Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

উত্তরের কড়চা

বোড়ো ভাষা অষ্টম তফশিলিভুক্ত একটি ভাষা, অথচ এ রাজ্যে তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষালাভের কোনও সুযোগ নেই। সেই সুযোগকে প্রশস্ত করার জন্য উপযুক্ত শিক্ষক তৈরি করার উদ্দেশ্যে একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হল উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে।

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৬ ০২:৪২
Share: Save:

বোড়ো কর্মশালা

বোড়ো ভাষা অষ্টম তফশিলিভুক্ত একটি ভাষা, অথচ এ রাজ্যে তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষালাভের কোনও সুযোগ নেই। সেই সুযোগকে প্রশস্ত করার জন্য উপযুক্ত শিক্ষক তৈরি করার উদ্দেশ্যে একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হল উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। আয়োজক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ ও বোড়ো রয়টার্স অকাদেমি, অসম। বোড়ো ভাষার প্রশিক্ষণের ব্যাকরণগত দিক, বিভিন্ন কালের প্রয়োগ কী ভাবে ঘটেছে, সর্বনাম পদের প্রয়োগ বৈচিত্র, শিশুদের পাঠ্যদানের ক্ষেত্রে কী ভাবে ব্যাকরণের এই বিষয়গুলি প্রয়োগ করা হবে জেনে নিলেন শিক্ষার্থীরা। কোনও একটি গল্প অথবা কবিতা গল্পের মোড়কে কিংবা খেলার ছলে শিশুর মনে কী ভাবে প্রবেশ করানো যায়, সাহিত্যগত দিকটিও শেখানো হল তাদের। শিশুদের অপছন্দের বিযষয়গুলিকে ভাল লাগানোর ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিবেশ ভাষাশিক্ষার মধ্য দিয়ে তৈরি করা যায় কী ভাবে? দৈনন্দিন জীবনে এই ভাষা কী ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং লিখিত রূপের মধ্যে দিয়ে তার ব্যবহার কী ভাবে ঘটছে, মনস্তত্ত্বমূলক দিক এবং ব্যবহারিক বিদ্যার মধ্য দিয়ে তার অ আ ক খ শিখে নিলেন শিবিরের অংশগ্রহণকারীরা। মে মাসের পাঁচটি রবিবার জুড়ে চলা এই কর্মশালায় অংশ নেন দেড় শতাধিক শিক্ষক ও পড়ুয়ারা। উদ্বোধক ছিলেন অসমের বোড়োল্যান্ড টেরিটোরিয়ালের ডেপুটি চিফ খাম্বা বরগয়ারি। উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা আইন বাণিজ্য অনুষঙ্গের অধ্যক্ষ পলাশরঞ্জন সেনগুপ্ত, বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান উৎপল মণ্ডল, বোড়ো ভাষার গবেষক দীননাথ বসুমাতারি (ডিরেক্টর, কলেজ অ্যান্ড ইউনিভার্সিটি ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল, বোড়ো ইউনিভার্সিটি, কোকরাঝাড়), মঙ্গল সিংহ হাজোরিয়া প্রমুখ। কর্মশালার মুখ্য অধিকর্তা দীপক কুমার রায় জানান, রাজ্যে বেসরকারি ভাবে বোড়ো ভাষায় পাঠদানের গুটিকতক স্কুল রয়েছে, সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে, সরকারি বেসরকারি স্তরেও এ ধরনের ভাষা শিক্ষার পথ প্রশস্ত করার জন্য এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে।

