Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অ্যাকাউন্ট খোলাতে চাকরিতে কোপ, দাবি অস্থায়ী কর্মীদের

ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্যই ছাঁটাইয়ের কোপে পড়তে হল বলে দাবি করছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা পরিষদের অস্থায়ী কর্মীরা। তাঁদের কথায়, এত দিন জেলা পরিষদের ‘ওন ফান্ড’ বা নিজস্ব তহবিল থেকেই তাঁদের বেতন দেওয়া হত। কিন্তু সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের নির্দেশে তাঁরা ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৫ ০২:২৮
Share: Save:

ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্যই ছাঁটাইয়ের কোপে পড়তে হল বলে দাবি করছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা পরিষদের অস্থায়ী কর্মীরা। তাঁদের কথায়, এত দিন জেলা পরিষদের ‘ওন ফান্ড’ বা নিজস্ব তহবিল থেকেই তাঁদের বেতন দেওয়া হত। কিন্তু সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের নির্দেশে তাঁরা ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলেন। এক অস্থায়ী কর্মী দাবি করেন, ‘‘এরপরেই জেলা পরিষদের কর্তাদের চক্ষুশূল হয়ে উঠি আমরা।’’

কেন? ওই কর্মীদের দাবি, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট মারফত বেতন হলে কত টাকা বেতন হিসেবে দেওয়া হচ্ছে তার লিখিত হিসেব থেকে যাচ্ছে। অস্থায়ী কর্মীদের নেতা পুলক মজুমদারের দাবি, ‘‘নিজস্ব তহবিলের টাকা কী ভাবে কোথায় খরচ হচ্ছে তার হিসেব জেলা পরিষদের কর্তারা নিজেদের ইচ্ছা মতো দিত। কিন্তু ব্যাঙ্ক মারফৎ টাকা লেনদেন শুরু হলে সেই খরচের হিসেব ঠিকঠাক ভাবেই দিতে হবে। তাতে জেলা পরিষদের কর্তাদের আপত্তি রয়েছে।’’ অস্থায়ী কর্মীদের সংগঠনের সম্পাদক পিনাক ঘোষ বলেন, ‘‘নগদে বেতন দিলে নিজস্ব তহবিলের টাকা নয়ছয়ের সুযোগ থেকে যায়। ব্যাঙ্কের মাধ্যমে বেতন দেওয়া হলে সে সুযোগ থাকে না। আমরা মনে করছি, সে কারণেই আমাদের বিরুদ্ধে ছাঁটাইয়ের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি ললিতা টিগ্গা অবশ্য দাবি করেন, ‘‘সব অভিযোগই ভিত্তিহীন, মনগড়া। বাম আমলে ওই কর্মীদের নিয়োগ করা হয়েছিল। তখন নিজস্ব তহবিলের টাকা নয়ছয় করা হত। এখন সবটাই স্বচ্ছ ভাবে করা হচ্ছে। তাতে বিরোধীদের রাগ হওয়াটাই স্বাভাবিক।’’

অস্থায়ী কর্মীদের অবশ্য দাবি, জেলা পরিষদের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের ঠান্ডা লড়াই রয়েছে। সে কারণেই জেলা পরিষদ চায়নি অস্থায়ী কর্মীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট করা হোক। কিন্তু জেলা প্রশাসন তা চেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শাঁখের করাতের মধ্যে পড়ে অস্থায়ী কর্মীদের চাকরি খোয়াতে হচ্ছে। জেলা পরিষদের সদস্য সিপিএমের রঞ্জন মিত্র বলেন, ‘‘জেলা পরিষদ চলে তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রের কথায়। কিন্তু জেলা প্রশাসন চলে আইন অনুযায়ী। তাই দু’পক্ষের মধ্যে একটা ঠান্ডা লড়াই রয়েছে। কিন্তু অস্থায়ী কর্মীরা কেন তার বলি হবেন?’’ বিপ্লববাবু অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘মিছিমিছি একটা লড়াইয়ের কথা টেনে আনা হচ্ছে। প্রশাসনের সঙ্গে দলের সম্পর্ক খুবই ভাল। আইন মেনেই জেলা পরিষদের সব কাজও করা হচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘কিছু লোক চাইছেন, আমাদের মধ্যে বিবাদের কথা বলে রাজনৈতিক সুবিধা পেতে।’’

এরই মধ্যে জেলা পরিষদ ৩০ জন সিভিক ভলান্টিয়ার চেয়ে পাঠানোয় নতুন বিতর্কের সূচনা ঘটেছে। অস্থায়ী কর্মীদের তরফে পুলকবাবুর দাবি, ‘‘আমাদের ছাঁটাই করে সে জায়গায় ওই সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে কাজ করানো হবে।’’ সভাধিপতি কিন্তু দাবি করেন, ‘‘এই সব বিতর্কের কোনও মানেই হয় না।’’ যদিও বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক শুভেন্দু সরকার বলেন, ‘‘আসলে সব দলই চাইছে তাদের নিজেদের লোকদের পাশে দাঁড়াতে। ওই অস্থায়ী কর্মীদের নিয়োগ করা হয়েছিল বাম আমলে। তাই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিষয়টি সামনে রেখে তাঁদের ছাঁটাই করতে চান বর্তমান জেলা পরিষদ কর্তারা। ওই কর্তারা এখন চান, তাঁদের অনুগত সিভিক ভলান্টিয়ারদের কাজ দিতে। মনে রাখতে হবে, তৃণমূল সরকারের আমলেই সিভিক ভলান্টিয়ার পদ চালু হয়েছে।’’

কর্মী ছাঁটাই নিয়ে ডামাডোলের মধ্যে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ নিয়ে প্রশাসনের মধ্যেও প্রশ্ন উঠেছে। প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, সিভিক ভলান্টিয়ারদের কাজ হল পাহারা দেওয়া এবং ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ। তাঁদের জেলা পরিষদে কী কাজে লাগবে, তা স্পষ্ট নয়।

সভাধিপতির দাবি, ‘‘আমাদের নিজস্ব ট্রাক টার্মিনাস, ইটভাটা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রহরার কাজে ওই সিভিক ভলান্টিয়ারদের লাগবে। সে কারণেই তাঁদের চাওয়া হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bank account job balurghat south dinajpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE