দু’বছর পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও ওই দিনটার কথা মনে পড়লে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননা তিনি। নিজেকে যেন কিছুতেই সংযত করতে পারেন না। প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন দিনহাটার বাসিন্দা সবিতা ভৌমিক। তিনি, “বলুন তো কী লাভ হল? কোথায় কালো টাকা? শুধু শুধু কত জীবন চলে গিয়েছে! কত কষ্ট হয়েছে মানুষের!” কারও কাছেই যুতসই উত্তর তিনি পাননি।
নোট বাতিলের পরে ২০১৬ সালের ১৩ নভেম্বর দীর্ঘসময় টাকা তোলার জন্য এটিএম লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে বাড়ি ফিরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন সবিতাদেবীর স্বামী ধরণীকান্ত ভৌমিক। দ্রুত তাঁকে প্রথমে হাসপাতাল পরে নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। দু’দিন দু’রাত লড়াই করেও বেঁচে ফিরতে পারেননি ধরণীবাবু। ১৫ নভেম্বর মৃত্যু হয় ধরণীবাবুর। পেশায় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক স্বামীর এমন মৃত্যুতে দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে কার্যত দিশেহারা হয়ে পড়েন সবিতাদেবী।
বুধবার সে কথা বলতে বলতেই বার বার আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন তিনি। সবিতাদেবী জানান, তাঁর মেয়ে শ্রাবণী এ বারে স্নাতকোত্তর হয়েছেন। ছেলে শৈবাল উচ্চ-মাধ্যমিক পাশ করে এ বারে অঙ্কে অনার্স নিয়ে দিনহাটা কলেজে ভর্তি হয়েছেন। তিনি বলেন, “এই দীর্ঘসময় কী ভাবে যে চলেছি আমি জানি। আমার পাশে কেউ ছিল না। পেনশন চালু হয়েছে দু’মাস আগে। চাকরি এখনও মেলেনি। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা, সংসার খরচ চালাতে হয়েছে আমাকে।” তাঁর আক্ষেপ, ওই সময় অনেক নেতা থেকে শুরু করে অনেকেই তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছিলেন। পরে আর কাউকেই তিনি পাননি। সে সব কথা বলতে বলতেই তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। বলেন, “পাঁচশো, হাজার টাকার নোট বাতিল করে কী লাভ হয়েছে জানি না। আমার তো কোনও লাভ হয়নি এ টুকু বুঝি। আমার এতবড় ক্ষতি হয়েছে যা কোনওভাবেই পূরণ করা সম্ভব না।” তাঁর আর্জি, এ বারে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক।