বার কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার অনুমোদন না নিয়ে বালুরঘাটে আইন কলেজ খুলে সেখানে পঠনপাঠন শুরু করায় বিপাকে পড়ছে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। এ দিকে পাঁচ বছরের পাঠ্যক্রম শেষে পাশ করার পরেও পশ্চিমবঙ্গের বার কাউন্সিল গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা আইনের ডিগ্রিকে মান্যতা না দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কলেজের ২০১৩ সালে পাশ করা ১৫ জন ছাত্রছাত্রী। এরমধ্যে ১৩ জন ছাত্র, দু’জন ছাত্রী। বিশ্ববিদ্যালয়ের এ হেন উদাসীনতায় ক্ষুব্ধ ১৫ জন ছাত্র বুধবার রেজিস্ট্রারকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
এব্যাপারে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য গোপালচন্দ্র বিশ্বাস বলেন, “বালুরঘাট আইন কলেজে পঠনপাঠনের অনুমোদনের জন্য ২০০৯ সালে বার কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার কাছে এক লক্ষ ন’হাজার টাকা পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কোনও কারণে বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকঠাক যোগাযোগ হয়নি। আমরা অনুমোদন পাইনি। দ্রুত যাতে অনুমোদন পাওয়া যায় সে ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছি।”
বালুরঘাট আইন কলেজ আগে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় বার কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার অনুমোদন নিয়ে ওই আইন কলেজটি চালচ্ছিল। কিন্তু ২০০৯ সালে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় চালু হওয়ার পর কলেজটি উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় চলে আসে। কলেজে ছাত্রছাত্রী ভর্তি শুরু হয়। ২০০৮ সালে ভর্তি হওয়ার পর পাঁচ বছর শেষে ২০১৩ সালে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বালুরঘাট আইন কলেজ থেকে প্রথম ব্যাচে ১৫ স্নাতক হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ওই ১৫ জনকে মার্কশিট ও সার্টিফিকেটও দেওয়া হয়। এর পরে ওই ১৫ জন পশ্চিমবঙ্গ বার কাউন্সিলের কাছে নাম নথিভুক্ত করাতে গেলে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
তাঁদের কয়েকজন বলেন, “আমরা যেখানেই যাচ্ছি, সেখানেই বলা হচ্ছে আমাদের কলেজের অনুমোদন নেই। সমস্যা সমাধানের জন্য সাড়ে পাঁচ মাস ধরে ঘুরছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সমস্যা সমাধানই করছে না।” এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অসিত বসু বলেন, “আইন কলেজ চালাতে গেলে বার কাউন্সিলের অনুমোদন বাধ্যতামূলক। কিন্তু গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন ছাড়াই সাত বছর ধরে কলেজ চলছে। তাই ওই ১৫ জনের নাম আমরা নথিভুক্ত করিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে কথা হয়েছে। বিষয়টি দেখা হচ্ছে।”
অভিযোগ, কলেজে পরিচালন সমিতির সদস্যদের মধ্যে কাজিয়ার জেরে ভুগছেন ছাত্রছাত্রীরা। সরকারি নমিনির সদস্য তথা তৃণমূল নেতা সুভাষ চাকী কলেজের টিচার ইনচার্জের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন। সুভাষবাবু অভিযোগ করেন, “বালুরঘাট আইন কলেজের টিচার ইনচার্জ ছাত্রছাত্রীদের কাছে ফি বাবদ টাকা জমা দেননি। তাঁদের অবহেলার জন্য আজ এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।” অভিযোগ প্রসঙ্গে কলেজের টিচার ইনচার্জ সন্তোষ তেওয়ারি বলেন, “অভিযোগ মিথ্যা টাকা সময়ে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। আমাদের কোনও গাফিলতি নেই।”
বালুরঘাট আইন কলেজটি সোসাইটি আইনে নথীভুক্ত হয়ে ২০০১ সালে তৈরি হয়। প্রাক্তণ আরএসপি মন্ত্রী বিশ্বনাথ চৌধুরীকে সমিতির সভাপতি এবং আইনজীবী বিদ্যুত্ রায়কে সম্পাদক করে ১৭ জন সদস্যেকে নিয়ে কলেজ পরিচালনা হত। ২০১১ সালে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর গভর্মেন্ট নমিনি পাঠিয়ে কলেজ পরিচালনা শুরু করে। অভিযোগ, বর্তমান কলেজের গভর্মেন্ট নমিনি এবং টিচার ইনচার্জের মধ্যে সমন্বয় নেই বলে সমস্যার সূত্রপাত। সোসাইটির সম্পাদক তথা আইনজীবী বিদ্যুতবাবু বলেন, “২০০৯ সালে উত্তরবঙ্গ থেকে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যায়। তারপর থেকে সমস্যার শুরু।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy