Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

উত্তরের কড়চা

বইয়ের টানে কলকাতার কলেজ স্ট্রিটে ছুটে যাওয়া বড্ড ঝকমারি। তবুও বছরে একবার অন্তত কলেজ স্ট্রিটে যেতেন কোচবিহারের প্রয়াত কবি অরুণেশ ঘোষ। সময়টা বাছতেন বইমেলাকে মাথায় রেখে। কিন্তু ভাল বইয়ের জন্য কেবল কলকাতার মুখ চেয়ে থাকতে হবেই বা কেন?

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৪৭
Share: Save:

দেখা হবে বইমেলায়

এই শীতে উত্তর মিলবেই

বইয়ের টানে কলকাতার কলেজ স্ট্রিটে ছুটে যাওয়া বড্ড ঝকমারি। তবুও বছরে একবার অন্তত কলেজ স্ট্রিটে যেতেন কোচবিহারের প্রয়াত কবি অরুণেশ ঘোষ। সময়টা বাছতেন বইমেলাকে মাথায় রেখে। কিন্তু ভাল বইয়ের জন্য কেবল কলকাতার মুখ চেয়ে থাকতে হবেই বা কেন? কেন খোদ উত্তরবঙ্গেই মিলবে না সদ্য-ছাপা বই-ম্যাগাজিন? কেন বসবে না সাহিত্য-সংস্কৃতির চাঁদের হাট? এমন ভাবনা থেকেই উত্তরবঙ্গে বইমেলার গোড়াপত্তন করেন বইপ্রেমী, বই ব্যবসায়ীরা, তিন দশক আগে। এখনও শীত পড়লেই খোঁজ পড়ে হয় বইমেলার নির্ঘণ্টের। জলপাইগুড়িতে এ বার ৩০ ডিসেম্বর বইমেলা শুরু, ফণীন্দ্রদেব ইন্সটিটিশনের মাঠে। তারপরেই কোচবিহার। জেলা ‘লোকাল লাইব্রেরি অথরিটি’-র উদ্যোগে ৫-১১ জানুয়ারি রাসমেলা ময়দানে বইমেলা বসবে। স্টল থাকবে ১২৫টি। বইমেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় জানান, এ বার মেলার থিম সার্ধশতবর্ষে পঞ্চানন বর্মা, ও শতবর্ষে মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ। মালদহে সরকারি উদ্যোগে বইমেলা হয় মালদহ শহরে, কলেজ মাঠে। এ বছর ২৬তম বইমেলা হচ্ছে ৭-১৩ জানুয়ারি, থিম ‘গৌড়বঙ্গ’। স্টল হবে ২২০। আর চাঁচলে বইমেলা হয় কলকাতার সঙ্গে প্রায় একই সময়ে -- জানুয়ারি মাসের শেষে বা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। ‘চাঁচল মহকুমা বইমেলা’-র এ বার ২০ বছরে পড়ল। মেলা বসে চাঁচল সিদ্ধেশ্বরী স্কুলের সামনের মাঠে। ২০১৫ সালের বইমেলার দিনক্ষণ এখনও স্থির হয়নি, জানিয়েছেন বইমেলা কমিটির সম্পাদক কল্যাণ পান্ডে। শিলিগুড়ির ‘উত্তরবঙ্গ বইমেলা’ ৩২ বছরে পড়ল। এ বার ১৩-২২ মার্চ ‘উত্তরবঙ্গ বইমেলা’ হবে। প্রতি বছর উত্তরের কোনও একটি জেলা হয় তার ‘থিম।’ গত বছর ছিল কোচবিহার। এ বছর কোন জেলা? এখনও ঠিক হয়নি, জানালেন মেলা কর্তৃপক্ষ। সদ্য জন্মেছে নতুন জেলা, আলিপুরদুয়ার। তা বলে বইমেলা শুরু করতে দেরি করছে না মোটেই। প্রথম জেলা বইমেলা কবে হবে, থিম কী হবে, কেমন করে এগোবে প্রস্তুতি, এমন নানা বিষয় স্থির করতে কাল, বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসবে জেলা প্রশাসন।

দেখার মতো

হারিয়ে যাওয়া সারিন্দা, ব্যানা, দোতারা, গরুর গাড়ির চাকা, ঢেঁকি, উরুন-গাইন... বাংলার সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যাওয়া এ রকম সব টুকিটাকি সযত্নে কুড়িয়ে-বাড়িয়ে জাদুঘর গড়ছে ধূপগুড়ির পূর্ব মল্লিকপাড়া স্কুল। ক্যাম্পাসে তৈরি হচ্ছে ঢাকার আন্তর্জাতিক শহিদ মিনারের আদলে সুদৃশ্য স্থায়ী স্মারক, তাতে স্কুলের ভুমিদাতাদের নাম খোদাই করা। উপলক্ষ হীরকজয়ন্তী। ১৯৫৪ সালে অনুমোদন পেয়েছিল স্কুলটি। গত ২১ ফেব্রুয়ারি বর্ষব্যাপী হীরকজয়ন্তী কর্মসূচির সূচনা হয়।

ছবিটি ধূপগুড়ির পূর্ব মল্লিকপাড়া স্কুলের।

প্রধান শিক্ষক অমিতকুমার দে নিজের খরচে স্কুল জুড়ে বসাচ্ছেন ক্লোজ সার্কিট টিভি ক্যামেরা। পাঠাগার নতুন করে সাজিয়ে তোলার জন্য গ্রামের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে বই ভিক্ষা করছে পড়ুয়ারা। ১৮ ডিসেম্বর শিক্ষক,পরিচালন কমিটির সদস্য, অভিভাবক ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা পাঠাগারে বই দান করবেন। ২২ থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে মূল অনুষ্ঠান। জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের আবাসিকেরা মঞ্চস্থ করবেন রবীন্দ্রনাথের ‘রথের রশি’। ডুয়ার্সের মেচ, আদিবাসী, রাভা, ভাওয়াইয়া শিল্পীদের অনুষ্ঠান ছাড়াও চলচ্চিত্র উত্‌সবের আয়োজন রয়েছে। সেই সঙ্গেই স্কুলমাঠে চলবে বইমেলা। রঙিন হয়ে প্রকাশিত হচ্ছে স্কুলের পত্রিকা ডুডুয়া। ২৩ ডিসেম্বর প্রাক্তনীরাও পুনর্মিলন উত্‌সবে সামিল হবেন।

অকূলে কুলিক

নজর নেই কারও। তাই দীর্ঘদিন ধরে চরে ধান চাষ হচ্ছে। দীর্ঘদিন সংস্কার হয়নি। তাই নাব্যতাও কমে গিয়েছে। আগের মতো মাছ আর মেলে না। অথচ নদী লাগোয়া কুলিক পক্ষিনিবাসের পরিযায়ী পাখিরা মাছ ও জলজ পোকামাকড় খেয়েই বাঁচে। এ হেন দুরবস্থা থেকে রায়গঞ্জের কুলিক নদীকে বাঁচাতে সচেতনতা প্রচারে নামতে চলেছে উত্তর দিনাজপুরের বিভিন্ন পশুপ্রেমী সংগঠন।

‘পিপল ফর অ্যানিম্যাল’ নামে এমনই একটি সংগঠনের রায়গঞ্জ ইউনিট সম্পাদক অজয় সাহার মতে, নাব্যতা কমে গিয়ে চর বেরিয়ে পড়ার সুযোগ নিয়েই স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ ধানচাষ করছেন। তাই এলাকাবাসীকে নিয়ে একটি কর্মশালা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সংগঠনের জেলা সম্পাদক গৌতম তান্তিয়া জানান, খুব শীঘ্রই মাইকযোগে ও লিফলেট বিলি করে প্রচারও চালাবেন তাঁরা। রায়গঞ্জের বিভাগীয় বনাধিকারিক দ্বিপর্ণ দত্তের আশ্বাস, পাখিদের খাদ্যাভাবের ব্যাপারে খোঁজ নেবেন, প্রয়োজনে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেষ ইঞ্জিন

স্বাধীনতার আগে তত্‌কালীন জেলা বোর্ডের তৈরি সেতু উদ্বোধনের জন্য তোরণে ইউনিয়ন জ্যাক। সেতুর উপরে বোর্ডের সদস্য আর হাফ প্যান্ট-কোট পরণে মাথায় গোল টুপি ইঞ্জিনিয়ারের দল। সাদা-কালো ছবিটি দেখা গেল জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে অরাজনৈতিক কর্মী সংগঠন পঞ্চায়েত এমপ্লয়িজ ফোরাম থেকে প্রকাশিত তমোহন পত্রিকায়। শুধু ওই ছবিই নয়। দোমহনী স্টেশন থেকে ছাড়া শেষ মিটার গেজ লাইনে স্টিম ইঞ্জিনের একটি ছবিও রয়েছে। আছে স্বাধীনতার আগে পত্রপত্রিকায় ছাপা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের ছবিও। ১৯৬৩ সালে ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল জিলা পরিষদ অ্যাক্ট’-এ জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই হিসেবে এ বছরই তাদের ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে। পত্রিকার সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, ‘মন্দা যেমন বাজারে, তেমনিই মনের গহীন গভীরতায় মন্দার চরা ক্রমশ সঙ্কুচিত করেছে আমাদের।’ দুর্লভ ছবি ছাড়াও রয়েছে প্রবন্ধ, কবিতা, ছড়া, এমনকী কিশোর-কিশোরীদের পাতাও।

বড়রানির মন্দির

কথাটার মানে বড় রানি। ১৮৮৩ সালে কোচবিহার শহরে মহারাজ শিবেন্দ্রনারায়ণের অন্যতম প্রধান মহিষী কামেশ্বরী দেবী একটি দুর্গামন্দির গড়িয়েছিলেন। পুজোআচ্চার ব্যবস্থা, দেখভালও তিনি নিজেই করতেন। মহারানির ইচ্ছায় খোলা হয়েছিল অন্নসত্র, সেখান থেকে বহু মানুষ প্রসাদ পেতেন। সেই থেকেই মন্দিরটি ‘ডাঙ্গর-আই’ অর্থাত্‌ বড় রানির মন্দির হিসেবে পরিচিত হয়ে যায়। শহরের উত্তরপ্রান্তে গুঞ্জবাড়ি এলাকায় কোচবিহার বি টি অ্যান্ড ইভনিং কলেজের উল্টো দিকে এই মন্দিরে আজও দুর্গা, কালী, জগদ্ধাত্রী, বাসন্তী পুজো হয়। পুরোহিত, প্রহরী, দেউড়ি সবই আছেন। কিন্তু মন্দিরের ভগ্নদশা। দিঘির ঘাট ভেঙে গিয়েছে, মন্দির চত্বরের অবস্থাও তথৈবচ। ভক্তের সংখ্যাও কমছে। কী করে অনাথ দশা ঘুচবে, জানে শুধু সময়।

বাসর থেকে

বারো বছর পার করে ত্রয়োদশ সংখ্যায় পৌঁছে গেল মঞ্চ একুশে। উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ থেকে প্রতি বছর বেরোচ্ছে পত্রিকাটি। মাসিক সাহিত্যবাসর থেকে বাছাই করা প্রবন্ধ, ছোটগল্প, কবিতা নিয়ে পত্রিকাটি সম্পাদনা করছেন দুলালচন্দ্র ভদ্র। সাহিত্যবাসরের বিষয় বৈচিত্র্য রয়েছে। যেমন ১৪৭তম অধিবেশনের বিষয় ছিল ‘সম্পর্ক টানটান/ প্রাণ আনচান’। ১৫৪তম অধিবেশনের বিষয় ছিল, ‘গল্পের রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে’।

উদয়ের পথে

রঙ্গমঞ্চ থেকে রাজনীতির মঞ্চে এসেছেন বেশ কিছু সাংসদ-মন্ত্রী। কিন্তু নাট্যমঞ্চের প্রেমে রাজনীতির মঞ্চকে ‘দুচ্ছাই’ বলে চলে এসেছেন, এমন মানুষ দেখতে চাইলে আসতে হবে শিলিগুড়ি। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের চাইতে যাঁর কাছে ঢের বেশি গুরুত্ব পেয়েছে ‘মিত্র সম্মিলনী’। শহরের শতবর্ষ-প্রাচীন নাটকের ক্লাব। দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার পরেও পার্টি অফিসের চেয়ে বেশি সময় দিয়েছেন ক্লাবেই। কয়েক মাসের রাজনীতির পদ থেকে সরে গিয়ে হাঁপ ছেড়েছেন। তাতে শিলিগুড়ির নাটক-সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিমণ্ডলে আরও সমাদৃত হয়ে উঠেছেন উদয়বাবু। এখন শিলিগুড়ি শহরে নাট্যচর্চার শতবর্ষ পূর্তি উদযাপনের আয়োজনে অন্যতম প্রধান শরিক উদয়বাবু পরিশ্রম করে চলেছেন। এই ডিসেম্বরেই উদযাপন শুরু হয়েছে। উদয়বাবু জানালেন, ১০০ বছর আগে ১৪ ডিসেম্বর এই ‘মিত্র সম্মিলনী’-র কাঠের মঞ্চেই রাজা হরিশ্চন্দ্র নাটকটি মঞ্চস্থ হয়েছিল। এ বছর মিত্র সম্মিলনীর নিজস্ব মঞ্চ রাজা হরিশচন্দ্রের ১০০ বছর পূর্তি। এই উপলক্ষে ১৩ ডিসেম্বর নাটকটি নতুনভাবে মঞ্চস্থ করা হবে। ১৯৯১ সালের জেলা যুব কংগ্রেস সভাপতির পদ ছেড়ে ১৯৯২ সালে রেকর্ড ভোটে জয়ী হয়ে মিত্র সম্মিলনীর কার্যকরী সমিতিতে আসেন উদয়বাবু। নানা দায়িত্ব পালনের পর ২০০২ সাল থেকে আজও সম্পাদকের পদে কাজ করছেন। ঝোঁক আছে খেলার জগতে-- টিটি, দাবা-সহ বিভিন্ন খেলার সঙ্গে যুক্ত সংস্থায় দায়িত্ব সামলেছেন। সব কাজের মধ্যে মন পড়ে থাকে ক্লাবে। তাঁর কথায়, “মিত্র সম্মিলনী আমার দ্বিতীয় মা। রাজনীতির চেয়ে মিত্র সম্মিলনীর আলোচনায় বাড়তি উত্‌সাহ পাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

uttar karcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE