Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দিল্লিতে অসুস্থ ঘিসিঙ্গের কাছে যাব, গুরুঙ্গের ঘোষণায় জল্পনা

অসুস্থ ঘিসিঙ্গকে দেখতে যাবেন বলে জানিয়েছেন জিটিএ প্রধান বিমল গুরুঙ্গ। বৃহস্পতিবার দার্জিলিঙের গোর্খা রঙ্গমঞ্চের এক অনুষ্ঠানে এই কথা বলেন তিনি, যা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। এক সময়ে ‘গুরু-শিষ্য’ বলেই দু’জনকে চিনতেন সবাই। চার দশকের পুরনো সেই সম্পর্কে চিড় ধরে ২০০৭ সালে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দার্জিলিং শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৪ ০২:১৬
Share: Save:

অসুস্থ ঘিসিঙ্গকে দেখতে যাবেন বলে জানিয়েছেন জিটিএ প্রধান বিমল গুরুঙ্গ। বৃহস্পতিবার দার্জিলিঙের গোর্খা রঙ্গমঞ্চের এক অনুষ্ঠানে এই কথা বলেন তিনি, যা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।

এক সময়ে ‘গুরু-শিষ্য’ বলেই দু’জনকে চিনতেন সবাই। চার দশকের পুরনো সেই সম্পর্কে চিড় ধরে ২০০৭ সালে। সুবাস ঘিসিঙ্গের জিএনএলএফ ছেড়ে বেরিয়ে এসে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নামে পৃথক দল গড়েন বিমল গুরুঙ্গ। তার পরের বছরই গুরুঙ্গের তৈরি দলের ক্রমাগত ‘হুমকি’, ‘আন্দোলনে’র চাপে ঘিসিঙ্গ পাহাড় ছাড়তে বাধ্য হন। এমনকি ২০০৮ সালে স্ত্রীর মরদেহ নিয়ে পাহাড়ে উঠতে গেলে ঘিসিঙ্গকে মোর্চা সমর্থকরা বাধা দেন বলে অভিযোগ ওঠে। মাঝ রাস্তায় পাহাড় থেকে নেমে আসতে হয় ঘিসিঙ্গকে। সেই থেকে দুই নেতার মধ্যে কোনওরকম সম্পর্কই নেই বলেই জানা যায়।

এ দিন গোর্খা রঙ্গমঞ্চে জিএনএলএফ সমর্থকদের মোর্চায় যোগদানের কর্মসূচি ছিল। তখনই জিএনএলএফ সুপ্রিমোকে দেখতে যাওয়ার কথা বলেন গুরুঙ্গ। আরও জানান, ঘিসিঙ্গকে কী ভাবে সাহায্য করতে পারেন, তা ভেবে দেখবেন।

গুরুঙ্গ জানিয়েছেন, আগামী ১৫ নভেম্বর তিনি এক সপ্তাহের জন্য দিল্লি যাচ্ছেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর দেখা করার কথা। তিনি বলেন, “দিল্লিতে থাকার সময়ে একদিন অসুস্থ সুবাস ঘিসিঙ্গকে দেখতে যাব। মানবিকতার খাতিরেই ওঁকে দেখতে যাব। ওর দ্রুত আরোগ্য কামনা করি এবং কী ভাবে ওঁকে সাহায্য করতে পারি সেটাও দেখব।”

থাইরয়েড-সহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত ঘিসিঙ্গ বর্তমানে দিল্লির একটি নার্সিংহোমে ভর্তি রয়েছেন।

এ দিন গুরুঙ্গের মুখে এই কথা শোনার পরে জিএনএলএফের এক নেতা বলছেন, “এক সময়ে আমাদের নেতাকে স্ত্রী-র মরদেহ নিয়ে পাহাড়ে উঠতে দেননি গুরুঙ্গ। এখন মানবিক সৌজন্য দেখানোর কথা শোভা পায় না।” তবে জিএনএলএফের দার্জিলিং শাখার আহ্বায়ক এম জি সুব্বা বলেন, “গুরুঙ্গ যে কথা বলেছেন, তা শুনে ভাল লেগেছে। তবে ওঁর (গুরুঙ্গ) সঙ্গে দেখা করবেন কিনা, অথবা সাহায্য নেবেন কিনা সেটা আমাদের দলনেতার উপরেই নির্ভর করছে।”

পাহাড়ের আরেক দল সিপিআরএমের মুখপাত্র গোবিন্দ ছেত্রীর কথায়, “গুরুঙ্গের সৌজন্যকে স্বাগত জানাই। অসুস্থ ঘিসিঙ্গকে দেখতে যাওয়া এবং সাহায্য করতে যাওয়ার যে কথা গুরুঙ্গ বলেছেন, রাজনীতিতে সেটাই হওয়া উচিত।”

আশির দশকে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে জিএনএলফের আন্দোলনের সময় থেকেই ঘিসিঙ্গের ঘনিষ্ঠ বৃত্তে গুরুঙ্গ ঢুকে পড়েন। নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে তৎকালীন দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিলের সিংমারি-তাকভর কেন্দ্রের উপ নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী হিসেবে জেতেন গুরুঙ্গ। সাংগঠনিক ‘দক্ষতার’ পরিচয় পেয়ে এবং নিজের ঘনিষ্ঠ বৃত্তে থাকার সুবাদেই গুরুঙ্গকে দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিলের যুব এবং ক্রীড়া বিভাগের দায়িত্ব দেন ঘিসিঙ্গ। এর পরে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি ছেড়ে ঘিসিঙ্গের ষষ্ঠ তফসিলের দাবিতে সরে আসাকে কেন্দ্র করেই দুই নেতার মধ্যে মতভেদ শুরু হয় বলে জানা গিয়েছে। পরে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে সামনে রেখেই বিমল গুরুঙ্গের উত্থান। সেই সময়ে পাহাড়ে উঠতে না পেরে এক সময়ে জলপাইগুড়ি এবং শিলিগুড়িতেও ভাড়া বাড়ি নিয়ে থাকতে হয়েছিল ঘিসিঙ্গকে।

গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা সূত্রে জানা গিয়েছে, গুরুঙ্গের নেতৃত্বে ১৫ জনের একটি দল দিল্লি যাচ্ছে। সেখানে জিটিএ এলাকায় উন্নয়নের নানা দাবি নিয়ে বৈঠক সহ গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আগামী ডিসেম্বরে দিল্লিতে মোর্চার অবস্থান আন্দোলনের প্রস্তুতি গুরুঙ্গ খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ghising ailment gurung
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE