Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

‘টোটোই আমার ভবিতব্য’

মাস সাতেক আগে পেশায় টোটোচালক স্বামীর মৃত্যুর পর তিন সন্তানকে নিয়ে অথৈ জলে পড়েছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত তিন ছেলেমেয়েকে মানুষ করতে আর সংসারের হাল ধরতে মাস চারেক আগে হাতে নেন টোটোর স্টিয়ারিং। সেই থেকে সকাল-সন্ধ্যা মালদহের জেলা সদর ইংরেজবাজারের অলিগলিতে টোটো চালিয়ে বেড়াচ্ছেন জহরাতলা রায়পুরের শুকসারী মণ্ডল।

দৃঢ়: সংসার আর যাত্রী—দুই-ই সুরক্ষিত শুকসারীর হাতে। নিজস্ব চিত্র

দৃঢ়: সংসার আর যাত্রী—দুই-ই সুরক্ষিত শুকসারীর হাতে। নিজস্ব চিত্র

জয়ন্ত সেন 
মালদহ শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৯ ০৫:০৭
Share: Save:

মাস সাতেক আগে পেশায় টোটোচালক স্বামীর মৃত্যুর পর তিন সন্তানকে নিয়ে অথৈ জলে পড়েছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত তিন ছেলেমেয়েকে মানুষ করতে আর সংসারের হাল ধরতে মাস চারেক আগে হাতে নেন টোটোর স্টিয়ারিং। সেই থেকে সকাল-সন্ধ্যা মালদহের জেলা সদর ইংরেজবাজারের অলিগলিতে টোটো চালিয়ে বেড়াচ্ছেন জহরাতলা রায়পুরের শুকসারী মণ্ডল।

শুক্রবার ছিল আর্ন্তজাতিক নারী দিবস। কিন্তু এই দিনটি আদতে কী, তা জানেন না শুকসারী। তাতে অবশ্য তাঁর লড়াই থেমে থাকে না। ছেলেমেয়েদের মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দিতে আর পাঁচটা দিনের মতো এ দিনও সকালে টোটো নিয়ে তিনি বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়।

ইংরেজবাজার ব্লকের যদুপুর ২ পঞ্চায়েতের জহরাতলা রায়পুরে বাড়ি শুকসারীর। বাড়ি বলতে টিনের চাল আর দরমার বেড়া দেওয়া একটি ঘর। শুকসারী বলেন, ‘‘মাস সাতেক আগে টোটো চালাতে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে স্বামী মারা যান। উনিই ছিলেন পরিবারের মধ্যে একমাত্র রোজগেরে।’’

বড় ছেলে শুভঙ্কর ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলে সুরজ চতুর্থ শ্রেণিতে। একমাত্র মেয়ে অন্তরা এখনও নার্সারি ক্লাসের ছাত্রী। তিনি জানান, পেশায় মাছ বিক্রেতা এক দেওর থাকলেও তাঁরও হিমশিম অবস্থা। ফলে বাধ্য হয়েই স্বামীর পেশাকে বেছে নেন শুকসারী। তিনি বলেন, ‘‘বছরে ৪ হাজার ৬০০ টাকা চুক্তিতে আগাম টাকা দিয়ে একটি টোটো ভাড়া নিয়ে গ্রামে চালাতে শুরু করি। প্রথমে টোটো চালাতে সমস্যা হত, ব্যালান্স রাখতে পারতাম না। কিন্তু ধীরে ধীরে সব ঠিকঠাক হয়ে যায়।’’ কিন্তু গ্রামে সে ভাবে ভাড়া মিলত না। তাই তিন মাস ধরে প্রায় দশ হাজার টোটোচালকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যস্ততম ইংরেজবাজার শহরের রাস্তায় রাস্তায় দাপিয়ে টোটো চালাচ্ছেন বলে জানান তিনি। তাঁর কথায়, “প্রথমে ভয় লাগলেও ছেলেমেয়েদের জন্যই জেদ চেপে বসে।’’

তিনি জানান, সকালে বাড়িতে রান্না করে ছেলেমেয়েদের খাইয়ে স্কুলে পাঠিয়ে, নিজেও খেয়ে বেলা ১১টা নাগাদ টোটো নিয়ে গ্রামের বাড়ি থেকে তিনি বেরিয়ে পড়েন। পাছে টাকা খরচ হবে তাই দিনভর আর কোনও খাবারই মুখে তোলেন না তিনি। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে রান্না করেন। তিনি বলেন, “আর্ন্তজাতিক নারী দিবস কী আমি জানি না। জানতেও চাই না। সরকারি কোনও সাহায্য জোটেনি, জুটবেও না। আমি জানি রোজ সকালে উঠে আমাকে ছেলেমেয়েদের মুখে খাবার তুলে দিতে হবে। টোটো আমাকে চালাতেই হবে। এটাই ভবিতব্য।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Woman Toto
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE