বাড়ির নাম ‘বিজয়কেতন’। গৃহস্বামীর নাম পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তৃণমূলের সেক্রেটারি জেনারেল। মহাসচিব। ঘটনাচক্রে, সারা পৃথিবীতে বহুল পরিচিত মাত্র তিনটি সংগঠনেই ‘মহাসচিব’ পদটি রয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জ, ফিকি এবং তৃণমূল। ইদানীং পার্থর নাকতলার বাড়িটি অবশ্য ‘মহাতীর্থে’ পরিণত হয়েছে। সেখানে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন বিজেপি থেকে তৃণমূলে প্রত্যাবর্তনকামী নেতা-কর্মীরা। ডাকবিভাগের খাতায় বাড়ির ঠিকানা ৯/৪, খানপুর রোড।
‘মা-মাটিঃমানুষ’-এর সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পার্থ রাজ্যের মন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরেও তিনি তাঁর মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। শিল্প এবং পরিষদীয় দফতর তাঁর হাতে। ওজনদার নেতা। দৈহিক এবং রাজনৈতিক। সর্ব অর্থেই। ওজন নিয়ে একসময় খুনসুটি করতেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিন্তু আস্থাও রাখতেন পুরোমাত্রায়। বিরোধী দলনেতা থাকাকালীন সরকার পক্ষের সঙ্গে তিনিই ‘ট্র্যাক টু কূটনীতি’ বজায় রাখতেন। মিষ্টভাষী। তাঁকে কটূবাক্য বলতে খুব একটা শোনা যায় না। তা-ই সকলের সঙ্গেই তাঁর সুসম্পর্ক। আশ্চর্য নয় যে, ভোটের আগে তৃণমূলে কারও ‘দমবন্ধ’ হয়ে এলে তিনি যেমন বিজেপি-তে যাওয়ার আগে পার্থর বাড়িতে যেতেন, ভোট হেরে দম ফেলতে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরতে চেয়েও তিনি সেই পার্থর বাড়িতেই আসছেন।
ঘটনাচক্রে, গত রবিবার মাতৃবিয়োগ হয়েছে পার্থর। কয়েক বছর আগে স্ত্রী বাবলি চট্টোপাধ্যায় পার্থকে ছেড়ে পরলোকে চলে গিয়েছেন। স্ত্রী-র অবর্তমানে মা শিবানীদেবী ছিলেন পার্থর অভিভাবক। স্বভাবতই মা-কে হারিয়ে মুষড়ে পড়েছিলেন পার্থ। লৌকিকতা এবং সামাজিকতা দেখিয়ে শোক প্রকাশ করতে তাঁর রাজনৈতিক সতীর্থেরা পার্থর বাড়িতে গিয়েছেন। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তাঁর বাড়িতে গিয়েছেন প্রাক্তন তৃণমূল এবং অধুনা বিজেপি নেতারা। যাঁরা ভোটের বেশি আগে এবং অল্প আগে মমতাকে ছেড়ে নাম লিখিয়েছিলেন গেরুয়া শিবিরে। সেই তালিকায় এক নম্বরে নাম রয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি যখন তৃণমূল ছাড়ব-ছাড়ব করছেন, তখনও পার্থর সঙ্গে তাঁর একাধিক বার ফোনে কথা এবং মুখোমুখি বৈঠক হয়েছিল। তখন দলীনেত্রীর নির্দেশে পার্থই আগ্রহী ছিলেন রাজীবকে ধরে রাখতে। কিন্তু দু’দফা বৈঠকের পর কালীঘাটে যে রিপোর্ট তিনি দিয়েছিলেন, তাতে খুব আশাবাদী কিছু বলতে পারেননি। রাজীবও জোড়াফুলের বিধায়কপদে ইস্তফা দিয়ে মমতার ছবি বগলদাবা করে বিধানসভা থেকে বেরিয়ে পদ্মফুলে নাম লিখিয়েছিলেন।