কবি পক্ষ

অনিতা দত্ত

কবিপক্ষ জুড়ে প্রতি বৃহস্পতিবার রবীন্দ্রনাথকে কেন্দ্র করে নানা বিষয়ে আড্ডায় মাতলেন ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, গবেষক ও সাহিত্যপ্রেমীরা। কবির জন্মমাসের প্রথম বৃহস্পতিবার ‘রবীন্দ্রনাথের পল্লিভাবনা’ নিয়ে দেবব্রত সিহের কাছ থেকে জানা গেল পল্লি উন্নয়নে রবীন্দ্রনাথ কী কী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কৃষিতে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে চাষ করার পদ্ধতি প্রচলন করেন, তৈরি করেন সমবায় ব্যাঙ্ক, যার থেকে কৃষকরা স্বল্প সুদে ঋণ পাবেন, মহাজনী প্রথা থেকে মুক্তি পাবেন। গ্রামের নতুন রাস্তা নির্মাণ করে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্ব দেন। পরবর্তী আড্ডায় রবীন্দ্র সাহিত্যের সঙ্গে হিন্দি সাহিত্যের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন কঙ্কণ দত্ত। তিনি বলেন, বহু হিন্দি সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যের অনুকরণে সাহিত্য রচনা করেছেন। প্রসঙ্গ সূত্রে জানান, সুমিত্রানন্দন পন্থের সাহিত্যকর্মের কথা। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ভাবনায় উঠে আসে মঙ্গলবোধ। মেঘদূত, শকুন্তলা, ঊর্মিলার মতো পৌরাণিক চরিত্রগুলি নব মাত্রায় গড়ে উঠল কবির কলমে, জানা গেল সুজয় মণ্ডলের কথায়। রবীন্দ্রনাথের সমাজ ভাবনা নিয়ে আড্ডায় মাতলেন দীপক চক্রবর্তী। রবীন্দ্রগানে বিদেশি সুরের প্রভাব এবং সমসাময়িক প্রভাবহীন রবীন্দ্রকৃত বেশ কয়েকটি গান কবির জন্মবাসরে রেকর্ডে বাজিয়ে আড্ডার মেজাজটি বুনে দেন মহম্মদ আবদুল ওয়াহাব। এই দু’ ধরনের গানের তুলনামূলক আলোচনাও করেন তিনি। রবীন্দ্রনাথের ‘গুপ্তধন’ ছোট গল্পে কবির পরিবেশ ভাবনা কী ভাবে ধরা পড়েছে তা উঠে আসে দিলীপ দেবনাথের কথায়। বিশ্বে রবীন্দ্রনাথ কী ভাবে গৃহীত হয়েছেন এ সব নিয়ে বললেন মনোজ ভোজ। শুধুই কি আলোচনা, কেউ পড়লেন রবীন্দ্রকবিতা, কেউ বা কণ্ঠে নিলেন রবীন্দ্রগান, যোগ হয়েছিল নৃত্যের ছন্দও। এহেন আড্ডার আয়োজক সামসীর ‘ফোর্থ সাবজেক্ট’ পত্রিকা গোষ্ঠী।

উত্তর ভাষা

বালুরঘাটের ‘উত্তর ভাষা’ সাহিত্য পত্রিকার (সম্পাদক কৌশিক রঞ্জন খান) নবম বর্ষের প্রথম সংখ্যা প্রকাশ উপলক্ষে বসেছিল কবিতা-বাসর, ছিল আলোচনাসভা। ‘লিটল ম্যাগাজিন চর্চায় জেলার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা’ বিষয়টিকে সামনে রেখে আলোচক অমল বসু জানালেন, নতুন নতুন ছেলেমেয়েরা যে গল্প, কবিতা লেখায় উৎসাহী হচ্ছে লিটল ম্যাগাজিনগুলিই তার প্রমাণ। তাঁর মতে, লেখার পাশাপাশি মত বিনিময়ও দরকার। এ ক্ষেত্রে আড্ডার একটি ভূমিকা রয়েছে। এতে লেখার মান উন্নত হয় এবং সাহিত্য জগৎ সমৃদ্ধ হয়। লিটল ম্যাগাজিনের মধ্যে প্রতিবেশী রাজ্যের বিশেষ করে অসম, ওড়িশা, বিহারের সাহিত্য কর্মগুলি অনুবাদের মধ্য দিয়ে তুলে আনতে হবে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে ভাষাচর্চার মধ্য দিয়েই পারস্পরাকি বন্ধন দৃঢ় করা সম্ভব। এমন কথা জানা গেল নির্মলেন্দু তালুকদারের কাছ থেকে। উত্তর ভাষা পত্রিকার নবম বর্ষের প্রথম সংখ্যার আনুষ্ঠানিক প্রকাশ ঘটে গল্পকার দুর্গাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে। সোমদত্তা চক্রবর্তী এবং বিভাস রায়ের একক নিবেদন ছিল রবীন্দ্রগান। বাংলা ব্রান্ডের গান পরিবেশনায় প্রদীপ্ত-সুশান্ত। স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন স্থানীয় কবিরা।

শতকিয়া

শুভাশিস দাশের একশোটি ‘তির্যক ছড়া’ সংকলিত হয়েছে ‘শতকিয়া’তে। গ্রন্থের ছড়া থেকে ছড়ায় উঠে এসেছে এই সময়ের বিভিন্ন মুখ। অক্ষরবিন্যাসে তৈরি হয়েছে ‘শিক্ষানীতি বাদ দিয়েছি/অর্থনীতি বুঝি/বিদ্যালয়ে গড়হাজির/বাসায় ছাত্র খুঁজি’। অথবা ‘স্বাধীনতার স্বাদ পাই না/স্বাধীন দেশে থাকি/সবার জন্য নেই অন্ন/লজ্জা কোথায় রাখি?’—এমন টুকরো টুকরো ছবি। প্রত্যেকটি ছড়ার সঙ্গে সম্পর্কিত কার্টুন, গ্রন্থটির অন্যতম আকর্ষণ। ছন্দ এবং বিষয়বিন্যাসে পাঠকের মনে গাঁথা থাকতেই পারেন ছড়াকার।

বিদ্যাদেবীর স্বপ্ন

সুদীপ দত্ত

রাজবংশী সম্প্রদায়ের মেয়েটি পেয়ারা গাছে উঠে আকাশ ছুঁতে চাইত। তখন সে মাত্র তৃতীয় শ্রেণি। বাবা মা কেউই স্কুলের সীমানা পার হননি। প্রীতিকণা মল্লিক কিন্তু থমকে দাঁড়াননি। অনায়াসে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ধাপ পেরিয়ে প্রাণিবিদ্যায় মাস্টার ডিগ্রি পেয়েছেন। প্রথম চাকরি একটি স্কুলে। তখন তিনি ২২। ওই সময়েই হাজির হতেন উপনিষদ সম্পর্কে আলোচনাচক্রে। উপস্থিত থাকতেন বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন আয়োজিত সাহিত্যচক্রেও। কেন? ‘সবটাই জানতে চাওয়ার আগ্রহ থেকে’। পরবর্তী সময়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন নাথুয়াহাট ধাপি দেবী বালিকা বিদ্যালয়ে। এক কথায় এলাকার মানুষদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে অর্থ সাহায্য চেয়েছেন। সেই অর্থে তৈরি হয়েছে স্কুলের চেয়ার টেবিল বেঞ্চ। মূলত রাজবংশী সম্প্রদায়ের মেয়েরাই তাঁর স্কুলের পড়ুয়া। দুঃস্থ ছাত্রীদের কখনও নিজের টাকায় বই কিনে দিয়েছেন। স্কুলের অফ পিরিয়ডে ‘লাইব্রেরি ক্লাস’ চালু করেছেন। পরিকল্পনা আছে স্কুল ম্যাগাজিন প্রকাশ করার। উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টির প্রায় হাজার দেড়েক ছাত্রীদের সামলাবার পাশাপাশি অফিস সংক্রান্ত যাবতীয় কাজকর্মও একাই সামলাতে পারেন। একসময় লিটল ম্যাগাজিনে লিখতেন। এখন কাজের চাপে হয়ে ওঠে না। তবে উপস্থিত থাকেন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে। একদিন তাঁর স্কুলের মাঠে থাকবে বিদ্যাদেবীর ধবধবে সাদা একটি মূর্তি। প্রতিদিন পড়ুয়ারা তার পায়ে অ়ঞ্জলি দেবে একরাশ ফুল। স্বপ্ন, তবু এ রকম হতে পারে না প্রীতিকণার স্কুল?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Uttorer korcha Uttar Karcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE