রাত পোহালেই দেবীপক্ষের শুরু। যদিও, নিম্নচাপের টানে আকাশে সাদা মেঘের ভেলা উধাও। সিকিম পাহাড়ের চূড়া থেকে ডুয়ার্সের জঙ্গল কালো মেঘ ঢেকেছে। গত শনিবার থেকেই দফায় বৃষ্টি চলছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরের উপর ঘনীভূত হয়েছে নিম্নচাপ। এই নিম্নচাপ-ই আপাতত দুশ্চিন্তায় রেখেছে রয়েছে উত্তরবঙ্গ এবং সিকিমের ট্যুর অপারেটরদের। তাঁদের অনেকেই, মাস দেড়েক আগের এক বৃষ্টির স্মৃতিতে শিউরে উঠছেন। দেড় দিনের বৃষ্টিতেই ধসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল উত্তর সিকিমের সঙ্গে গ্যাংটকের যোগাযোগ, শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিঙের রাস্তাতেও ছোট-মাঝারি কয়েকটি ধসে যান চলাচল সাময়িক সময়ের জন্য বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বৃষ্টিতে ঘরবন্দি থাকতে হয় দার্জিলিঙের পর্যটকদের।
এনসেফ্যালাইটিসের প্রকোপের কারণে মালবাজার-বক্সা-আলিপুরদুয়ারে পুজোর মরসুমের অনেক বুকিং বাতিল হয়ে গিয়েছে বলে পর্যটন ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন। রোগ-প্রকোপ কাটার পরে এবার প্রকৃতির প্রতিকুলতার আশঙ্কা সংশয়ে রেখেছে তাঁদের। পুজোর পুজোয় পর্যটক ঠাসা সিকিম-দার্জিলিং-ডুয়ার্সে বৃষ্টি চলতে থাকলে বিকল্প পরিস্থিতি কী হবে তা নিয়েই আপাতত পরিকল্পনায় ব্যস্ত ট্যুর অপারেটররা।
উত্তরবঙ্গের পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে, পুজোর সময় দার্জিলিং এবং সিকিম পাহাড়ের না-শীত, না-গরম আবহাওয়া ভিন রাজ্যের তো বটেই, বিদেশের পর্যটকদেরও পছন্দ। পুজোর চার দিনে সিকিমের হোটেল বা রিসর্টের ঘর ফাঁকা পাওয়া এখন সম্ভব নয় বলে ট্যুর অপারেটররা জানিয়েছেন। একই ভাবে দার্জিলিঙের হোটেলগুলিতে ‘ঠাই নেই’ রব। পুজোর সময় থেকে শুরু করে দীপাবলি পর্যন্ত ডুয়ার্সের সরকারি, বেসরকারি রিসর্টে বুকিঙের লম্বা লাইন। এই পরিস্থিতে যাবতীয় পরিকল্পনা ভেস্তে যাওার উপক্রম তৈরি হয়েছে। সে কারণে অনেক ট্যুর অপারেটররাই বিকল্প পরিকল্পনা তথা ‘প্ল্যান-বি’ ছকে রেখেছেন। একাংশ ট্যুর অপারেটররা জানিয়েছেন, ডুয়ার্সে বৃষ্টি থাকলে পর্যটকদের কয়েকদিন পাহাড়ে পাঠানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়, আবার পাহাড়ে বৃষ্টি হলে প্রস্তাব দেওয়া হবে জঙ্গল সাফারির। তবে নিম্নচাপের জেরে এখন যেমন পাহাড়-জঙ্গল সর্বত্র একসঙ্গে বৃষ্টি চলছে, পুজোর সময়েও নিম্নচাপের সেই ভ্রূকুটি থাকলে সেক্ষেত্রে কী হবে তা নিয়ে অবশ্য সংশয়ে ট্যুর অপারেটররা।
উত্তরবঙ্গে ট্যুর অপারেটরদের সংগঠন এতোয়ার কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যালের কথাতে উদ্বেগের ছাপ স্পষ্ট। তিনি জানালেন, “এই তো কয়েকদিন আগে সন্ধ্যে থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়াতেই, সিকিমের কয়েক জায়গায় ধস নেমে রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পুজোর সময়ে ফের সেই পরিস্থিতি ফের তৈরি হলে পর্যটকদের নিয়ে চিন্তায় থাকতে হবে। পর্যটকরা অনেকেই অবশ্য বৃষ্টিতে ছাতা মাথায় পাহাড়ে ঘুরতে ভালবাসেন। কিন্তু আমাদের চিন্তা তো আর তাতে দূর হবে না।”
এনসেফ্যালাইটিসের পর বৃষ্টি আতঙ্কে ভুগছেন ডুয়ার্সের রিসর্ট মালিকেরা। বৃষ্টিতে পর্যটকদের রিসর্ট-বন্দি হয়ে থাকা ছাড়া কোনও উপায় নেই বলে আশঙ্কা করছেন রিসর্ট মালিকরা। লাটাগুড়ির রির্সট ওর্নাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দিব্যেন্দু দেব বলেন, “পুজোর সময়ের ট্রেনের টিকিট যখন বুকিং শুরু হল, তখন উত্তরবঙ্গে এনসেফ্যালাইটিসের প্রকোপ চলছিল। তাই বুকিং অনেকটাই কম হয়েছে। এনসেফ্যালাইটিসের প্রকোপ টাকার পর এবার শুরু হল বৃষ্টি। পুজোর সময়েও যদি বৃষ্টি চলে, তবে পর্যটকদের রিসর্ট ছেড়ে বের হওয়ায়ই দায় হয়ে পড়বে।” লাটাগুড়ি-মূর্তিতে এবার থেকে প্যাকেজ ট্যুর শুরু হয়েছে। বৃষ্টি মাথায় সেই ট্যুর কতটা সুষ্ঠু ভাবে হবে সে প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের মনে।
সিকিম এবং ডুয়ার্সে একদল পর্যটককে পুজোর সময় পাঠাচ্ছেন ট্যুর অপারেটর ভাস্কর দাস। তাঁর কথায়, “অন্য সবকিছু নিয়ে নিশ্চয়তা দেওয়া যায়, কিন্তু প্রকৃতির খেয়ালের কাছে সকলেই অসহায়। আশা করছি বৃষ্টি হবে না। যদি হয় তা হলে ঘুরতে এসেও পর্যটকদের রিসর্টে টিভি দেখে, বই পড়ে কাটাতে হবে। আর রক্তচাপ বাড়বে আমাদের মতো ট্যুর অপারেটরদের।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy