প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সুদীপ্তা। —নিজস্ব চিত্র।
সারা বছর সমান তালে চলে না কাঠের ব্যবসা। সংসারে তাই টানাটানি লেগেই থাকে। তা সত্বেও মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কখনওই কোনও কার্পন্য করেননি তিনি। মাধ্যমিক পরীক্ষায় মেয়ে ভাল ফল করে তাঁর সমস্ত কষ্ট মুছে দেবে, এই আশায় গত পাঁচ বছর ধরে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। বাবার স্বপ্ন সফল করতে মেয়েও সংসারের নানা আর্থিক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়ে সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছিল পড়াশোনা। অবশেষে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তর দিনাজপুর জেলায় নজরকাড়া ফল করল রায়গঞ্জের বরুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের গোয়ালপাড়ার বাসিন্দা সুদীপ্তা পাল। এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৬৭২ নম্বর পেয়েছে।
রায়গঞ্জের দেবীনগর কৈলাসচন্দ্র রাধারাণী বিদ্যাপীঠের ছাত্রী সুদীপ্তা এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৬৭২ নম্বর পেয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছে। সে বাংলায় ৯৪, ইংরেজিতে ৯০, অঙ্কে ৯৮, পদার্থবিজ্ঞানে ১০০, জীবনবিজ্ঞানে ৯৯, ইতিহাসে ৯৪ ও ভুগোলে ৯৭ নম্বর পেয়ে জেলার ৩৭ হাজার ৮০১ জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে পিছনে ফেলে দিয়েছে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক তথা জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান উত্পল দত্ত বলেন, ‘‘সুদীপ্তার এই লড়াই অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে।’’ তিনি জানান, উচ্চমাধ্যমিক স্তরে সুদীপ্তার পড়াশোনার সমস্ত খরচ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাঁর দাবি, স্কুলের তরফে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগ করে জানতে পেরেছেন, সুদীপ্তা রাজ্যের মধ্যে একাদশ স্থান দখল করেছে।
সুদীপ্তা জানায়, তার বাবার লড়াই, স্কুলের সমস্ত শিক্ষক, শিক্ষিকা ও গৃহশিক্ষকদের সহযোগিতা ছাড়া তার পক্ষে এত ভাল ফল করা সম্ভব ছিল না। সে বলে, ‘‘পঞ্চম শ্রেণি থেকে এই স্কুলে পড়াশোনা করছি। পড়া বোঝার জন্য যখনই শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের কাছে গিয়েছি, তাঁরা আমাকে সহযোগিতা করেছেন। তাই উচ্চমাধ্যমিক স্তরেও এই স্কুলেই পড়াশোনা করব।’’
সূদীপ্তার বাবা গণেশ পাল বরাত অনুযায়ী বাইরে থেকে বাড়িতে কাঠ কিনে এনে ছুতোরদের দিয়ে বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরির কাজ করান। মা দীপাদেবী গৃহবধূ। একমাত্র ভাই শুভদীপ ওই স্কুলেই অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। সুদীপ্তা জানায়, বাবার নিয়মিত কাজ না থাকলেও কোনওদিনও তার ও তার ভাইয়ের বই কেনা, গৃহশিক্ষকদের বেতন দেওয়া সহ পড়াশোনার ব্যাপারে কোনও কার্পণ্য করেননি। বাবার এই লড়াই দেখে পঞ্চম শ্রেণি থেকেই মাধ্যমিকে ভাল ফল করার ব্যাপারে তার জেদ চেপে যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy