Advertisement
E-Paper

সিবিআই নজরে রাজ্যের ৩ মন্ত্রীও

দুই সাংসদ গ্রেফতার হওয়ার পরে রোজ ভ্যালি কাণ্ডে রাজ্যের তিন মন্ত্রীর নাম জোরালো ভাবে উঠে এসেছে বলে দাবি সিবিআই গোয়েন্দাদের।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৭

দুই সাংসদ গ্রেফতার হওয়ার পরে রোজ ভ্যালি কাণ্ডে রাজ্যের তিন মন্ত্রীর নাম জোরালো ভাবে উঠে এসেছে বলে দাবি সিবিআই গোয়েন্দাদের। তদন্তের সঙ্গে যুক্ত সিবিআই আধিকারিকদের বক্তব্য, রোজ ভ্যালির ব্যবসা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ওই তিন মন্ত্রীর বিশেষ ভূমিকা ছিল বলেই তাঁদের সন্দেহ। এবং সেই দিকগুলি এখন আতসকাচের তলায় রেখে যাচাই করা হচ্ছে।

সিবিআই সূত্র জানাচ্ছে, ওই তিন মন্ত্রীর এক জন উত্তরবঙ্গের বাসিন্দা। দ্বিতীয় জনের বাড়ি দক্ষিণ কলকাতায়। তাঁর হাতে রয়েছে দু-দু’টো গুরুত্বপূর্ণ দফতর। দল ও রাজ্য প্রশাসনে তাঁর দাপট অনস্বীকার্য। আর তৃতীয় জন থাকেন উত্তর কলকাতায়। তদন্তকারীদের একাংশের কথায়, রোজ ভ্যালি কাণ্ডে যে ১২৭ জন সাক্ষীর বয়ান নেওয়া হয়েছে, তাঁদের অনেকেই সংস্থার আধিকারিক ও কর্মচারী। তাঁদের বয়ান থেকেই ওই তিন মন্ত্রী-সহ রাজ্য প্রশাসন ও শাসক দলের একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে রোজ ভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডুর ঘনিষ্ঠ যোগের খবর মিলেছে। সেই সব বয়ানের সত্যাসত্য নিজস্ব সূত্র মারফৎ খতিয়ে দেখেছেন সিবিআই গোয়েন্দারা।

সিবিআই জেনেছে, দক্ষিণ কলকাতার ওই প্রভাবশালী মন্ত্রী মাঝেমধ্যেই যাদবপুরে গৌতমের ফ্ল্যাটে যেতেন। রোজ ভ্যালির এক হিসাবরক্ষকের বয়ান অনুযায়ী, ওই মন্ত্রীকে নগদে কয়েক কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। কেন? তদন্তকারী সংস্থার একটি সূত্রের দাবি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী কলকাতা ও বিভিন্ন জেলায় সরকারি জমি রোজ ভ্যালিকে লিজে পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বলে ওই হিসাবরক্ষক জানিয়েছেন। ওই সূত্রের কথায়, হিসাবরক্ষক ঠিক বলছেন কি না, তা যাচাইয়ের জন্য গৌতমবাবু যে আবাসনে থাকতেন তার এক নিরাপত্তারক্ষীকে একাধিক বার জেরা করা হয়েছে। নিরাপত্তরক্ষীও জানিয়েছেন, মন্ত্রী মাঝেমধ্যেই আসতেন। সিবিআইয়ের দাবি, মন্ত্রীর বাড়িতে যে টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল সেই সংক্রান্ত সাক্ষ্য তাদের হাতে রয়েছে।

উত্তরবঙ্গের মন্ত্রীর সঙ্গে কী ভাবে ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল গৌতম কুণ্ডুর? সিবিআই সূত্র জানাচ্ছে, শিলিগুড়িতে ফিল্ম সিটি তৈরির জন্য প্রায় ১৫০ একর জমি নিয়েছিল রোজ ভ্যালি। কিন্তু তার দখল নেওয়া নিয়ে সমস্যা হওয়ায় ওই মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন গৌতম। সেতুবন্ধনে সাহায্য করেছিলেন দক্ষিণ কলকাতার ওই মন্ত্রী। সিবিআই সূত্রের অভিযোগ, শুধু জমির সমস্যা মেটানো বাবদই নয়, প্রশাসনের একাধিক শীর্ষ কর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার জন্যও গৌতমের কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়েছিলেন ওই মন্ত্রী। সেই সূত্রেই উত্তরবঙ্গে প্রশাসনিক বৈঠকের পরে প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের একাংশের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছিলেন গৌতম। তাঁকে উত্তরবঙ্গে পর্যটন ব্যবসা বাড়াতে সব রকম সাহায্যের আশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল।

গৌতম-ঘনিষ্ঠ উত্তর কলকাতার যে মন্ত্রী সিবিআই নজরে, তাঁর এক আত্মীয়কে রোজ ভ্যালি তাদের বিভিন্ন অফিসের অন্দরসজ্জার বরাত দিয়েছিল বলে গোয়েন্দাদের দাবি। তাঁরা বলছেন, এর বিনিময়ে রোজ ভ্যালির বিরুদ্ধে মন্ত্রীর দফতরে জমা পড়া একাধিক প্রতারণার অভিযোগ চেপে রাখা হয়েছিল। মন্ত্রীর ওই আত্মীয়কে অন্দরসজ্জা বাবদ কত টাকা দেওয়া হয়েছিল এবং তা বাজারদরের চেয়ে বেশি কি না, তা জানতে রোজ ভ্যালির এক হিসাবরক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কী ভাবে রোজ ভ্যালির টাকা তাঁর অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছিল, সে বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করেছে সিবিআই। তদন্তকারী সংস্থার এক কর্তা এ দিন দাবি করেন, তিন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগ আদালতগ্রাহ্য করার জন্য প্রমাণ সংগ্রহের কাজ বেশ কিছু দিন ধরেই চলছে। তা এখন প্রায় শেষের মুখে।

CBI Ministers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy