Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

গাফিলতিতে জরিমানা দুই ডাক্তারের

গাইঘাটার চাঁদপাড়া বাজারের বাসিন্দা ঝর্ণা বিশ্বাস (২৯) জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। ইঞ্জেকশন দিতে ডাক্তার তাঁর বাঁ হাতে চ্যানেল করেছিলেন। তার পরেই হাত ফুলে ঢোল। সেই ফোলা আর কমেনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৭ ০৩:১৬
Share: Save:

গাইঘাটার চাঁদপাড়া বাজারের বাসিন্দা ঝর্ণা বিশ্বাস (২৯) জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। ইঞ্জেকশন দিতে ডাক্তার তাঁর বাঁ হাতে চ্যানেল করেছিলেন। তার পরেই হাত ফুলে ঢোল। সেই ফোলা আর কমেনি। শেষমেশ কনুইয়ের তলা থেকে বাঁ হাতটাই কেটে বাদ দিতে হয় ঝর্ণার! এই নিয়ে মামলার প্রায় তিন বছর পরে বিচার পেলেন ঝর্ণা। রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা আদালত তাঁর চিকিৎসার গাফিলতিতে অভিযুক্ত দুই ডাক্তারকে ৯ লক্ষ এবং কর্তব্যরত নার্সকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।

আদালতের রায়ে খুশি ঝর্ণার স্বামী বিশ্বজিৎ বিশ্বাস। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘এমন গাফিলতির ক্ষমা নেই। আদালতের প্রতি আমাদের আস্থা ছিল। জানতাম, ঠিক এই ডাক্তাররা শাস্তি পাবেন।’’

কী হয়েছিল ঝর্ণার? বিশ্বজিৎবাবু এবং তাঁর বন্ধু রতন রায় জানান, ২০১৪ সালের অগস্টে জ্বর হয়েছিল ঝর্ণার। টানা ছ’দিন জ্বর না কমায় সাত দিনের মাথায় স্থানীয় চাঁদপাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। বিশ্বজিৎবাবুর অভিযোগ, ‘‘সে সময়ে ওখানে ডাক্তার হিসেবে ছিলেন দেবাশিস বিশ্বাস। তিনি ঝর্ণার বাঁ হাতে চ্যানেল করেন। কিন্তু রাত থেকেই হাতটা ফুলে যায়। আমরা বারবার বললেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পর দিনও একই অবস্থায় সারা দিন কাটানোর পর রাতে হাত বদলে ডান হাতে চ্যানেল করা হয়।’’

পরের দিন ঝর্ণাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাড়ি ফেরার পরেও বাঁ হাতের ব্যথা না কমায় আবার স্বাস্থ্যকেন্দ্র যান ঝর্ণা। অভিযোগ, সেখানে চিকিৎসক মনোরঞ্জন বিশ্বাস দেখে জানান, তেমন কিছুই হয়নি। একটু ‘জেল’ লাগালেই সেরে যাবে। ‘জেল’ লাগানোর পরেও ব্যথা না কমায় ঝর্ণাকে নিয়ে যাওয়া হয় বনগাঁ সাব ডিভিশনাল হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসকেরা তাঁকে পাঠান আরজিকরে। সেখান থেকে এসএসকেএম-এ। এ বার ঝর্ণার পরিবার জানতে পারেন, ঝর্ণার বাঁ হাতে গ্যাংরিন হয়ে গিয়েছে। তাই কনুইয়ের তলা থেকে হাতটাই বাদ দেন সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ডাক্তাররা।

এর বিচার চেয়ে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন বিশ্বজিৎবাবু। প্রথমে জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত ৫ লক্ষ টাকা জরিমানার নির্দেশ দেয়। পরে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত গত ১৪ মার্চ দুই ডাক্তারকে ৯ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। মামলার খবর বাবদ ২৪ হাজার টাকা দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বিশ্বজিৎবাবুর আইনজীবী শমীক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আদালত এটাকে একটা চরম গাফিলতির ঘটনা বলেই সাব্যস্ত করেছে।’’

কী বলছেন দুই অভিযুক্ত চিকিৎসক? দেবাশিস বিশ্বাস ও মনোরঞ্জন বিশ্বাসের বক্তব্য, ‘‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সব জানিয়েছি। তাঁরাই যা বলার বলবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Negligence Penalty Doctor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE