নিচু গলা। আচরণে দ্বিধা। শব্দ নির্বাচনে সতর্ক।
পায়ে পায়ে তিন জনে এগিয়ে গেলেন বুথ অফিসের দিকে। সঙ্গী পুলিশ কনস্টেবলকে বললেন একটু দূরেই দাঁড়িয়ে থাকতে। তারপরে শিলিগুড়ির খালপাড়ার গাঁধী ময়দানে তৃণমূলের ওই বুথ অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে প্রথমে বোঝার চেষ্টা হল, ভিতরে ঠিক কত জন আছেন। প্রায় মিইয়ে-যাওয়া গলায় তাঁদের এক জন তৃণমূল কর্মীদের বললেন, “আপনারা বোধহয় ভুল করে পোস্টারটা সরকারি জায়গায় টাঙিয়েছেন। পারলে এটা খুলে দিন। না হলে বুঝতেই পারছেন, বাধ্য হয়ে মামলা করতে হবে।”
তারপরে আর দেরি নয়। সঙ্গে সঙ্গেই গাড়ি করে এলাকা ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে গেলেন জেলা নির্বাচন দফতরের মডেল কোড অফ কন্ডাক্টের (এমসিসি) কর্মীরা।
হাবরা ও হাওড়ার ঘটনার পরে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে সরকারি সম্পত্তিতে ভোটের প্রচারের জন্য লাগানো বিভিন্ন দলের পতাকা ফেস্টুন খুলতে গিয়ে এমনই সতর্ক ছিলেন এমসিসি কর্মীরা। সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনার হাবরাতে সরকারি সম্পত্তির গায়ে পোস্টার, ব্যানার খোলাতে গিয়ে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের হাতে হেনস্থা হন স্থানীয় বিধায়ক দীনবন্ধু গায়েন। সেই ঘটনায় ১৫ জন তৃণমূল কর্মী গ্রেফতারও হয়েছেন। কিন্তু তারপরে মঙ্গলবারই হাওড়ার কাসুন্দিয়ায় বাতিস্তম্ভ থেকে তৃণমূলের পতাকা খুলে ফেলার সময় রীতিমতো উত্তেজনার সঞ্চার ঘটে। অভিযোগ, হেনস্থা হয়েছেন এক এমসিসি কর্মী।
কিন্তু এমসিসি দলগুলিকে পরিদর্শন করতেই হচ্ছে জেলায়। মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে এমসিসি কর্মীদের দলটি কাজ করেছে অতি সাবধানে। সদস্যরা এ দিন শহরের সুভাষপল্লি, গাঁধী ময়দান, কলেজপাড়ায় গিয়েছিলেন। সব জায়গাতেই দূর থেকে ছবি তোলেন তাঁরা। রাজনৈতিক দলগুলির দফতরে গিয়ে কথা বলার সময় খুব সতর্ক থেকেছেন।
তবে শহরের তৃণমূল কর্মীরা তাঁদের সঙ্গে সহযোগিতা করেছেন। তৃণমূলের উত্তরবঙ্গ কোর কমিটির চেয়ারম্যান গৌতম দেব বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আসার আগেই আমাদের দলের হোর্ডিং খুলে দিয়েছে এমসিসি সেল। এখন যদি কেউ ভাব দেখায় যে তৃণমূলের হোর্ডিং-পতাকা খুলতে ভয় পাচ্ছে, সেটা মিথ্যে। আমার কর্মীদের বলাই রয়েছে, এমসিসি কর্মীদের সঙ্গে সব রকম সহযোগিতা করতে।”
এমসিসি কর্মীদের কিন্তু বক্তব্য, এখনও পর্যন্ত মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করতে পেরেছেন তাঁরা। তবে কয়েকটি জায়গায় কাজ করার বিষয়ে ভয় পাচ্ছেন। সুভাষপল্লির চিত্তরঞ্জন কলোনি, হিলকার্ট রোডের ডাঙ্গিপাড়া, ঝঙ্কার মোড় এলাকা, প্রধাননগরের বাঘা যতীন কলোনি, চম্পাসারি এলাকায় কাজ করতে ভয়ের কথা এমসিসি-এর অফিসার ইন চার্জকে জানিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। যদিও এ বিষয়টিকে খুব বেশি গুরুত্ব দিতে নারাজ ওসি এমসিসি বিক্রম রায়। তিনি বলেন, “আমাদের যা কাজ তা করতেই হবে। আমাদের কর্মীরা দক্ষতার সঙ্গেই কাজ করছেন। দু-এক জায়গায় সমস্যা রয়েছে বটে, তবে তা গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়।”
শিলিগুড়ি পুর এলাকায় এমসিসির দু’টি দল কাজ করছে। দু’দলকেই দেওয়া রয়েছে ক্যামেরা। তাঁরা যেখানেই যাচ্ছেন, এলাকার ছবি ক্যামেরাবন্দি করে নিচ্ছেন। যাতে পরে কেউ তাঁদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করতে না পারেন।
হাসমিচকে মোড়ে বড় বড় হোর্ডিংয়ে ঢাকা রয়েছে গোটা এলাকা। কংগ্রেস, বিজেপি, তৃণমূল বা বামফ্রন্ট সব দলের হোর্ডিংই লাগানো রয়েছে। সবগুলিরই ছবি তোলেন কর্মীরা। কিন্তু খুলতে বলবেন কাকে? কোথাও কংগ্রেসের হোর্ডিং রাস্তায়। কোথাও তৃণমূলের। কোথাও বা সিপিএমের। বিজেপিও পিছিয়ে নেই। শেষমেশ এ দিন কোনও পোস্টারই খোলা হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy