমুখী হলেও কোনও হিমঘরে জায়গা না থাকায় বেজায় বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। গত দু’সপ্তাহ ধরে ধূপগুড়ি ও ফালাকাটায় কয়েক দফায় কৃষকরা আলুর দাম না মেলায় হিমঘরে রাখার দাবিতে পথ অবরোধ করেছেন। কোথাও হিমঘরের গেটে তালা ঝুলিয়েও বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে।

এই অবস্থায়, সহায়ক মূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে সমস্ত আলু কেনা-সহ ঋণ মকুবের দাবিতে দুই ব্লকের বহু কৃষক এখন জোট বেঁধে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কৃষকদের পাশে নিয়ে পাশাপাশি বুথ স্তর থেকে ব্লক স্তর পর্যন্ত মিছিল-অবরোধ আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম-এর কৃষক সভা। আগামী ২৩ মার্চ জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলায় সহায়ক মূল্যে নূন্যতম আট টাকা ও কৃষকদের কাছ থেকে সরকার উত্‌পাদিত আলুর দশ শতাংশ কেনার দাবি জানাবেন তাঁরা। জলপাইগুড়ি জেলা কৃষক সভার নেতা সুভাষ রায়ের কথায়, “এ বার আলুর ফলন অত্যধিক হবে তা আগে ভাগে জানলেও সরকার কেন চুপ করে বসে ছিল, তা বুঝতে পারছি না।”

বৃহস্পতিবার ধূপগুড়ি ব্লকে সহায়ক মূল্যে আলু কেনার কথা বলা হলেও শুরু হয় নি সহায়ক মূল্যে আলু কেনা। কৃষক প্রতি ৫০০ কিলোগ্রাম আলু তাঁরা সাড়ে পাঁচ টাকা কেজি দরে কিনবেন বলে জানানো হয়েছে। তাতেই ক্ষোভের আঁচ লক্ষ্য করেছেন আধিকারিকরা। মূলত সেই কারণে দিনক্ষণ পিছিয়ে আজ শুক্রবার থেকে আলু কেনার কথা জানানো হয়েছে।

কৃষকরা জানিয়েছেন, যে সমস্ত কৃষকদের কৃষাণ ক্রেডিট কার্ড রয়েছে এবং যাদের তিন একর পর্যন্ত জমি রয়েছে তাঁদের থেকে কেবল মাত্র আলু কেনা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। এক বিঘা জমিতে চার হাজার কেজি আলু উত্‌পাদন হয়েছে। তাই হতাশ কৃষকদের প্রশ্ন, “মাত্র ৫০০ কিলোগ্রাম কিনলে বাকি আলুর কী হবে?” তাঁরা জানান, বেশিরভাগ কৃষক তিন একরের বেশি জমিতে আলু চাষ করেছেন। তা হলে সহায়ক মূল্যে আলু বিক্রি করতে পারবেন কৃষকদের একটি অংশ মাত্র।

ব্লক কৃষি আধিকারিক দেবাশিস সর্দারের কথায়, “ক্ষোভের আঁচের আশঙ্কায় নয়, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলায় আমরা বিষয়টি মাইকে প্রচার করতে পারিনি। সে কারণে বৃহস্পতিবার সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানকে আলু কেনার বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছি। ৩০২ কুইন্টাল আলু আপাতত দু’সপ্তাহ ধরে কেনা হবে।”

ধূপগুড়ি ব্লকে এ বছর ধূপগুড়ির মোট ১২ হাজার হেক্টর জমিতে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার মেট্রিক টন আলু উত্‌পাদন হয়েছে। সে জায়গায় মাত্র ৩০২ টন আলু সরকার কিনলে তাঁরা কোনও ভাবে উপকৃত হবেন না বলে আলু চাষিরা জানিয়ে দিয়েছেন। উত্তরবঙ্গ আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক কার্তিক দাসের কথায়, “আমরা দাম নির্ধারণ করার কেউ নই। ভিন রাজ্যে আলুর চাহিদা না থাকলে আমরা কী করতে পারি? আলু কিনে যে পরে চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি করব তার উপায় নেই। কারণ, এ বছর সরকার হিমঘরের ৯০ শতাংশ জায়গা আলু কৃষকদের জন্য রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এত আলু কিনে আমরা কোথায় রাখব? ভিন রাজ্যে যেমন চাহিদা সে অনুযায়ী কিনে আমরা সরবরাহ করি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE