Advertisement
E-Paper

বাস-ট্রেন, হোটেল, মলে কড়া নজরদারি

ঢাকায় রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হানার ধাক্কায় রাতারাতি উত্তরবঙ্গের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় চরম সতর্কতা জারি করেছে রাজ্য সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৬ ০২:২৯
ফাঁসিদেওয়ায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নেই। ফাইল চিত্র।

ফাঁসিদেওয়ায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নেই। ফাইল চিত্র।

ঢাকায় রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হানার ধাক্কায় রাতারাতি উত্তরবঙ্গের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় চরম সতর্কতা জারি করেছে রাজ্য সরকার। তুলনামূলক ভাবে অরক্ষিত এলাকায় আগের চেয়ে ৩ গুণ কড়াকড়ি শুরু করেছে বিএসএফ ও পুলিশ। সরকারি সূত্রের খবর, শনিবার রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ রাজ্যের সমস্ত জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সেও বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করেছেন। বিশেষত, বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকার বাস-ট্রেন, স্টেশন, হোটেল, মল সহ গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে সাদা পোশাকের পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

ওই নির্দেশ পেয়েই নদিয়া, কৃষ্ণনগর, বনগাঁ, হিলি, মহদিপুর, চ্যাংরাবান্ধা, ফুলবাড়ি, ফাঁসিদেওয়া, দিনহাটায় সীমান্তের অরক্ষিত এলাকায় তিন দফায় প্রতিটি যানবাহন তল্লাশি হচ্ছে। গোড়ায় দু’দফায় করছে বিএসএফ। তৃতীয় দফায় পুলিশের তল্লাশির মুখে পড়তে হচ্ছে সকলকেই। উত্তরবঙ্গের একাধিক পুলিশ অফিসার জানান, মূলত ইদ ও রথযাত্রা নির্বিঘ্নে করার জন্য রাজ্য পুলিশের ডিজি ভিডিও-কনফারেন্সের কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু, বাংলাদেশের জঙ্গি হানার ঘটনার প্রেক্ষাপটে ওই আলোচনায় সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর বিষয়টিকেও অগ্রাধিকার তালিকায় রাখার নির্দেশ দেন ডিজি।

বস্তুত, অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে ভারতের নানা এলাকায় জঙ্গিদের ঢুকে ডেরা তৈরির চেষ্টা নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশে ঘাঁটি গেড়ে জঙ্গিদের একাংশ সীমান্ত দিয়ে জাল ভারতীয় নোট, আফিম, গরু পাচার সহ নানা বেআইনি কার্যকলাপে যুক্ত বলে অনুমান পুলিশ ও বিএসএফের একাংশের কাছে। যেমন, গত বছরের ১৯ জুন জঙ্গি যোগের অভিযোগে মুম্বইতে ধরা পড়েন হিলির কৃষ্ণপুর এলাকার যুবক হাবিবুর ওরফে হাবিব মণ্ডল। ২০১২ সাল থেকে হাবিব মুম্বইতে কল সেন্টার চালাতেন। হিলি এলাকার ৬ জনের নামে তোলা সিম কার্ড হস্তান্তর হয়ে মুম্বই এবং উত্তরপ্রদেশ থেকে ব্যবহার করে মরক্কো, অস্ট্রিয়া, মরিশাস, সিরিয়া, দুবাইয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা আইএসডি ফোন করার সূত্র ধরে পুলিশ তাকে ধরে ফেলে। ওই মামলাটির তদন্তভার চলতি বছরের জানুয়ারিতে সিআইডিকে দিয়েছে।

গত বছর অগস্টে কুমারগঞ্জ থানার বোলতা গ্রামের বাসিন্দা ২৮ বছরের আলিমুল ইসলামকে জেহাদি সন্দেহে হায়দরাবাদ থেকে এসটিএফ গ্রেফতার করে। কুমারগঞ্জের ওই সীমান্ত গ্রামে মাদ্রাসা খুলে জেহাদি প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছিল সে। ওই ষড়যন্ত্রে সামিল ছিল পাকিস্তানের এক নাগরিকও। হায়দারাবাদের চেরলাপল্লিতে জেলবন্দি এক হুজি জঙ্গির সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছিল আলিমুল। তার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতা, নাশকতা, সীমান্তের ওপার থেকে এপারে লোক পারাপার ও আশ্রয় দেওয়া এবং জাল পাসপোর্ট তৈরির অভিযোগে মামলা দায়ের করে তদন্ত চলছে। এর বেশ কয়েক বছর আগে কুমারগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে কাশ্মীরি জঙ্গি রমজান আলি ঢুকেছিল বলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের কাছে কবুল করেন। কলকাতার আমেরিকান সেন্টারে জঙ্গি হানায় অভিযুক্তরা বিহার হয়ে উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখর হয়ে হিলি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও বিগত বছরগুলিতে সামনে এসেছে। হিলি এক্সপোর্ট অ্যান্ড কাস্টমস ক্লিয়ারিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অশোক অগ্রবাল বলেন, ‘‘যা সব ঘটছে তাতে কড়াকড়ি বেশি হওয়াই ভাল।’’

এই মুহূর্তে ইদ উপলক্ষে ৯ দিনের জন্য সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। চ্যাংরাবান্ধা এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অজয় প্রসাদ জানান, শুক্রবার থেকে ৯ দিনের জন্য সীমান্তে ব্যবসা বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, “ঢাকার ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। ইদের জন্য আপাতত ব্যবসা বন্ধ রয়েছে। আশা করি ব্যবসা চালু হলে যাতে কোনও প্রভাব না পড়ে সে ব্যাপারে সবাই উদ্যোগী হবেন।’’

তবে দুশ্চিন্তা বেশি রয়েছে কোচবিহারে হলদিবাড়ি এলাকায়। কারণ, গত বৃহস্পতিবার রাতে হলদিবাড়িতে সীমান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা পার হয়ে ঢোকার চেষ্টা করছিল ৪ জন। ভারতীয় সীমান্তে নজরে পড়তেই নদীর মধ্যে বিএসএফ তাদের তাড়া করে। তাদের হাতে একটি ব্যাগ ছিল। ব্যাগ ফেলে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে তারা অল্প দূরের সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যায়। ব্যাগটি উদ্ধার করার পর বিএসএফ তার মধ্যে ১ লক্ষ ৫০ হাজার বাংলাদেশি টাকা উদ্ধার করে। কেন তারা এত টাকা নিয়ে আসছিল তা বিএসএফ-এর কাছে এখনও রহস্য থেকে গেছে। এই বিশাল তিস্তার চরের মধ্যে এর আগেও বিএসএফ টাকা উদ্ধার করেছে।

আবার দক্ষিণ বেরুবাড়ির তিলডাঙা থেকে ধরধরাপাড়ার দূরত্ব ২ কিলোমিটার। নলজোয়াপাড়া থেকে ভোজারিপাড়ার দূরত্ব ৩ কিলোমিটার। সাঁওতালপাড়া থেকে বনগ্রাম ১১ কিলোমিটার। এই ১৬ কিলোমিটার এলাকায় এখনও কাঁটাতারের বেড়া হয়নি। মাঝে পড়ে শিরিষপাড়া, পাঠানপাড়া, ফকিরপাড়া, কীর্তনিয়াপাড়া, ছয়ঘরিয়াপাড়া, ফৌদারপাড়া, নতুনবস্তি, মানিকগঞ্জ, ডাকের কামাথ। এই গ্রামগুলির মধ্যে দিয়ে সতকুড়া হলদিবাড়ি সড়কে উঠে বাস এবং অটো ধরে সহজেই হলদিবাড়ি পৌঁছন যায়। প্রশাসনিক সূত্রেই জানা গিয়েছে, এই পথ দিয়ে বাংলাদেশের অনেক বাসিন্দা কাজের সন্ধানে ভারতে ঢোকেন। হলদিবাড়ি থেকে ট্রেন ধরে তারা জনারণ্যে মিশে যান। সেই সুযোগে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে বলেও দুশ্চিন্তা বেড়েছে সরকারের। হিলিতে সম্প্রতি বেশ কয়েকজন অনুপ্রবেশকারী ধরা পড়েছে। ছবিটা উদ্বেগের মালদহেও। সেখানে মোট ১৭১ কিলোমিটার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা রয়েছে। তার মধ্যে ৮১ কিলোমিটার এলাকা কাঁটাতারহীন।

Security Bus Train Mall
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy