ঘর: এখানেই থাকত ওই কিশোরেরা। নিজস্ব চিত্র
কোরক হোম থেকে বৃহস্পতিবার রাতে যে ৮ কিশোর পালিয়েছে, তাদের অনেকেই ঘর থেকে পালিয়ে নানা জায়গা ঘুরে এসে পৌঁছেছিল এই হোমে। তাই হোমের সুপার প্রণয় দে-র বক্তব্য, ‘‘এই কিশোরদের পালানোর প্রবণতা রয়েছে। তা দূর করতে দরকার কাউন্সেলিং।’’ তিনি একজন কাউন্সেলর চেয়েছেন প্রশাসনের কাছ থেকে। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক রচনা ভকত, সে ব্যাপারে তাঁকে সাহায্য করবেন বলে কথা দিয়েছেন।
তবে জলপাইগুড়ির মানুষ বেশ ক্ষুব্ধ। সম্প্রতি শহরেরই চন্দনা চক্রবর্তীর শিশুদের হোম থেকে শিশু পাচারের অভিযোগ উঠেছে। চন্দনাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাই নিয়ে শুরু হয়েছে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত। তারপরে শহরের আর একটি হোম থেকে কিশোরদের পালানোর খবর ছড়িয়ে পড়তেই সকালে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁদের বক্তব্য, শহরের সব হোমগুলো সম্পর্কে প্রশাসনের কড়া নজর রাখাতে হবে।
কোরক হোমে এর আগেও অনেকবার আবাসিক পালানোর ঘটনা ঘটেছে৷ ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বেশ কয়েকজন আবাসিক হোমের তিন কর্মীকে রীতিমতো মারধর করে পালায় বলে অভিযোগ ওঠে৷ দিন কয়েক আগেও ফুটবল খেলতে যাওয়ার নাম করে এক কিশোর পালিয়ে যায়৷ স্বাভাবিকভাবেই এর ফলে প্রশ্ন উঠছে, বারবার এই হোম থেকে কেন পালাচ্ছে আবাসিকরা?
তবে এ বারে খুব দ্রুত ৮ জনের মধ্যে ৬ জনকেই পুলিশ ধরে ফেলেছে। দু’জনকে এখনও পাওয়া যায়নি। তবে এই ৮ জন যে ভাবে প্রতিদিন একটু একটু করে দেড় সপ্তাহ ধরে দরজার ছিটকিনি দিয়ে আলমারির পিছনের দেওয়ালে গর্ত করেছে, তা দেখে তাজ্জব পুলিশ। দলের পাণ্ডাকে অবশ্য ধরা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মাস সাতেক আগে সে হোমে আসে। হোমের কড়াকড়িতে অতিষ্ঠ হয়েই সে পালানোর মতলব করে বলে পুলিশের অনুমান। কিন্তু একা কাজটা করা সম্ভব নয় বলে সে দলে আরও অনেককে জড়িয়েছিল।
এই আট জনের মধ্যে একজন বাংলাদেশি কিশোরও রয়েছে৷ পলাতকদের মধ্যে পাঁচজনকে নিজেদের এলাকার সিডব্লিউসি-র কাছে পাঠানোর ব্যাপারে ইতিমধ্যেই জলপাইগুড়ি জেলা সিডব্লিউসি-র নির্দেশও হয়ে গিয়েছে বলে হোমকর্তারা জানিয়েছেন৷
হোমে প্রতি শিফটে তিন জন করে অস্থায়ী নিরাপত্তা কর্মী থাকেন৷ যাঁদের একজন থাকেন গেটে, এক জনের দায়িত্ব গোটা চত্বর দেখা ও বাকি এক জনের দায়িত্ব হোমের আবাসিকদের দেখা৷ হোম সূত্রে খবর, যে দুই কিশোর নিখোঁজ রয়েছে, তাদের নিয়ে এই মুহুর্তে কোরকে ৮৯ জন আবাসিক রয়েছে৷ কিন্তু মাত্র এক জনের পক্ষে এতগুলি কিশোরকে দেখা সম্ভব না বলে সাফ বলছেন হোম কর্তাদের একাংশই৷ তাদের দাবি প্রতি শিফটে হোমে অন্তত ছয়জন নিরাপত্তা রক্ষী প্রয়োজন৷
খবর পেয়েই এ দিন হোমে তদন্তে যান জেলাশাসক রচনা ভকত৷ সূত্রের খবর, উদ্ধারের পর ছয় আবাসিকের কেউ কেউ বলে তারা বাড়ি চলে যাচ্ছিল, তো কারও আবার দাবি ছিল, গ্যাংটক যাচ্ছিল৷ এ দিন হোমে যান ডিস্ট্রিক্ট লিগাল সার্ভিস অথারিটির সম্পাদিকা নীলাঞ্জনা দে৷ তিনি বলেন, ‘‘একাকীত্ব ঘোচাতে পড়াশোনা ও খেলাধুলোর বাইরে ফাঁকা সময়ে আবাসিকদের ভোকেশনাল ট্রেনিং-এর জন্য আমরা সুপারিশ করব৷’’ জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি বলেন, ‘‘এখনও নিখোঁজ দু’জনের ছবি আমরা বিভিন্ন থানায় পাঠিয়ে দিয়েছি৷ তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে৷’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy