গাছেই নষ্ট। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।
এক দিকে প্রচণ্ড গরম। অন্য দিকে গরম বাতাস। এই দুইয়ের ধাক্কায় পরিণত হওয়ার আগেই আম পাকতে শুরু করেছে। গাছ থেকে প্রচুর আম ঝরে পড়তে শুরু করেছে। জেলার আমচাষিদের তাই মাথায় হাত পড়েছে। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে জেলার খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালন দফতরের আধিকারিকেরাও। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালন দফতরের উপ অধিকর্তা প্রিয়রঞ্জন সানিগ্রাহি বলেন, “৩৫ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় আর্দ্র জলবায়ু আম পাকার পক্ষে অনুকূল।” কিন্তু গত ৭-৮ দিন ধরে জেলা জুড়ে ৪০ ডিগ্রির উপরে তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। প্রচন্ড শুকনো গরম বাতাস বইছে। ফলে পরিণত হওয়ার আগেই আম পাকতে শুরু করেছে। তাঁর আশঙ্কা, “প্রতিকূল আবহাওয়ায় আমের স্বাদ, গন্ধ সহ গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাবে। কয়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টি না-হলে জেলার প্রচুর আম নষ্টও হয়ে যাবে।” বছরের শুরুতেই এ বার আমের ফলন ধাক্কা খায়। ফেব্রুয়ারির শুরুতেই প্রতি বছর জেলার আমবাগানগুলি মুকুলে ভরে থাকত। এ বার ফেব্রুয়ারিতে প্রচন্ড ঠান্ডা ও কুয়াশায় আমের মুকুলের কুঁড়ি নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় এক মাস পরে ফোটে। কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহের জেরে সেই মুকুল থেকে ফুল ফুটতেও দেরি হয়। ফলে ২০ শতাংশ আমের মুকুল মুকুল অবস্থাতেই নষ্ট হয়ে যায়। সেই ধাক্কা সামাল দিতে না দিতেই গাছে শোষকপোকার আক্রমণ শুরু হয়। কীটনাশক স্প্রে করে আমচাষিরা কোনও মতে আম বাঁচান। ২০ দিন আগে শিলাবৃষ্টিতে আমের ক্ষতি হয়। এখন প্রচন্ড গরমের সঙ্গে গরম বাতাস বইতে থাকায় চাষিরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
মালদহ ম্যাঙ্গো মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুবোধ মিশ্র বলেন, “২০০৫ সালে ঠিক এই রকম আবহাওয়া দেখা দিয়েছিল।” তাঁর বক্তব্য, এ বছর যা গরম পড়েছে তাতে আমের ফলন মার খাবে। গুণগত মানই নয়, আমের আকারও ছোট হবে। আমের মিষ্টতা কমে যাবে। প্রিয়রঞ্জনবাবু বলেন, “আম পরিণত না হলে আমের ভিতরের গ্লুকোজ ঠিক মতো ফ্রুকটোজে রূপান্তরিত হবে না। ফলে আমের স্বাদ নষ্ট হয়ে যাবে।” আম ব্যবসায়ীরা জানান, এ বার গোপালভোগ, গুটি আমের সঙ্গে হিমসাগর, ল্যাংড়া, লক্ষ্মণভোগ আম এক সঙ্গে বাজারে নামবে। পুকুরিয়ার আম ব্যবসায়ী লোকমান কুমার বলেন, “আম পাকছে মনে হলেও তা আসলে শুকিয়ে যাচ্ছে। দাবদাহ চলতে থাকলে আমের খরচই উঠবে না।” রতুয়ার আম ব্যবসায়ী সুদর্শন কুমারের ৬০ বিঘার আম বাগান রয়েচে। বৃষ্টি কবে হবে সে দিকে তাকিয়ে রয়েছেন তিনি।
মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে মালদহে প্রথম বাজারে আসে গোপালভোগ, বৈশাখী, আরাজন্মা, দুধকুমার, দিলখুস, মোহনভোগ, ফনিয়াসহ প্রায় ২০ ধরনের গুটি আম। এর পর জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে হিমসাগর, ল্যাংড়া, লক্ষ্মণভোগ আম বাজারে ওঠে। জুন মাসের শেষ সপ্তাহে ফজলি, আম্রপালী, মল্লিকা আম বাজারে ওঠে। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে পাওয়া যায় আশ্বিন আম। আম ব্যবসায়ীরা জানান, এ বার কিন্তু গুটি আমের সঙ্গেই বাজারে চলে আসবে হিমসাগর, ল্যাংড়া, লক্ষণভোগও। ফলে নানা ধরনের আমের ফলনের মধ্যে যে ব্যবধান সাধারণত থাকে, এ বার তা থাকবে না। কেন এমন হবে? আম ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, গরমের প্রকোপে যে আম পরে পাকার কথা, সেই আম এ বার আগেই পেকে যাচ্ছে বলেই এই অবস্থা তৈরি হতে চলেছে।
মুর্শিদাবাদের ফরাক্কার এক বাগান মালিক স্বপন দাসও বলেন, “এমনিতেই এ বারে গাছে আম এসেছে কম। তার উপর বৃষ্টি নেই। প্রচণ্ড গরমে ক্ষতি হচ্ছে আমের।” তিনি জানান, গত একমাস ধরে আমে জল ছিটিয়েও কাজ হচ্ছে না। আম আকারে বাড়ছে না। একই অবস্থা লিচুরও। লিচুতে রঙ এসেছে, কিন্তু তাতে শাঁস নেই। ফলে লিচুও আকারে বাড়ছে না। মুর্শিদাবাদের সহ উদ্যানবিদ শুভদীপ নাথ বলেন, “গত বছর আমের ফলন বেশি হওয়ায় এবারে স্বাভাবিক নিয়মেই জেলায় আমের ফলন প্রায় ৩৫ শতাংশ কম হয়েছে। তার উপর জল সেচ দিতে না পারলে গাছে যত টুকু আম রয়েছে সেটুকুকেও রক্ষা করা যাবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy