Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

বিজ্ঞান চর্চায় ভাটা, মন্ত্রীর নিশানায় বাম

গবেষণায় পশ্চিমবঙ্গ ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে বলে শিক্ষা শিবিরের অনেকে প্রায়ই আক্ষেপ করেন। এ বার রাজ্যে বিশেষ ভাবে বিজ্ঞান চর্চার হালহকিকত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিজেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:১৮
Share: Save:

গবেষণায় পশ্চিমবঙ্গ ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে বলে শিক্ষা শিবিরের অনেকে প্রায়ই আক্ষেপ করেন। এ বার রাজ্যে বিশেষ ভাবে বিজ্ঞান চর্চার হালহকিকত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিজেই।

বুধবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ছাত্র-যুব বিজ্ঞান মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেই উদ্বেগের কথা জানিয়ে বিজ্ঞান চর্চায় পিছিয়ে পড়ার কিছু কারণ খোঁজারও চেষ্টা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। তাঁর ব্যাখ্যা, প্রথমত, বিজ্ঞানের শিক্ষক কমছে রাজ্যে। দ্বিতীয়ত, পাল্লা দিয়ে কমছে বিজ্ঞান পড়ার উৎসাহও। সর্বোপরি বিজ্ঞানের শিক্ষক ও বিজ্ঞানীদের অনেকেই রাজ্য ছেড়ে ভিন্‌ রাজ্য বা বিদেশে চলে যাচ্ছেন। পূর্বতন বাম সরকারের জন্যই যে এই হাল, তার ইঙ্গিত দিতেও ভোলেননি শিক্ষামন্ত্রী।

পার্থবাবু বলেন, ‘‘স্কুল থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সব স্তরে বিজ্ঞান পড়ার আগ্রহ কমে যাচ্ছে। অর্থনীতির পঠনপাঠন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক কলেজে। বিজ্ঞান নিয়ে কেউ পড়তে চাইছে না। শিক্ষকও কম। এটায় আমরা সকলেই উদ্বিগ্ন। এ ভাবে চলতে দেওয়া যায় না।’’

মঞ্চে পার্থবাবুর পাশে তখন বসে ছিলেন বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোফিজিক্স-এর অধ্যাপক দীপঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্ত্রী বলেন, ‘‘দীপঙ্করবাবু বাংলার মুখ উজ্জ্বল করেছেন। কিন্তু তিনিও বাংলায় থাকেননি। আসলে এঁদের বাংলায় রাখার জন্য আগে কোনও পরিকল্পনাই ছিল না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা শুরু করেছেন।’’

দীপঙ্করবাবু রাজ্য ছাড়লেন কেন?

‘‘২০০৪ সালে গবেষণা শেষ করে রাজ্যে ফিরে আসি। অ্যাস্ট্রোফিজিক্স (জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যা)-এর কোনও প্রতিষ্ঠানই তখন এখানে ছিল না। আমি এ রাজ্যেই পড়াশোনা করেছি। নিজের রাজ্য ছেড়ে কে আর যেতে চায়,’’ বলছেন দীপঙ্করবাবু।

‘‘এ বার অবস্থা বদলাচ্ছে,’’ বলে মঞ্চ থেকে শিক্ষামন্ত্রী আশ্বাস দিলেও পরিস্থিতির যে বিশেষ পরিবর্তন হয়নি, হালফিলের পরিসংখ্যানেই সেটা পরিষ্কার। এই আমলেই রাজ্য ছেড়ে চলে গিয়েছেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু চেয়ার প্রফেসার সব্যসাচী ভট্টাচার্য এবং বিজ্ঞান বিভাগের ডিন সোমক রায়চৌধুরী। সোমকবাবু বর্তমানে ইন্টার ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স-এর অধিকর্তা। তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি না, বিজ্ঞানে পড়ুয়াদের আগ্রহ কমেছে। বিজ্ঞান একটি গ্লোবাল (বিশ্বজনীন) বিষয়। তাই যেখান থেকে খুশি তা পড়া যায়। ভিন্‌ রাজ্যে অনেক বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সুযোগও বেশি।’’ প্রেসিডেন্সি ছাড়ার সময় সব্যসাচীবাবু তখন জানিয়েছিলেন সেখানে পড়াশোনার পরিবেশ নেই। পড়াশুনার বিষয়ে বদলে অন্য বিষয়ে বেশি আলোচনা হয়। এ দিন অবশ্য মুখ খুলতে চাননি তিনি।

সাহা ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের অধ্যাপক সুবীর সরকার অবশ্য শিক্ষামন্ত্রীর উদ্বেগের সঙ্গে একমত হতে পারেননি। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমি মনে করি না, বিজ্ঞানের প্রতি পড়ুয়াদের আগ্রহ কমেছে। তবে এর পিছনে অভিভাবকদের একটা ভূমিকা থাকে। সেটা খতিয়ে দেখা উচিত।’’ একই মত বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, ‘‘যেখানে ভাল শিক্ষক আছেন, সেখানে ছাত্রছাত্রী উপচে পড়ে। ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহ কিছুমাত্র কমেনি। অভাব ভাল শিক্ষকের।’’

এ দিন ওই মেলায় জেলার স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারা বিজ্ঞানভিত্তিক বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে এনেছেন। তাঁদের সেই তৈরি করা জিনিসের বিচার করে তিন দিনের এই মেলার শেষে তাঁদের পুরস্কৃত করা হবে। মন্ত্রী বলেন, ‘‘শুধু পুরস্কৃত করলেই হবে না। পড়ুয়াদের তৈরি করা জিনিসগুলি স্কুল-কলেজে কী ভাবে প্রয়োগ করা যায়, সেটা দেখতে হবে। তাতে বিজ্ঞানের প্রতি যেমন আগ্রহ বাড়বে, তেমনই রাজ্যের পড়ুয়াদের তৈরি করা জিনিসে উপকৃত হবে সকলেই।’’ এর পরেই ‘তারে জমিন পর’
ছবির নিকুম্ভ স্যারের মতো তিনিও অভিভাবকদের উদ্দেশে তাঁর আবেদন, ‘‘সন্তানদের যে-বিষয়ে মেধা ও আগ্রহ আছে, তাদের সেই বিষয় নিয়ে পড়তে দিন। জোর করে কিছু চাপিয়ে দেবেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Partha Chatterjee Science study
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE