আলমারি নেই। বই পড়ে রয়েছে মেঝেতেই। —নিজস্ব চিত্র।
স্কুলে পর্যাপ্ত ক্লাসঘর থাকলেও বেঞ্চ নেই। তাই কোনওদিন যদি মোট পড়ুয়ার ৪৪ শতাংশ স্কুলে হাজির হয় তাহলে অনেককেই দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হয়। এই পরিস্থিতিতে স্কুলের পঠনপাঠন স্বাভাবিক রাখতে পড়ুয়াদের প্রত্যেকে যাতে প্রতিদিন স্কুলে না আসে তেমন নির্দেশ দিতে বাধ্য হয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। ফলে পালা করে স্কুলে আসার এই ব্যবস্থাই চলে আসছে রায়গঞ্জের বিন্দোল হাইস্কুলে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিষ্ণুদয়ার অগ্রবাল বলেন, “স্কুলে কোনওদিন ৮৩৫ জনের বেশি পড়ুয়া আসলে অতিরিক্ত পড়ুয়াদের দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হয়। তাই আমরা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পড়ুয়াদের স্কুলে আসার নির্দেশ দিতে বাধ্য হই।”
বিন্দোল হাইস্কুলে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়ার সংখ্যা ১৯০০ জন। ২৮ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও তিনজন শিক্ষাকর্মী রয়েছেন। স্কুলের ১৪টি ক্লাসরুমে বেঞ্চ রয়েছে ১৬৭টি। বেঞ্চের অভাবে ৬টি ক্লাসরুম ফাঁকা থাকলেও সেখানে ক্লাস করানো হয় না। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, এক একটি বেঞ্চে পাঁচজন করে পড়ুয়া বসে ক্লাস করতে পারে। সেই হিসেবে কোনওদিন ৮৩৫ জনের (৪৪ শতাংশ) বেশি পড়ুয়া স্কুলে হাজির হলে অনেকেই দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে বাধ্য হয়। ফলে ক্লাসরুমে বিশৃঙ্খলা ও পড়ুয়াদের হইচইয়ের জেরে পঠনপাঠন ব্যাহত হয়। সেইকারণেই, বিভিন্ন ক্লাসের পড়ুয়াদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে স্কুলে আনার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। স্কুলের একাদশ ও দশম শ্রেণির ছাত্র তপু অধিকারি ও ফারুক শেখ বলেন, “ক্লাসে বেঞ্চের অভাব থাকায় বসার অসুবিধা হয়। তাই আমরা প্রতিদিন স্কুলে যাই না।”
জেলা শিক্ষা দফতর ও জেলা সর্বশিক্ষা মিশন কর্তৃপক্ষকে গত দুবছরে একাধিকবার চিঠি লিখে সমস্যার কথা জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ স্কুল কর্তৃপক্ষের।
তবে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) নারায়ণ সরকারের দাবি, ক্লাসরুম তৈরি ছাড়া রাজ্য সরকার সরাসরি কোনও স্কুলকে পরিকাঠামো উন্নয়নের খাতে অর্থ বরাদ্দ করতে পারে না। তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান প্রকল্পে বিন্দোল হাইস্কুল সহ জেলার ৫০টি হাইস্কুলকে খুব শীঘ্রই পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।” সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক প্রবীরকুমার পাত্র বলেন, “আসবাবপত্র কেনার জন্য সর্বশিক্ষা মিশন কোনও স্কুলকে অর্থ বরাদ্দ করে না। স্কুলের নিজস্ব তহবিলে টাকার অভাব থাকলে অর্থ সাহায্যের জন্য স্থানীয় পঞ্চায়েত বা জেলা পরিষদকে স্কুল কর্তৃপক্ষ আবেদন করতে পারেন।”
প্রধানশিক্ষক বিষ্ণুদয়ালবাবুর দাবি, শুধু বসার জায়গাই নয়, পরিকাঠামোগত আরও কিছু সমস্যায় ভুগছে স্কুল। নিকাশি ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলে ভেসে যায় স্কুল চত্বর। পড়ুয়াদের জন্য বরাদ্দ সরকারি পাঠ্যপুস্তক রাখার জায়গা না থাকায় সেগুলি তাঁর ঘরের মেঝেতে রাখতে বাধ্য হন তাঁরা। স্যাঁতসেতে জায়গায় থাকায় পাঠ্যপুস্তকগুলি পোকামাকড় কেটে নষ্ট করছে। তিনি জানান, সরকারি নিয়মে প্রতি পড়ুয়ার ২৪০ টাকা করে বার্ষিক টিউশন ফি দেওয়ার নিয়ম থাকলেও বেশিরভাগ পড়ুয়া দুঃস্থ হওয়ায় তাঁরা সব পড়ুয়াদের কাছ থেকেই ১৫০ টাকা করে টিউশন ফি আদায় করেন। সেই টাকা সারাবছর স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও চক-ডাস্টার কিনতেই খরচ হয়ে যায়।
শিক্ষা দফতরের পরামর্শে সম্প্রতি বিন্দোল হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির সদস্য তথা বিন্দোল গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান তৃণমূলের মনসুর আলি বেঞ্চ কেনা সহ স্কুলের সার্বিক পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য অর্থ সাহায্য চেয়ে জেলা পরিষদের সহকারি সভাধিপতির দ্বারস্থ হয়েছেন।
জেলা পরিষদের তৃণমূলের সহকারি সভাধিপতি পূর্ণেন্দু দে বলেন, বিন্দোল হাইস্কুলের সমস্যা খতিয়ে দেখে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy