Advertisement
E-Paper

ভূগোল-বিচারে কি স্থান বাছাই স্লিপার সেলের

ভৌগোলিক অবস্থানের জন্যই আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটাও ‘এবিটি’র মানচিত্রে উঠে এসেছিল বলে গোয়েন্দাদের অনুমান।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

বিমান হাজরা , পার্থ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৯
Share
Save

ভৌগোলিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডর তথা ‘চিকেন’স নেক’ ছিল তাদের নিশানায়। বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠন ‘আনসারুল্লা বাংলা টিম’ বা ‘এবিটি’ (আল কায়দার উপমহাদেশীয় শাখা) রাজ্যের যে সব জায়গায় ‘স্লিপার সেল’ গড়ে তোলার মতলবে ছিল, তার পিছনেও ভৌগোলিক কারণ কাজ করছে কি না—ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের। সে কারণে ‘এবিটি’র জাল মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া ছাড়াও, শমসেরগঞ্জ, জঙ্গিপুর, লালগোলা, ভগবানগোলা, সুতি, জলঙ্গি, রানিতলা এবং আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটা পর্যন্ত ছড়ানো হয়েছিল কি না, খতিয়ে দেখছেন তাঁরা।

হরিহরপাড়ার যে দুই এলাকা থেকে বুধবার ভোরে জঙ্গি কার্যকলাপে জড়িত অভিযোগে আব্বাস আলি ও মিনারুল শেখকে ধরা হয়, দু’টিই প্রত্যন্ত গ্রাম। জাতীয় সড়ক এবং ট্রেনের স্টেশন থেকে মাগুড়া ২০ কিমি, নিশ্চিন্তপুর ১৬ কিমি দূরে। বাংলাদেশ সীমান্ত ৪০-৫০ কিমি। জঙ্গিপুর পুলিশ-জেলার পাঁচটির মধ্যে চারটি থানা (ফরাক্কা, শমসেরগঞ্জ, সুতি, রঘুনাথগঞ্জ) জুড়েই এক দিকে বাংলাদেশ সীমান্ত, অন্য দিকে ঝাড়খণ্ড। জঙ্গিপুর, লালগোলা, ভগবানগোলা, জলঙ্গি, রানিতলাও সীমান্তের কাছে। রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তার মতে, ভৌগোলিক সে সুবিধা মাথায় ছিল আব্বাস ও মিনারুলের।

গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, ঘনবসতির জেলা মুর্শিদাবাদে এই ভৌগোলিক সুবিধা আগেও কাজে লাগাতে চেয়েছিল জঙ্গি সংগঠনগুলি। খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডে মারা যায় শাকিল আহমেদ। সে বসবাস করত বেলডাঙার বড়ুয়া, হাটপাড়ায়। তার সঙ্গে ছিল সোহেল মাফুজ ওরফে হাতকাটা নাসিরুল্লা। ২০১৯ সালের নভেম্বরে নাসিরুল্লা বাংলাদেশে নাশকতার ঘটনায় ধরা পড়ে। বেলডাঙায় মার্কেট কমপ্লেক্সে বোরখার ব্যবসার আড়ালে তারা নাশকতার ছক কষত। সে সুবাদে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডের পরে জঙ্গিপুরে অভিযান চালিয়েছে এনআইএ (জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা)। ২০১৩ সালে বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণের পরে, রাজ্য পুলিশের ‘স্পেশাল টাস্ক ফোর্স’ (এসটিএফ) শমসেরগঞ্জে ধরপাকড় শুরু করতেই ধুলিয়ান শহরের গাজিনগর এলাকায় একটি আমবাগানের মধ্যে মেলে প্রচুর বিস্ফোরক। পরে এনআইএ দাবি করেছিল, তা জঙ্গি সংগঠনেরই কাজ। ২০২০ সালে সুতির কাশিমনগরে জেএমবি জঙ্গি সন্দেহে আব্দুল করিম নামে এক যুবককে ধরে এসটিএফ। তার পরেও কখনও লালগোলা কখনও বেলডাঙায় সরকারি এজেন্সির অভিযান হয়। বাংলাদেশের অশান্তির পরে সীমান্ত লাগোয়া এই সব এলাকায় বিএসএফের সংখ্যা বেড়েছে।

ভৌগোলিক অবস্থানের জন্যই আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটাও ‘এবিটি’র মানচিত্রে উঠে এসেছিল বলে গোয়েন্দাদের অনুমান। পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রের মতে, একটা সময় জঙ্গি সংগঠন ‘কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজ়েশন’-এর (কেএলএ) প্রভাব ছিল আলিপুরদুয়ারের কুমারগ্রামে। কারণ, বিপদে পড়লেই সেখান থেকে অসম এবং ভুটান, নেপালে পালানোর রাস্তা বাছত তারা। ফালাকাটাকে কেন্দ্রে রেখে কোচবিহার হয়ে যেমন বাংলাদেশে যাওয়া যায়, তেমনই যাওয়া যায় অসমে। আবার আলিপুরদুয়ারে রয়েছে ভুটান সীমান্তও। ফালাকাটা থেকে শিলিগুড়ি হয়ে অন্যত্র যাওয়াও সহজ।ফালাকাটার সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও উন্নত।

একই সঙ্গে গোয়েন্দাদের একাধিক সূত্র এটাও জানাচ্ছে, ফালাকাটা ব্লকের কিছু এলাকা এবং লাগোয়া মাদারিহাট ব্লকের বেশ কিছু এলাকা সংখ্যালঘু প্রধান। কাজের সূত্রে তাঁদের অনেকেই ভিন্ রাজ্যে যান। দীর্ঘদিন এলাকায় থাকেন না। তাই ‘এবিটি’ ফালাকাটাকে ‘স্লিপার সেল’ গড়ে তোলার জন্য বেছে নেয় বলে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের একাংশের অনুমান।

বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হতে ফালাকাটা ও মাদারিহাটের বেশ কিছু জায়গায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। যদিও এ নিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে শনিবার ফোন ধরেননি আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী। জবাব মেলেনি মোবাইল-বার্তার। ফালাকাটার বিজেপি বিধায়ক দীপক বর্মণ বলেন, “বিজেপির পাড়া-বৈঠক হলে যেখানে পুলিশ পৌঁছে যায়, সেখানে বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠনের একাধিক বৈঠক ফালাকাটায় হলেও, সে খবর পুলিশের কানে না পৌঁছনো, যথেষ্ট হতাশার।” তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক মৃদুল গোস্বামী পাল্টা বলেন, “যে কোনও কিছু নিয়ে রাজনীতি করা, বিজেপির স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Terrorist Bangladesh

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}