টানা বৃষ্টিতে হলদিবাড়িতে টোম্যাটো উৎপাদন পিছিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষি আধিকারিকেরা।
গত সাত দিন ধরে হলদিবাড়ি ও সংলগ্ন এলাকায় টানা বৃষ্টির জেরে নষ্ট হতে শুরু করেছে টোম্যাটোর বীজতলা। বেশিরভাগ কৃষকই বীজতলা রক্ষা করতে টম্যাটোর চারা তৈরির কাজ পিছিয়ে দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। এর জেরে মরসুমের টোম্যাটোর ফলন পিছোনো ও ফসলের দাম না পাওয়ার আশঙ্কা।
কৃষি দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, সাধারণত নভেম্বরে প্রথম দফার টোম্যাটোর ফলন শুরু হয়। দ্বিতীয় ফলন শুরু হয় জানুয়ারির প্রথম থেকে। তাই প্রথম দফার ফলন যদি মাস খানেকের বেশি পিছিয়ে যায়, তবে প্রথম দফার জোগান শেষ হওয়ার আগেই পরের ফলন বাজারে চলে আসায় টোম্যাটোর দাম অনেকটাই কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। গত বছরেও বৃষ্টির কারণে ২১ দিন পিছিয়ে গিয়েছিল টোম্যাটোর ফলন। এ বার তা আরও পিছোনোর আশঙ্কা রয়েছে।
হলদিবাড়ি ব্লকের কৃষি আধিকারিক সঞ্জীব মৈত্রী বলেন, “চলতি বছর হলদিবাড়ি ব্লকে সামগ্রিকভাবে বৃষ্টি কমেছে। তবে গত সপ্তাহ থেকে টানা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এ সময়েই কৃষকেরা টোম্যাটোর বীজতলা তৈরির কাজ করে থাকেন। সেই কাজ ব্যাহত হচ্ছে।” বৃষ্টির বিষয়ে আগেই কৃষকদের সর্তক করা হয়েছিল বলে দাবি সঞ্জীববাবুর। হলদিবাড়ি পাইকারি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি তরুণ দত্ত বলেন, “এক সঙ্গে টোম্যাটোর ফলন শুরু হলে দাম কমবে। গত বছরও ২১ দিন মরসুম পিছিয়ে যাওয়ার ফলেও দাম কিছুটা কমেছিল।”
কৃষি দফতর সূত্রের খবর, মরসুমের প্রথম টম্যাটেরা ফলনকে স্থানীয় পরিভাষায় ‘আগুরি’ বলা হয়। অগস্টে এই টম্যাটোর বীজতলা তৈরি হয়। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে ক্ষেতে চারা লাগানো হয়। বাজারে ‘আগুরি’ টোম্যাটোর জোগান শুরু হয় নভেম্বর থেকে। অন্য দিকে, অক্টোবরের গোড়াতেই খেতে দ্বিতীয় দফার টোম্যাটো লাগানো হয়। ফলন শুরু হয় জানুয়ারি থেকে। যে জমিতে আগুরি লাগানো হয় না, সেই জমিতেই অক্টোবরে দ্বিতীয় দফায় বীজতলা লাগানো হয়। প্রথম দফার ফলন পিছিয়ে গেলেও, দ্বিতীয় দফার চাষে কোনও প্রভাব পড়ে না বলে কৃষি দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। আর সে কারণেই দামে মার খাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
কৃষি দফতরের আশঙ্কা, বৃষ্টিতে বীজতলা তৈরির কাজ মাস খানেক পিছিয়ে যাওয়ায় এ বছর আগুরি টোম্যাটোর জোগান বাজারে আসতে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি হয়ে যাবে। তার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দ্বিতীয় দফার ফলন চলে এলে চাহিদার তুলনায় জোগান বেড়ে যাওয়ায় বাজারের নিয়মেই ফসলের দাম তলানিতে ঠেকবে বলে আশঙ্কা। দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, হলদিবাড়ি ব্লকে মোট ১ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে টোম্যাটো চাষ হয়। তার মধ্যে ২০০ হেক্টর জমিতে ‘আগুরি’ টোম্যাটোর চাষ হয়েছে, এবং ৯০০ হেক্টর জমিতে দ্বিতীয় দফায় চাষের প্রস্তুতি চলছে। হলদিবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ সত্যেন্দ্রনাথ রায় বলেন, “চলতি মাসে প্রবল বৃষ্টির ফলে মরসুম পিছিয়ে যাওয়ায় কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রথম দফার টোম্যাটো সময় মতো লাগানো হলে বাজারে ভাল দাম পাওয়া যেত।”
কৃষি দফতর জানিয়েছে, চলতি মাসের শুরু থেকে গত সোমবার পর্যন্ত প্রায় ৪৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যা গত বছরের থেকে প্রায় ১০০ মিলিমিটার বেশি। কৃষি আধিকারিকদের অনুমান, বৃষ্টি এ ভাবে চলতে থাকলে দ্বিতীয় দফার ফলনও পিছিয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভিন্ রাজ্যে জোগানে ঘাটতির আশঙ্কা রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy